বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া।বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে বিকল্প সাজার ব্যবস্থা করবে বলে শুক্রবার(১০ জুন) দেশটির সরকার এই ঘোষণা দিয়েছে। মানবাধিকার গ্রুপগুলো এই উদ্যোগকে এ অঞ্চলের ক্ষেত্রে এটি বিরল প্রগতিশীল পদক্ষেপ হিসাবে অভিহিত করেছে।
এখনও দেশটিতে হত্যা ও সন্ত্রাসবাদের মতো কিছু অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের প্রচলন রয়েছে। তবে সেটি বাতিল হচ্ছে এবং এর বিকল্প সাজা কী হবে তা নির্ধারনের দায়িত্ব বিচারকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।
এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার আইনমন্ত্রী ওয়ান জুনাইদি তুয়াংকু জাফর বলেছেন, আদালতের বিবেচনারভিত্তিতে মারাত্মক অপরাধের জন্য বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে বিকল্প শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার সবার মানবাধিকার নিশ্চিতে জোর দিচ্ছে। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার উন্নতিতে দেশের নেতৃত্বের স্বচ্ছতারও প্রতিফলন ঘটছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ সম্পর্কিত আইনের সংশোধন করা হবে। যেসব অপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো সেসব বিষয়ে বিকল্প শাস্তি নিশ্চিতে অধিকতর গবেষণা করা হবে।
এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার আইনমন্ত্রী ওয়ান জুনাইদি তুয়ানকু জাফর বলেন, বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ডের বিকল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছে সরকার। এখন প্রস্তাবিত বিকল্প সাজাগুলো বিবেচনা করা হবে। আরও ২২টি অপরাধের ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড বাতিলে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করা হবে। মাদক সংক্রান্তসহ মারাত্মক যেসব অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে সেগুলোর জন্য বিকল্প সাজা কী হতে পারে তা নির্ধারণে নির্দেশনা দেবে আদালত।
মালয়েশিয়ার মতো দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে কঠোর মাদক আইন বিদ্যমান রয়েছে। এতে মাদকপাচারকারীদের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে পাকাতান হারাপান সরকারের সময় প্রথম মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলোপের পদক্ষেপ নেয় মালয়েশিয়া। বর্তমানে দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে।
তবে তারপরেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আইনগুলো থেকে গেছে। এছাড়া আদালতে দোষী সাব্যস্ত মাদক পাচারকারীদের বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধানও থেকে গেছে। সন্ত্রাসী কার্যক্রম, খুন, ধর্ষণের সাজা হিসেবে এখনও দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড বাধ্যতামূলক। জাতিসংঘ বলছে, শুধুমাত্র ভয়াবহতম অপরাধের শাস্তি হিসেবেই মৃত্যুদণ্ড থাকতে পারে।
এ সম্পর্কিত আইনের সংশোধন করা হবে। যেসব অপরাধের কারণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতো সেসব বিষয়ে বিকল্প শাস্তি নিশ্চিতে অধিকতর গবেষণা করা হবে।
মালয়েশিয়ার সর্বশেষ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এন্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক। সংস্থাটি একই সঙ্গে মালয়েশিয়ার বিচার পদ্ধতিতে সংস্কার আনার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদণ্ড উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিশ্বে ২০২১ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা ২০ শতাংশ বেড়েছে, একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশ।
এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ২০২১ সালে বিশ্বের ১৮টি দেশে অন্তত ৫৭৯টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এই সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।
সংস্থাটির বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, ২০২১ সালে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে অন্তত ৫৭৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে এবং অন্তত ২ হাজার ৫২ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সত্ত্বেও, অ্যামনেস্টি বলছে যে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রবণতা রহিত করার পক্ষেই রয়েছে। গত বছর মাত্র ১৮টি দেশ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে বলে জানা গেছে। যা রেকর্ড রাখা শুরু করার পর থেকে এটি সর্বনিম্ন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮৮ সালের পর থেকে মৃত্যুদণ্ড সর্বনিম্নে নেমে আসে। দেশটির ফেডারেল প্রশাসন মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ওপর একটি অস্থায়ী স্থগিতাদেশ জারি করে সে সময়। ভার্জিনিয়া দেশটির ২৩তম রাজ্যে যেখানে মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে।
বেশ কয়েকটি দেশ মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার রহিত করতে বা এর ব্যবহার সীমিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত জুলাই মাসে, সিয়েরা লিওনের পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে একটি বিল পাসের জন্য ভোট দেয় মৃত্যুদণ্ড সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার জন্য। একই ধরনের আইন কাজাখস্তানে গত ডিসেম্বরে পাস হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘লোকেরা মনে করে মৃত্যুদণ্ডে অবৈধ কাজ কমায়। মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও অপরাধ হয়, না থাকলেও হয়। এটি কমানোর জন্য সামাজিক সচেতনতা দরকার। কোনো অপরাধ হলে ‘ন্যায়বিচার’ চাই বলে দাবি ওঠে। ফাঁসি চাই বলা হয়। মৃত্যুদণ্ড হলেই ন্যায়বিচার হয়েছে বলা যায়? এটি ভয়াবহ অবস্থা, এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩২
আপনার মতামত জানানঃ