মিয়ানমারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা- ডব্লিউএইচও’র এক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম মায়ো মিন হটুট। এক প্রতিবেদনে এখবর জানিয়েছে ফরাসি নিউজ এজেন্সি এএফপি।
বুধবার(০৮ জুন) মন রাজ্যের মাওলামায়িন থেকে কাজ শেষে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। এ সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। এতে তিনি নিহত হন বলে ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি সংস্থাটির গাড়ির চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে, এখনও স্পষ্ট নয়।
সংস্থাটি ফেসবুকে জানিয়েছে, তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত। নিহতের পরিবার ও তার সহকর্মীদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। গত বছর ডিসেম্বরে ক্রিসমাস ইভের এক অনুষ্ঠানে হামলায় আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সেফ দ্য চিলড্রেনের দুই কর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় ৩০ জনের বেশি মানুষ মারা যান। মিয়ানমারের জান্তা সেনাবাহিনীকে এ হামলার জন্য দায়ী করা হয়।
এদিকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে নিয়ে যে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করছেন তাদের গ্রেপ্তার বা আহত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকায় অনেক সাংবাদিক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বা প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছেন।
সেখান থেকেই এইচসা মু-এর মতো সাংবাদিকরা তাদের পাঠক-শ্রোতাদের জন্যসংবাদ দেয়ার চেষ্টা করেন।
এইচসা মু থাই সীমান্ত থেকে কাজ করেন। তিনি মিয়ানমারের কাইন রাজ্যে তার নিজস্ব সূত্রে বা লোকজনের কাছ থেকে সরাসরিসংগৃহীত প্রমাণাদী নথিবদ্ধ করেন। তিনি যে বিষয় নিয়ে কাজ করেন তার মধ্যে রয়েছে সামরিক সংঘর্ষ এবং সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে কিভাবে সম্প্রদায় এবং অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত লোকজনকে প্রভাবিত করছে।
এটা একটু কঠিন, যখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালানো হয় তখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর একটিতেও যাতায়াত করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন সেনাবাহিনীর ৫ম ব্রিগেড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলটি জান্তা বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়েছে ।
এইচএসা মু একটি গ্রামের বোমা বর্ষণের ছবি সম্পাদনা করতে করতে বলেন, ‘যখন আপনি সেখানে যান তখন আপনি বার্মিজ সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ এবং সবকিছুর মুখোমুখি হন’।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে নিয়ে যে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করছেন তাদের গ্রেপ্তার বা আহত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকায় অনেক সাংবাদিক সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বা প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘যখন আপনি [বাস্তুচ্যুত মানুষদের] দেখেন এবং যখন তারা আপনাকে দেখে তখন তারাও খুব খুশি হয়, কারণ তারা জানে যে কেউ বা কিছু লোক অন্তত আছে যারা তাদের জন্য ভাবে।
এইচএসা মু মিয়ানমারের একটি জাতিগত গোষ্ঠীর নাগরিক সমাজ নেটওয়ার্ক কারেন পিস সাপোর্ট নেটওয়ার্কে জন্য কাজ করেন। মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের ৩০টি সংগঠন নিয়ে গঠিত এই নেটওয়ার্কটি ঐ অঞ্চলের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে সহায়তা ও তথ্য সরবরাহ করে থাকে।
এইচসা মু-এর মতো মিয়ানমারের অনেক সাংবাদিকও প্রতিবেশী দেশগুলোতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ কেউ গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, জান্তা সরকার সমালোচকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার জন্য আইন ব্যবহার করছে।
জান্তা সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইনও প্রস্তাব করছে যার মাধ্যমে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন ব্যবহার বন্ধ করতেওপারে।
মিয়ানমারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয়ায় যারা তথ্যের নাগাল পেতে চায় ভিপিএনগুলো তাদেরকে বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছে।
অনেকেই খবর পাওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার উপর ভরসা করে এসেছেন। ২০-এর দশকের গোড়ার দিকে যখন মিয়ানমারে সামাজিক মাধ্যম উন্মুক্ত করা হয় তখন বেশ কয়েকটি স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম তাদের অঞ্চলের সংবাদ পোস্ট করার জন্য প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ফেসবুকের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চি’র সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই দেশটিতে সু চি’র সমর্থিত বহু মানুষ প্রবল আন্দোলন গড়ে তুলেছে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে। জান্তা সরকারের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন এ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ। কায়াসহ একাধিক রাজ্যের সাধারণ মানুষের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে সামরিক বাহিনী। পর্যবেক্ষণ গোষ্ঠীগুলো বলছে, চলমান সহিংসতায় কমপক্ষে ২ হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত ও ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা জারি রয়েছে।এই ঘটনার পর দেশটিতে তীব্র গণ-আন্দোলন শুরু হয় এবং সামরিক ক্ষমতার জোরেই বার্মিজ সেনাবাহিনী তা দমনের চেষ্টা করে। এতে নিহত হচ্ছে শিশু নারীসহ অনেক বেসামরিক মানুষ।
চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গত চার মাসে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ সাগাইংয়ে শতাধিক গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা। দেশটিতে চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনের অংশ হিসেবে এসব গ্রামে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ। এতে সাড়ে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪১৯
আপনার মতামত জানানঃ