পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার কাছেই একটি প্লাস্টিক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একটি ভবনে থাকা অর্ধশত কারখানা পুড়েছে আগুনে। ওই ভবনটি এর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও সেখান থেকে অধিবাসীদের সরানো যায়নি। বন্ধ করা যায়নি বিপজ্জনক কারখানাও। এলাকাবাসী বলছেন, এবারের আগুনটি আসলে আসন্ন মহা বিপদের পূর্বাভাস। এখনই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি না নেয়া হলে নিমতলি ও চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় ঘটতে পারে এর চেয়েও ভয়াবহ কোনো অগ্নিকাণ্ড।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৪টার দিকে চকবাজারের উর্দু রোডে ‘নোয়াখালী বিল্ডিং’ নামের ৪ তলাবিশিষ্ট ভবনটিতে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্লাস্টিকের দাহ্য পদার্থের কারণে তীব্রতা বেড়ে পুরো ভবনটিই পুড়ে যায়। তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। আগুনে ভবনটি জুড়ে থাকা অর্ধশত প্লাস্টিক কারখানা পুড়ে গেছে। বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল ভবনটি। এরপরও সেখানে গড়ে তোলা হয় অবৈধ প্লাস্টিকের কারখানা।
ভবনটিতে থাকা একটি প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক খোকন জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কাজ শেষে তিনি ওই ভবনের চারতলায় ঘুমিয়েছিলেন। গভীর রাতে বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ও লোকজনের চিৎকারে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখেন ভবনের সামনের দিকে আগুনের ভয়াবহ লেলিহান শিখা ও ধোঁয়া। ওই সময় তিনিসহ আরও কয়েকজন দৌড়ে ছাদে উঠে পাশের ভবনের ছাদে লাফিয়ে পালিয়ে যান।
মানুষজন দূর থেকে চেয়ে দেখেন ভবনের নিচতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত প্লাস্টিকের কাঁচামাল ও প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন মালামাল পুড়ে কাঁচামালের পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় যে জায়গায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল, তার কাছাকাছি এ ঘটনা। রাস্তার পাশেই অবস্থিত ভবনটি জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছিল অবৈধ প্লাস্টিক কারখানা। আগুনে ভবনের দরজা, জানালাসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ছাদের কার্নিশ ভেঙে পড়েছে। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে প্লাস্টিকের সামগ্রী তৈরির ভারি মেশিন পড়ে আছে। আগুনের লেলিহান শিখায় আশপাশের ভবনগুলো কালো হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, এ ভবনটি বহু বছরের পুরনো। ভবনটিতে অনেকগুলো কারখানার মালিক ভবন মালিককে ভাড়া না দিয়ে দখল করে আছেন। ইতোপূর্বে প্রভাবশালীদের কেউ কেউ ভবনটি দখল করে নিতে চেয়েছেন। তারা বলেন, এ ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ড নাশকতাও হতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর বলেন, গত ৫ বছরে এই ভবনে চারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ জানার পরও এখানে প্লাস্টিকের কারখানা করা হয়েছে। কারখানায় দিনরাত কাজ চলে। অগ্নিকাণ্ডের সময় শ্রমিকদের শিফট পরিবর্তন চলছিল। তাই বেশি শ্রমিক সেখানে ছিলেন না। এক গ্রুপের কাজ শেষে অন্য গ্রুপ যখন কাজ শুরু করবেন তখন আগুন লাগে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন জানান, এ ভবনটি ইতোপূর্বে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরও এখানে কারখানা চলছিল। চকবাজার থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, ভবনটি পরিত্যক্ত, তবে নিচতলায় প্লাস্টিক কারখানায় ছিল। সেখানেই বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। রাস্তা অত্যন্ত সরু হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে সমস্যা হয় বলে জনান তিনি।
এসডাব্লিউ/ডিজে/আরা/০৯২০
আপনার মতামত জানানঃ