আফগানিস্তানে কর্মজীবী নারীদের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপেও তালিবান কর্র্তৃপক্ষ নারীদের অবস্থা উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্টো মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পরিচালিত স্কুলগুলো ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। এমন অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের খাদ্য জোগান ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা মেটাতে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিনমজুরসহ ছোট কাজে মনোনিবেশ করছেন।
ফারজানা আইয়ুবি ছিলেন একজন নারী আফগান সাংবাদিক। গত বছরের আগস্টে তালিবান পশ্চিমা সমর্থিত আশরাফ গণি নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারকে সরিয়ে তালিবানরা ক্ষমতায় আসলে তাকে বেকার হয়ে যেতে হয়।
আফগানিস্তানের দ্রুত এই রাজনৈতিক পালাবদলে একজন নারী হিসেবে গণমাধ্যমে ফারজানার জন্য টিকে থাকা ছিল মুশকিল।
তাই এখন বাধ্য হয়ে ৩ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি রাস্তায় রাস্তায় কাপড় বিক্রি করেন।
তালিবানরা নারী সাংবাদিকদের কাজ করতে দিচ্ছে না, এমন অভিযোগ করে ফারজানা বলেন, ‘কিছু গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সাংবাদিকরা বেকার হয়ে পড়ে এবং আমাকে বিক্রেতা হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে তারা (তালিবান কর্তৃপক্ষ) গণমাধ্যমে আমাদের (নারীদের) কাজ করতে দেয় না।’
তিনি আফগানিস্তানের গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আফগানিস্তানের সাংবাদিক ফেডারেশনের সদস্য হুজ্জাতুল্লাহ মুজাদিদও একই আহ্বান জানিয়েছেন।
কিছু গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সাংবাদিকরা বেকার হয়ে পড়ে এবং আমাকে বিক্রেতা হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে তারা (তালিবান কর্তৃপক্ষ) গণমাধ্যমে আমাদের (নারীদের) কাজ করতে দেয় না।’
আফগানিস্তানের জাতীয় সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রধান মাশরর লুৎফি বলেন, ‘আফগানিস্তানে রাজনৈতিক পরিবর্তনে গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল পরিবার মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাংবাদিকরা দূর্ভাগ্যজনকভাবে বিপজ্জনক কাজে নিয়োজিত এবং অনেকে রাস্তায় বিক্রেতাও হিসেবে কাজ করছেন।’
২৭ বছর বয়সী ফারজানা আফগানিস্তানের বিভিন্ন মিডিয়াতে কাজ করেছেন।
মিডিয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, যে তারা আফগান সাংবাদিকদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।
ফারজানা আইয়ুবির মতো আরও এক নারী সাংবাদিক মিরাকা পোপাল চাকরি হারিয়েছেন। তিনি ছিলেন টোলো নিউজের প্রধান। কিন্তু তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি পালিয়ে আলবেনিয়া চলে গেছেন। সেখান থেকেই তিনি টুইটারে আইয়ুবির দুটি ছবি প্রকাশ করেন। এরপর টোলো নিউজে আইয়ুবিকে নিয়ে একটি ভিডিও রিপোর্ট করে। সেখানে আইয়ুবিকে রাস্তায় খদ্দেরদের সঙ্গে ব্যবহৃত কাপড় বিক্রি করতে দেখা যায়।
সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স স্যানস ফ্রন্টিয়ার্স (আরএসএফ) বা রিপোর্টার উইদাউট বর্ডার্স গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তালিবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার শুরু থেকে নারী স্বাধীনতাই সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কায় ছিলো যা সত্যিকারের রূপ নিতে শুরু করেছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে নারী সাংবাদিকের সংখ্যা ছিল ৭০০। সেই সংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে এসে ঠেকেছে ৩৯-এ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে আফগানিস্তানে সক্রিয় ছিল ১০৮ টি সংবাদমাধ্যম। এই সংবাদমাধ্যমগুলোতে চাকরি করতেন মোট ৪ হাজার ৯৪০ জন। এই কর্মীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮০ জন এবং তাদের মধ্যে সাংবাদিক ছিলেন ৭০০ জন।
কিন্তু ১৫ আগস্ট তালিবান বাহিনী কাবুলের দখল নেওয়ার পর থেকে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে নারী সাংবাদিকদের উপস্থিতি। বর্তমানে পুরো আফগানিস্তানে মাত্র ৩৯ জন নারী সাংবাদিক কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স। তালিবান কাবুল দখলের আগে ও পরে নারী সাংবাদিকদের ঘরে থাকতে বাধ্য করা, হয়রানি এমনকি মারধোর পর্যন্ত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
কাবুলের দখল নেওয়ার পর তালিবান বাহিনী যদিও বলেছে, নারীদের কাজকর্মে যোগদানে কোনো বাধা দেওয়া হবে না, কিন্তু অধিকাংশ নারী সাংবাদিক সেই প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রাখতে পারছেন না বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে আরএসএফ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ