১৫৫৮ থেকে ১৬০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে চার দশক ইংল্যান্ড, ফ্রান্স এবং আয়ারল্যান্ডের বিশাল সাম্রাজ্যের রাজত্ব ছিল প্রথম এলিজাবেথের হাতে। তার রূপ আর আচরণের প্রশংসা ছিল সর্বত্র। এই রূপই জীবননাশের কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল রানি এলিজাবেথের!
‘মাস্ক অফ ইয়ুথ’ শব্দবন্ধে ১৯৭০ সালে ইতিহাসবিদ রয় স্ট্রং রানি রূপচর্চাকে বর্ণনা করেন। যেখানে তুলে ধরেন রানির সৌন্দর্য্য আর রূপচর্চার নানা কথা। তিনি লিখেছেন, সিংহাসনে বসার পর থেকেই রানি প্রথম এলিজাবেথ রূপচর্চা নিয়ে ছিলেন বেশ সচেতন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় নিয়ম বেধে তিনি রূপচর্চা করতেন। শুধু তাই নয়, দিনের বেশিরভাগ সময়ই রূপচর্চাতেই কেটে যেত তার সময়।
মিরর-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ষোড়শ শতাব্দীর ষাটের দশকে রানি এলিজাবেথের প্রসাধনী ব্যবহারের মাত্রা ছাড়ায়। সময়টা ছিল ১৫৬২ সাল। ঐ বছর গুটিবসন্ত হয় রানির। চিকিৎসায় জীবন বেচে যায়। কিন্তু ঘাতক রোগে ছাপ থেকে যায় তার শরীরে।
গভীর ক্ষতদাগ থাকে তার মুখে এবং গলায়। সেই দাগ ঢাকতেই শুরু হয় রূপচর্চার নতুন পন্থা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে রানি ‘ভেনেশিয়ান সেরুজ’-এর ব্যবহার শুরু করেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে নারীরা ফর্সা হতেন।
তৎকালীন বেশ কিছু নথি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ‘ভেনেশিয়ান সেরুজ’ সীসা এবং ভিনিগারের সংমিশ্রণে তৈরি হতো। রূপচর্চায় রানি নিয়মিত এর ব্যবহার করতেন। এছাড়াও রানি প্রায় আধ ইঞ্চি পুরো মেকআপ ব্যবহার করতেন নিজের ত্বকে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সেই মেকআপ তার ত্বকেই লাগানো থাকতো। এর মাঝে একাধিকবারও মেকআপ করতেন। আর প্রতিবার মেকআপের আগেই তিনি শরীরের ত্বকে ভেনেশিয়ান সেরুজ মাখতেন। নিয়মিত সীসার ব্যবহারই কাল হয় রানির।
শুধু ভেনেশিয়ান সেরুজই নয়, মেকআপ তোলার পরও রূপচর্চা করতেন রানি। যার বিরূপ ফল দেখা দেয় রানির ত্বকে। মেকআপ তোলার পর ডিমের খোসা, অ্যালাম এবং পারদের মিশ্রণে এই প্যাক ত্বকে ব্যবহার করেছেন। সেখানে ব্যবহৃত পারদেও বিষক্রিয়া হয়।
পরবর্তী সময়ে চিকিৎসক এবং ঐতিহাসিকদের বিশ্লেষণে জানা যায় জানান, রূপচর্চায় সীসা ও পারদের ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি শুধু শরীরের নয়, স্মৃতিভ্রংশ, বিষণ্ণতা, ইরিটেবিলিটির মতো মানসিক সমস্যার জন্যও দায়ী। এর ফলে চুল ঝরে যায়, দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। যা ঘটেছিল রানি এলিজাবেথের ক্ষেত্রেও। এক সময় রানির চুলও পড়ে যায় এবং পরচুলা পরে জনসম্মুখে আসতেন রানি।
রানির ছবির পর্যবেক্ষণে এমন অনেককিছুরই প্রমাণ পান ইতিহাসবিদরা। যেখানে তারা বর্ণনা করেছেন, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রানি রূপেরও পরিবর্তন দেখা যায়। যা ফুটে উঠে তার বিভিন্ন ছবিতে। সেই সময় রানির ত্বকের, ঠোঁটের জেল্লা ঠিক থাকলেও ক্রমশ ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। যার অন্যতম কারণ ছিল রানির মাত্রাতিরিক্ত প্রসাধনীর ব্যবহার।
প্রথম রানি এলিজাবেথের জীবন নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। মার্কিন লেখক স্টিভ বেরি ২০১৩ সালে রানিকে নিয়ে লেখেন। যেখানে তিনি দাবি করেন, প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজকন্যা এলিজাবেথ কিশোরী বয়সেই মারা যান। এরপর সিংহাসনে তার নাম দিয়ে বসেন একজন পুরুষ। তিনি ছিলেন গ্রামেরই এক ছেলে। রাজার থেকে এই সংবাদ লুকাতে অষ্টম হেনরির দুই কর্মচারী ক্যাটস এবং টমাস এই কাজটি করেন। তাইতো সারাজীবন মেকআপের পেছনেই থাকতে হয়েছে রানি এলিজাবেথের পরিচয়ে সেই ছেলেটি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৫৫
আপনার মতামত জানানঃ