চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে গতকাল শনিবার রাত ১১টায়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত চার বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের পর এখনো আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে অনেকে চলে গেছেন। ৭০ জন চিকিৎসাধীন। আর ৪ জন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
এর মধ্যেই চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে থাকা আরও চারটি কনটেইনারে রাসায়নিক রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে সেনাবাহিনী। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
আরিফুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী গতকাল রোববার থেকে দুর্ঘটনাস্থলে কাজ করছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করা হচ্ছে।
আরিফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, আরও চারটি কনটেইনারে রাসায়নিক রয়েছে। যেসব কনটেইনারে ধোঁয়া ও আগুন দেখা যাচ্ছে, তা বন্ধের চেষ্টা চলছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর বাকি কাজ করা হবে।’
সূত্র মতে, আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকেও পাঁচ-ছয়টি কনটেইনারে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। আকাশে উড়ছিল বিষাক্ত রাসায়নিক ও পুড়ে যাওয়া কনটেইনার থেকে বের হওয়া ধোঁয়া।
উল্লেখ্য আরও ৪ কনটেইনারে রাসায়নিক আছে। ওই চারটি কনটেইনারেই হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রয়েছে কি না, প্রশ্ন করা হলে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘হতে পারে, আবার অন্য রাসায়নিকও থাকতে পারে।’
কনটেইনার থেকে ধোঁয়া বের হলে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ জানান আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যেসব কনটেইনার থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে, সেগুলোর ভেতরে কাপড় ছিল। পানি ছিটানোর পর আগুন নিভে কাপড় থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।’
এদিকে, সেনাবাহিনীর সদস্যরা কনটেইনার ডিপোর আশপাশের বিভিন্ন নালায় বালু দিয়ে বাঁধ দিয়েছেন, যাতে রাসায়নিক সমুদ্রে গিয়ে না পড়ে।
এলাকা ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষ
এদিকে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে আতঙ্কে আছেন স্থানীয় লোকজন। আবার বিস্ফোরণ হতে পারে—এ আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছাড়ছেন। আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পরও ডিপোর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাঁদের। ডিপোতে কাজ করা শ্রমিকেরা থাকতেন যেসব এলাকায়, সেখানকার ভাড়া ঘরগুলো প্রায় খালি হয়ে গেছে।
আজ সকালে বিএম কনটেইনার ডিপোর আশপাশের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, আতঙ্কিত লোকজনের অনেকে আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বেশির ভাগ পরিবার তাদের শিশুদের স্বজনদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, গত শনিবার রাতে বিএম ডিপোতে প্রথম বিস্ফোরণের পর থেকেই লোকজন আতঙ্কিত। দ্রুত আগুন নিভে যাবে—এমনটাই ভেবেছিলেন তারা। তবে সময় যতো গড়িয়েছে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা ততো বেশি কঠিন হয়ে উঠেছে।
আরেক বাসিন্দা মো. মোবারক বলেন, ‘এলাকায় আমার ১০৫টি ভাড়া ঘর আছে। এসব ঘর বিএম ডিপোর শ্রমিকদের ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ভাড়া দিয়েছিলাম। ডিপোতে বিস্ফোরণের পর থেকে ঘর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। এর মধ্যে ৭০টি ঘর খালি হয়ে গেছে।’
ডিপো এলাকার মোল্লাপাড়া গ্রামের দোকানি মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে আমার দোকানে দৈনিক ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা বিক্রি হতো। আগুনের ঘটনার পর বিক্রি ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায় এসে ঠেকেছে। ডিপোতে আবার বিস্ফোরণের ভয়ে অনেক মানুষ এলাকা ছেড়েছেন।’
কেশবপুর গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য মো. রবিন বলেন, বিস্ফোরণের আতঙ্কে ভুগছেন এলাকাবাসী। অনেকে এলাকা ছেড়েছেন। আরও অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৩০
আপনার মতামত জানানঃ