অর্থ আত্মসাতের মামলায় সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবীরসহ ৯ জনকে দুই ধারায় ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন বুধবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিত ৯ আসামি হলেন, সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবীর, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, জিএম ননী গোপাল নাথ, ডিজিএম শেখ আলতাফ হোসেন ও সফিজ উদ্দিন আহমেদ, এজিএম কামরুল হোসেন খান ও সাইফুল হাসান এবং প্যারাগন নিট কম্পোজিট লিমিটেডের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা ও পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
কেন এই সাজা?
ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের সাড়ে ২৭ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তাদেরকে এ সাজা দেয়া হয়েছে।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর শওকত আলম জানান, আত্মসাতের দায়ে তাদের প্রত্যেককে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৮১ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওই জরিমানা রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হবে।
আর প্রতারণার দায়ে প্রত্যেককে সাত বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড না দিলে তাদের আরও তিন মাস করে কারাভোগ করতে হবে। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে। ফলে আসামিদের প্রত্যেককে ১০ বছর করে জেল খাটতে হবে।
রায় ঘোষণার সময় মাইনুল হক, সফিজ উদ্দিন, শেখ আলতাফ ও কামরুল হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতক বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
প্রসঙ্গত, ২৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৮১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মুজিবুর রহমান রমনা মডেল থানায় মামলাটি করেন। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ২২ মে আদালতে অভিযোগপত্র দেন দুদকের সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান।
এ মামলার আসামিরা হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে দায়ের করা দুদকের বিভিন্ন মামলারও আসামি। ওই সময় বরখাস্ত এমডি হুমায়ুনকে গ্রেপ্তারে আদালত আদেশ দিলেও তিনি পলাতক রয়েছেন। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে হল-মার্ক গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় হুমায়ুন দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকের এমডি ও সিইওয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে হল-মার্ক গ্রুপ জালিয়াতির মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় হুমায়ুন দেশের সবচেয়ে বড় এ ব্যাংকের এমডি ও সিইওয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
এ আগে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের আরেক মামলায় ২০২১ সালে হুমায়ুন কবীরসহ ১১ জনকে মেয়াদে কারাদণ্ড দেয় ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালত।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে হলমার্কসহ ৫টি প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা (হোটেল শেরাটন) শাখা থেকে ঋণের নামে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। যা নিয়ে তখন বড় আলোচনা তৈরি হয়। বাতিল করা হয় সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। আটক করা হয় সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাকে ও হলমার্কের মালিককে।
সোনালী ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা
সম্প্রতি হলমার্ক গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির টাকা উদ্ধারের আশা করছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পাশাপাশি গত মাসের ২৭ তারিখ সোনালী ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ মাসে সোনালী ব্যাংকের কার্যক্রমের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, গত বছর জানুয়ারি-মার্চে পরিচালন মুনাফা ছিল ৪৩৩ কোটি টাকা, যা চলতি বছরে একই সময়ে বেড়ে হয়েছে ৫৬৮ কোটি টাকা। তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। আর আমানত বেড়েছে ৪ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। গত মার্চে আমানত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ১৫ বছর আগের তুলনায় কমেছে। ২০০৭ সালে এই হার যেখানে ৪৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ ছিল, সেখানে বর্তমানে তা ১৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, আমানতেও উন্নতি ঘটেছে। যেমন ১০-১২ বছর আগে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির সময়ে ব্যাংকটিতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকা, যা এখন প্রায় আড়াই গুণ, অর্থাৎ ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ৯ বছরে ব্যাংকটির সম্পদ ৭৫ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মার্চ ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, দি ব্যাংক অব ভাওয়ালপুর এবং দি প্রিমিয়ার ব্যাংক একীভূত হয়ে সোনালী ব্যাংক নামে যাত্রা শুরু করে। আর ২০০৭ সালের ৩ জুন থেকে এটি লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট শাখা ১ হাজার ২২৯টি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৫০
আপনার মতামত জানানঃ