অতিমারির ফলে প্রায় প্রতিটি দেশে লকডাউন হয়েছে। অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়েছে। প্রচুর মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। বহু মানুষ গরিব হয়েছেন। গরিব আরও গরিব হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বে অতিধনীর সংখ্যা বেড়েছে।
করোনা মহামারি, নানা সংকট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জাঁতাকলে যখন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা পিষ্ট, এমন সময়েও নতুন করে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে। করোনা মহামারিকালে বিশ্বে নতুন করে ৫৭৩ জন ব্যক্তি শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ার হয়েছেন।অপরদিকে চলতি বছর নতুন করে বিশ্বের ২৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফাম এ তথ্য জানিয়েছে। খবর এএফপির।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন শুরুর প্রেক্ষাপটে অক্সফাম এ তথ্য জানাল। ২২ মে সম্মেলন শুরু হয়েছে। ২৬ মে পর্যন্ত সম্মেলন চলবে। এ সম্মেলনে অংশ নিতে বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, বিলিয়নিয়ার, সিইও দাভোসে জড়ো হচ্ছেন।
দাভোস সম্মেলন শুরুর পর আজ সোমবার(২৩ মে) অক্সফাম জানায়, করোনা একদিকে যেমন নতুন বিলিয়নিয়ার তৈরি করেছে, অন্যদিকে এই মহামারি বহু মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে।
করোনা মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এ কারণে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এ সংকটের কথা উল্লেখ করে অক্সফাম বিপরীত চিত্রও তুলে ধরেছে।
অক্সফাম বলছে, করোনা মহামারিকালে বিশ্বে নতুন করে ৫৭৩ জন ব্যক্তি শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। অর্থাৎ, প্রতি ৩০ ঘণ্টায় শতকোটিপতি হয়েছেন একজন।
এদিকে চলতি বছর নতুন করে বিশ্বের ২৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে বলে ধারণা করছে অক্সফাম। এমন হলে প্রতি ৩৩ ঘণ্টায় ১০ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র হবে।
অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা বুচার এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, বিলিয়নিয়াররা তাদের ভাগ্যের অবিশ্বাস্য উন্নতি উদ্যাপন করতে দাভোসে আসছেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, করোনা মহামারি ও বর্তমানে খাদ্য-জ্বালানির অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধি তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়েছে। অন্যদিকে, কয়েক দশকে চরম দরিদ্র দূরীকরণে যে অগ্রগতি হয়েছে, তার গতি এখন বিপরীতমুখী। বিশ্বের বিপুলসংখ্যক মানুষ অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধির মুখে পড়েছে। টিকে থাকার জন্য তাদের লড়তে হচ্ছে।
করোনা একদিকে যেমন নতুন বিলিয়নিয়ার তৈরি করেছে, অন্যদিকে এই মহামারি বহু মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে।
মহামারির সুবাদে যারা শতকোটিপতি হয়েছেন, তাদের ওপর ‘সংহতি কর’ আরোপের আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম। সংস্থাটি বলছে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির শিকার লোকজনকে সহায়তার জন্য এই কর আরোপ করা উচিত। পাশাপাশি মহামারি থেকে টেকসই পুনরুদ্ধার তহবিলেও এই কর কাজে লাগানো যাবে।
সংকটকে কাজে লাগিয়ে মুনাফা করার প্রবণতা বন্ধের এখনই সময় বলে উল্লেখ করেছে অক্সফাম। বড় করপোরেশনগুলোর এমন মুনাফার ওপর অস্থায়ী ভিত্তিতে অতিরিক্ত কর চালু করার পক্ষে মত দিয়েছে সংস্থাটি।
কোটিপতিদের সম্পদের ওপর বার্ষিক ২ শতাংশ ও শতকোটিপতিদের সম্পদের ওপর বার্ষিক ৫ শতাংশ করারোপ করা হলে এক বছরে ২ দশমিক ৫২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সংগ্রহ করা যাবে বলে জানায় অক্সফাম।
ধনীদের কাছে থেকে এই কর আদায় করা গেলে তা দিয়ে বিশ্বের ২৩০ কোটি মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণ, পর্যাপ্ত টিকা তৈরি ও দরিদ্র দেশগুলোর মানুষের সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা সম্ভব বলে জানিয়েছে অক্সফাম।
ফোর্বস সাময়িকীর শতকোটিপতি তালিকার পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এই হিসাব দিয়েছে অক্সফাম।
বিশ্বের তথাকথিত এলিট শ্রেণি ১৯৯৫ সাল থেকে দাভোসে এ সম্মেলন করে আসছে। তবে করোনা মহামারির কারণে দুই বছর এ সম্মেলন হয়নি। দাভোস সম্মেলন উপলক্ষে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অসমতা নিয়ে নিয়মিত এমন তথ্য তুলে ধরে অক্সফাম। সংস্থাটির এবারের তথ্য বলছে, বিশ্বজুড়ে ধনী ও গরিবের মধ্যে অসমতা বাড়ছে। তাই দরিদ্রদের সহযোগিতার জন্য ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর এখনই সময় বলে মনে করছে সংস্থাটি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধে বিধিনিষেধ চলাকালে বিশ্ব অর্থনীতিতে অতিধনীদের সম্পদ ফুলে–ফেঁপে উঠেছে, বিশেষ করে যারা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে জড়িত। বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের গতি জোরদার হওয়ার সুবাদে আর্থিক বাজারগুলোয় চাঙাভাব দেখা দেওয়ার কারণে অন্যদের সম্পদ বেড়েছে।
মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার মধ্যে খাদ্য প্রথম। সেই খাদ্যের জোগানের একমাত্র মাধ্যম কৃষি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা অধ্যুষিত বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এখনো খাদ্যের অভাবে ধুঁকে মরছে। করোনা মহামারি যেন জ্বলে আসা আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। এতে নতুন দরিদ্র হয়েছে আরও অনেকে। তবে একদিকে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ও খাদ্য সংকট বাড়লেও অন্যদিকে বিশ্বে বাড়ছে অতিধনীদের সংখ্যা। অল্প কিছু অতিধনী সাহায্য করলে বিশ্বের চলমান খাদ্যসংকট মেটানো সম্ভব বলে দাবি করেছেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পরিচালক ডেভিড বিসলি।
সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) পরিচালক ডেভিড বিসলি বলেছেন, এসব ধনকুবের যদি তাদের সম্পদের সামান্য অংশ দান করেন, তাহলে বিশ্বের বহু মানুষের মুখে দুমুঠো খাবার জুটবে। চাইলে অতিধনীদের কোনো একজনের একবারের দানেই বিশ্বজুড়ে অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষ প্রাণে বাঁচবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১৫
আপনার মতামত জানানঃ