বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও দেশের ঊর্ধ্বমূখী মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতেও ২০২২ সালের জুনে তিন মাসের ব্যবধানে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৪৮৬০টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৫৯৭টি। তিন মাস পরে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৪৫৭টি। সে হিসেবে তিন মাসে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারী বেড়েছে ৪.৬৯ শতাংশ।
সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “যেকোন দুর্যোগ ও সংকটকালীন সময়ে একটা শ্রেণী ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্য একটা শ্রেণী এ সুযোগে প্রচুর মুনাফা করে। হঠাৎ করে তিন মাসের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাবধারী বাড়ার সেটাও একটা কারণ।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশে যে আয় বৈষম্য রয়েছে তা কোটিপতি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে এর মাধ্যমে প্রকৃত কোটিপতির পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে না, কারণ অনেকে টাকা পাচার করে বিদেশের ব্যাংকে জমা রাখে। এছাড়া ক্যাশ টাকা ব্যাংকে না রেখে বিভিন্ন খাতে যারা ইনভেস্ট করছে, তাদের সম্পদের পরিমাণটাও এখানে আসছে না।”
২০২০ সালের মার্চ মাসে দেশে করোনাভাইরাস প্রকোপ শুরুর সময় দেশের ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি থাকা অ্যাকাউন্টের (ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান) সংখ্যা ছিল ৮২,৬২৫। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এর এক বছর পরে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়।
চলতি বছরের জুন শেষে এসব একাউন্টে আমানতের পরিমাণ মার্চ শেষে ৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা। যদিও মার্চ শেষে এসব অ্যাকাউন্টে টাকা ৬ লাখ ৬৩ হাজার ৫০৫কোটি টাকা। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে জমার পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, মোট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তুলনায় কোটিপতিদের একাউন্ট সংখ্যা ১ শতাংশও নয়। কিন্তু এসব অ্যাকাউন্টে মোট আমনতের প্রায় ৪৩.২৩ শতাংশ টাকা জমা আছে।
এছাড়া চলতি বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংকখাতে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭১ হাজারের বেশি। যার মধ্যে কোটিপতিদের টাকার পরিমাণ রয়েছে ৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলছেন, কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সবগুলোই ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট নয়। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টও আছে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট আছে।
১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বর্তমানে রয়েছে ৮৫,৮৪৮টি। এসব হিসাবে মোট টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। যা মোট আমানতের ১১.২৪ শতাংশ।
এছাড়া ৫০ কোটি থেকে উপরের হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১৮০৫টি। যাতে টাকা রয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার কোটি। এটি মোট আমানতের ১৫.০৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া হিসাব অনুয়ায়ী, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা ছিল ৫টি, যা ১৯৭৫ সালে ৪৭টিতে উন্নীত হয়।
দেশে কোটিপতি হিসাব ১৯৮০ সালে ছিল ৯৮টি, ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি, ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩টি এবং ২০১৫ সালে ৫৭ হাজার ৫১৬টি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৩৪
আপনার মতামত জানানঃ