রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৫২ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসংঘ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে হামলা চালায় রাশিয়া। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বহু বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরো কয়েক লাখ মানুষ।
জাতিসংঘ হাই কমিশনের হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) তাদের সর্বশেষ আপডেটে নিশ্চিত করেছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধে ৭ হাজার ৮১৪ বেসামরিক হতাহত হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ৩ হাজার ৭৫২ জন। আহত হয়েছে আরো ৪ হাজার ৬২ জন।
ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে, রেকর্ড করা বেশিরভাগ বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরক অস্ত্র ব্যবহার বিশেষ করে ভারী কামান এবং একাধিক লঞ্চ রকেট সিস্টেম থেকে গোলাবর্ষণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলায়।
তবে সংঘাত চলমান থাকায় অনেক স্থান থেকেই মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাই নিহতের সংখ্যা আরো বেশি হয়ে থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে মারিউপোলের আজোভস্তাল স্টিল কারখানায় অবরুদ্ধ আড়াইশর বেশি ইউক্রেনীয় সেনা আত্মসমর্পণ করেছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া।
মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের ২৫৬ সৈন্য অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করেছে, যাদের মধ্যে ৫১ জন গুরুতর আহত।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেনীয় সেনাদের সঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী’ আচরণ করার গ্যারান্টি দিয়েছেন।
থমকে গেল শান্তি আলোচনা
টানা প্রায় তিন মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। সক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিরোধ করছে ইউক্রেনও। এই পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে দুই দেশের শান্তি আলোচনা চলছিল একইসঙ্গে।
তবে সেই শান্তি আলোচনা আপাতত থমকে গেছে। রাশিয়া এর জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করলেও ইউক্রেনের পাল্টা আঙুল রাশিয়ার দিকে।
সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, মস্কো-কিয়েভের চলমান এই যুদ্ধ কীভাবে থামিয়ে সমাধানসূত্রে পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা চলছিল।
মঙ্গলবার রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশের প্রতিনিধিই জানিয়ে দিয়েছেন, শান্তি আলোচনা আপাতত স্থগিত। কোনোপক্ষই সমাধানসূত্রে পৌঁছাতে পারছে না।
এদিকে শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার জন্য সামগ্রিকভাবে ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার প্রতিনিধিরা। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই রুডেনকো বলেছেন, কিয়েভ কার্যত আলোচনার টেবিল থেকে উঠে গেছে। আপস-মীমাংসার সামান্য সুযোগটুকু তারা রাখেনি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বক্তব্য, ইউক্রেন নিজের স্বার্থের কথা ভাবছে না। তারা পশ্চিমা দেশগুলোর কথামতো কাজ করছে। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে কার্যত ব্যবহার করছে নিজেদের কৌশল সাজানোর জন্য। এতে ইউক্রেনের কোনো লাভ হবে না।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, আমরা সবসময়ই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চেয়েছিলাম। কিন্তু ইউক্রেন তা হতে দিচ্ছে না।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পরামর্শদাতা মিখাইলো পদোলিয়াক জানিয়েছেন, আলোচনা স্থগিত করতেই হলো কারণ, রাশিয়া কোনোরকম দাবিই মানতে রাজি নয়। তারা কোনো সমাধানসূত্রেও পৌঁছাতে চাইছে না। রাশিয়ার অবস্থান অত্যন্ত নেতিবাচক বলেও অভিযোগ পদোলিয়াকের।
এদিকে সামরিক জোট ন্যাটোতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের যোগদান নিয়ে সরকারিভাবে মুখ খুলেছে রাশিয়া। মঙ্গলবার দেশটি জানিয়েছে, ওই দুই দেশ ন্যাটোয় যোগ দিতে চাইলে তাদের কিছু বলার নেই। বিষয়টিকে তারা হুমকি হিসেবেও দেখছে না। কারণ, ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার আগেও ন্যাটোর একাধিক মহড়ায় এই দুই দেশ যোগ দিয়েছে।
মস্কো বলছে, দেখার বিষয় হলো ওই দুই দেশের ভূখণ্ডে ন্যাটো সেনাঘাঁটি তৈরিতে ব্যবহার করে কিনা। তা করা হলে রাশিয়া উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করলে রাশিয়াকে তার উত্তর দিতে হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/২২৩০
আপনার মতামত জানানঃ