খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় ইরানে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছে। এখনো ইরানের বেশ কয়েকটি শহরে খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে।
খাদ্যপণ্যের লাগামহীন দাম বেড়ে যাওয়ায় ইরানের বিভিন্ন শহরে শুরু হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। গত শুক্রবার থেকে চলমান এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন বহুসংখ্যক।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেন। এর মধ্যে বেশ কিছু ভর্তুকি প্রক্রিয়ার পরিবর্তন এবং ভোজ্য তেলের মতো কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয় রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি খাদ্য আমদানি ভর্তুকি হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্তের পর থেকে দেশটির খাদ্যবাজারে অস্তিরতা বাড়ে। সে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ও ইউক্রেন সংঘাতও বড় কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে।
ভর্তুকি বাতিলের ফলে রান্নার তেল, মুরগির মাংস, ডিম ও দুধের মতো দৈনন্দিন জিনিসপত্রের দাম ইরানে নাটকীয়ভাবে ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহার করে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তই এ বিক্ষোভের কারণ। চলতি সপ্তাহে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি খাদ্যপণ্য আমদানির ওপর ভর্তুকি দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত স্থিতিশীল রাখতে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে সরকার।
সরকারি হিসেবেই ইরানে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার ৪২ শতাংশ। চলতি বছরের শুরু থেকেই ভোজ্য তেল, মুরগির মাংস, ডিম-দুধসহ প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছিল পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটিতে। রাইসির ঘোষণার পর এক লাফে এই মূল্যবৃদ্ধির হার ৩০০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।
৮ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত ইরানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের একের পর এক নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত দেশটির অর্থনীতিও বর্তমানে বেশ নড়বড়ে।
পরিস্থিতি সামলাতে ইরান সরকার স্বল্প আয়ের নাগরিকদের মাসিক ভাতা প্রদানের অঙ্গীকার করেছে। তবে দেশজুড়ে খাদ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় লোকজন হিমশিম খাচ্ছে। খাবারের দোকানগুলোতে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
খাদ্যপণ্যের লাগামহীন দাম বেড়ে যাওয়ায় ইরানের বিভিন্ন শহরে শুরু হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। গত শুক্রবার থেকে চলমান এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এখন পর্যন্ত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন বহুসংখ্যক।
এর ফলে ইরানের দোরুদ, ফারসান, জুনঘান, বোরুজেরদ, চোলিচেহ, দেহদাশত ও আরদেবিলসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সেই বিক্ষোভে সংঘাতে রূপ নেয়। কয়েকটি দোকানে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা।
রোববার (১৫ মে) সৌদি অর্থায়িত ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভি স্টেশন একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, শুক্রবার (১৩ মে) থেকে বিক্ষোভ চলাকালীন পাঁচজন নিহত হয়েছে। টুইটারের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, তাদের একজনকে গুলি করা হয়েছিল।
শুক্রবার (১৩ মে) প্রথম এক তরুণের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আন্দিমেস্কে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সরকারি ইরনা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, এ ঘটনায় কয়েক ডজন লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সংস্থাটি হতাহতের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি।
ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর রাশত, কেন্দ্রীয় শহর ফারসান এবং উত্তর-পূর্বের শহর নেইশাবুরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিয়েছেন, ‘রাইসি, একটু লজ্জা কর, দেশটাও ছেড়ে দাও!’
খাদ্যের দাম বাড়া নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিলে গত সপ্তাহে প্রায়ই ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে বিক্ষোভকারীরা সমাবেশের আয়োজন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও প্রচার করতে না পারে।
ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী গমের দাম দ্রুত বেড়ে যায়। এতে ইরানেও ভর্তুকি খরচ বেড়ে গেছে।
তবে, ইরানি কর্মকর্তারা প্রতিবেশী ইরাক ও আফগানিস্তানে ইরানের সরকারি ভর্তুকি পাওয়া ময়দা পাচারকেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৭
আপনার মতামত জানানঃ