
টানা প্রায় আড়াই মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ সেনাদের সর্বাত্মক এই হামলায় পূর্ব ইউরোপের দেশটি অনেকটা বিপর্যস্ত হলেও চলমান এই যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অনেক জেনারেলকে হত্যা করে মস্কোকে কার্যত অবাক করে দিয়েছে ইউক্রেন।
তবে রুশ জেনারেলরা ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের হাতে প্রাণ হারালেও এর পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত ইউক্রেনে যুদ্ধরত রাশিয়ার জেনারেলদের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে কিয়েভকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এই তথ্য সামনে এনেছে বলে বৃহস্পতিবার (৫ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সূত্র মতে, চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার জেনারেলদের হত্যার জন্য ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ওই গোয়েন্দা তথ্যই রাশিয়ান অনেক জেনারেলকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে সহায়তা করছে ইউক্রেনকে। যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাতে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধ চলাকালীন ইউক্রেনকে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ান জেনারেলদের টার্গেটে পরিণত করতে এই গোয়েন্দা সহায়তা বাইডেন প্রশাসনের গোপন প্রচেষ্টার অংশ।
আল-জাজিরার খবরে উল্লেখ করা হয়েছে- ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিনিয়ত অবস্থান বদল করা রাশিয়ান সামরিক সদর দপ্তরের অবস্থান এবং এর সম্পর্কে অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহ করেছে ইউক্রেনকে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের মধ্যে টেলিফোনে কথোপকথনে নজরদারি করে পাওয়া তথ্যও রয়েছে।
পরে এসব তথ্য নিজেদের গোয়েন্দাদের অর্জিত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে পর্যালোচনা করে ইউক্রেন, যা রাশিয়ান জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অবস্থান নিশ্চিতে দেশটিকে সাহায্য করে।
এর সঙ্গে কিয়েভ নিজের গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে আর্টিলারি হামলাসহ রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে চালানো অন্যান্য আক্রমণেই রুশ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে।
মার্কিন এই প্রভাবশালী পত্রিকা জানিয়েছে, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাশিত গতিবিধি, অবস্থান ও রাশিয়ার ভ্রাম্যমাণ সামরিক সদর দপ্তর সম্পর্কে বিশদ বিবরণ ইউক্রেনকে দিয়েছে ওয়াশিংটন।
অবশ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এই রিপোর্টের বিষয়ে জানতে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউস সাড়া দেয়নি।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তারা শীর্ষস্থানীয় ১৩ জন রুশ জেনারেলকে হত্যা করেছে। অনেক সামরিক বিশ্লেষকদের মতে কোনো যুদ্ধে শীর্ষস্থানীয় সেনা কর্মকর্তা নিহতের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা অনেক বেশি।
এদিকে, চেচনিয়ায় চার বছরের যুদ্ধের তুলনায় ইউক্রেনে বেশি সংখ্যক রুশ সেনা প্রাণ হারিয়েছে বলে এক রাশিয়ান সেনা জানিয়েছেন। ওই রুশ সেনা এবং তার বন্ধুর মধ্যে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপে এ তথ্য জানা গেছে বলে ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিস (এসবিইউ) দাবি করেছে।
ইউক্রেনে কতজন রুশ সেনা নিহত হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়। মার্চ মাসে ন্যাটো কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন যে যুদ্ধে ১৫ হাজার রুশ সেনা মারা গেছে।
এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পাঠানো নিয়ে ন্যাটো সামরিক জোটকে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনের উদ্দেশে পাঠানো অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জামের চালান তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এক সম্মেলনে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনে অস্ত্র চালান অব্যাহত রেখেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা উত্তর আটলান্টিক জোটের যে কোনো পরিবহন ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র বা উপকরণ নিয়ে দেশটির ভূখণ্ডে আসলে তা ধ্বংস করার লক্ষ্য হিসেবে দেখি।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর আজ পর্যন্ত টানা ৭০ দিনের মতো চলছে দেশ দুইটির সংঘাত। এতে দুই পক্ষের বহু হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে যুদ্ধ বন্ধে এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ নেই।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ