ইউক্রেনে হামলার প্রতিবাদে রাশিয়াকে বাণিজ্যিক এবং সামাজিকভাবে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো। সেই দেশগুলোর বিভিন্ন সংস্থা রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর প্রক্রিয়াও চলছে।
এদিকে বিশ্ববাসীর কাছে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা বন্ধ করে মস্কোর ওপর চাপ বাড়াতে আহ্বান জানিয়ে আসছে পশ্চিমারা। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের একের পর এক দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পুতিনের শর্ত মেনে নেয়ায় ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা দুর্বল হয়ে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে
মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশ পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস বন্ধ করতেই নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপে। ইতোমধ্যেই রাশিয়ার শর্ত মেনেই জ্বালানি কেনার জন্য বেশ কিছু ইউরোপীয় জ্বালানি সংস্থা সক্রিয় হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে জার্মানি এবং অস্ট্রিয়ার মতো দেশের সংস্থা।
ডলার বা ইউরো নয়, রুশ জ্বালানি সরবরাহকারী সংস্থা গ্যাজপ্রম ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, মস্কোর সহযোগী নয় এমন দেশগুলোকে তেল ক্রয় করতে হলে দাম মেটাতে হবে রুবলে। সেজন্য গ্যাজপ্রমের ব্যাংকে পৃথক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
জার্মান সংস্থা ইউনিপার জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ইউরোপে একটি রুশ ব্যাংকের শাখায় তারা অ্যাকাউন্ট খুলছে। তার মাধ্যমেই জ্বালানির দাম পরিশোধ করা হবে। একই বার্তা দিয়েছে অস্ট্রিয়ার জ্বালানি সংস্থা এমভিজেএফ।
এর আগে বুধবার গ্যাজপ্রম জানায়, পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়া জ্বালানির দাম রুবলে দিতে পারেনি বলেই ওই দুই দেশে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ইতালির একটি জ্বালানি সংস্থাও রুবলে দাম পরিশোধের জন্য রুশ ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে বলে ইউরোপের কয়েকটি গণমাধ্যম দাবি করেছে।
বৃহস্পতিবার মস্কো জানিয়েছিল, জ্বালানির দাম মেটানোর জন্য ইউরোপের অন্তত ১০টি কোম্পানি রুশ জ্বালানি সংস্থা গ্যাজপ্রমের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে যুদ্ধের পাঁচ সপ্তাহ পর পশ্চিমা দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের হুমকি দেয় রাশিয়া। যদিও প্রথম থেকেই এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এটি কার্যকর হলে ইউরোপীয় দেশগুলোতে গ্যাসের দাম আকাশ ছুঁবে।
এ নিয়ে একটি ডিক্রীতে স্বাক্ষর করে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর ফলে বিদেশী দেশগুলোকে রাশিয়ার গ্যাস কিনতে হলে রুবলে তার দাম পরিশোধ করতে হবে। নইলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেবে রাশিয়া।
পুতিন বলেন, কেউ আমাদের কাছে বিনামূল্যে কিছু বিক্রি করে না। আর আমরাও দয়া-দাক্ষিণ্য করতে যাচ্ছি না। রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে হলে অবশ্যই রাশিয়ার ব্যাংকে রুবল অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
১লা এপ্রিল থেকে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। কেউ এভাবে পেমেন্ট করতে ব্যর্থ হলে আমরা সেসব ক্রেতাকে খেলাপি বিবেচনা করব। খেলাপিদের ক্ষেত্রে বিধিমাফিক যা করা হয়, সে ব্যবস্থাই নেয়া হবে।
বিবিসির রিপোর্ট বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ গ্যাস ও ৩০ শতাংশ তেল আসে রাশিয়া থেকে। রাতারাতি এই উৎসের কোনো বিকল্পও তাদের নেই। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন সব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও জ্বালানী খাতকে এর বাইরে রাখা হয়েছে।
রুবলের মাধ্যমে গ্যাস ক্রয়ে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে পুতিন মূলত রুশ মুদ্রার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় এর দামের বড় ধরণের পতন হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৭৮ রুবল।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকলে রুবলের দরপতন হতে থাকে।
১লা মার্চ প্রতি ডলারে ১০৫ রুবল এবং ৮ই মার্চ প্রতি ডলারে ১৪৪ রুবল বিনিময় হয়। এরপর পুতিন নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলো থেকে কেবলমাত্র রুবলে গ্যাসের মুল্য নেওয়া হবে মর্মে ঘোষণা দিলে মুদ্রাবাজারে রুবলের চাহিদা বেড়ে যায়। চড়তে থাকে রুবলের বিনিময় মূল্য।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৩৩
আপনার মতামত জানানঃ