রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কোনো দেশ ইউক্রেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করলে তাকে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ গতিতে তাদের জবাব দেবে মস্কো। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি মূলত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
একই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্ক করে ক্রেমলিন বলেছে, মস্কোর ধৈর্য পরীক্ষা নেওয়া উচিত হবে না। ইউক্রেনে যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করা হবে ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। ইতিমধ্যে রুশ পররাষ্ট্র সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ইউক্রেনে ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে। এ অবস্হায় পুতিনের হুঁশিয়ারি প্রথম পৃষ্ঠার পর পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকিকে খাটো করে দেখা ঠিক হবে না।
অন্য দেশেও যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন কোনো দেশ ইউক্রেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করলে তাকে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, আমাদের সব ধরনের উপকরণ আছে। দরকার হলে আমরা তা ব্যবহার করব। বুধবার সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়ান আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
পুতিন বলেন, কেউ যদি বাইরে থেকে ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে ও রাশিয়ার জন্য কৌশলগত হুমকি সৃষ্টি করে, তাহলে আমরা বিদ্যুৎ গতিতে জবাব দেব। ইউক্রেনে রুশ অভিযানের নির্দেশ দিয়েও একই ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন পুতিন।
এমনকি পরমাণু অস্ত্রকে সতর্ক অবস্হায় রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুতিনের এসব হুঁশিয়ারির পর ইউরোপের অন্য দেশেও যুদ্ধ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক খবরে বলা হয়েছে, মাত্র ৯ সপ্তাহ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধকে ইউক্রেনের সীমানার মধ্যেই রাখতে চান। কিন্তু ওয়াশিংটন ও ইউরোপের রাজধানীগুলোতে আশঙ্কা বাড়ছে যে, এই যুদ্ধ আরো বিস্তৃত হতে পারে। প্রতিবেশী দেশেও ছড়াতে পারে।
পুতিনের হুঁশিয়ারির পরদিন তার মুখপাত্র পশ্চিমাদের সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনে ভারী ও অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ করাটা ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হবে। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেনে ভারী অস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বেশি বেশি সরবরাহ করার প্রবণতা ইউরোপের নিরাপত্তায় হুমকি এবং তা অস্হিতিশীলতা উসকে দিতে পারে।
রাশিয়ার হুমকি দায়িত্বজ্ঞানহীন: পেন্টাগন
রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহারের হুমকিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মন্তব্য করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন।
রুশ প্রেসিডেন্টের হুমকির পর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, আমরা রুশ নেতাদের কাছ থেকে যেসব বক্তব্য শুনছি, বিশেষ করে পারমাণবিক সংঘর্ষের যে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে তা দায়িত্বজ্ঞানহীন।
পারমাণবিক সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার বাগাড়ম্বরের কথা উল্লেখ করে জন কিরবি বলেন, একটি আধুনিক পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের কাছ থেকে এমনটা আশা করা যায় না।
রাশিয়ার হুঁশিয়ারির পর পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, রাশিয়ার বেপরোয়া আচরণে শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনের বাইরে ইউরোপের অন্য দেশেও যুদ্ধ ছড়াতে পারে। এমনকি অকল্পনীয় সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে রাশিয়া ও ন্যাটো। যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
তবে রুশ হুমকির পরও যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের পাশে থাকবে। ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, আগামী কয়েক বছর ধরে ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে ন্যাটো প্রস্ত্তত রয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস রুশ বাহিনীকে পুরো ইউক্রেন থেকে হটিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেন থেকে রুশ সেনাদের হটানোর ডাক
রুশ নেতাদের একের পর এক হুমকি সত্ত্বেও ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহের পদক্ষেপ জোরদার করেছে। ইউক্রেনে যেন রাশিয়াকে পরাজিত করতে পারে তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর রুশ বাহিনীকে পুরো ইউক্রেন থেকে হটিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ স্ট্রাস।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধ পাঁচ বছর পর্যন্ত বা আরো বেশি দিন চলতে পারে। তিনি ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ও সহায়তা দ্বিগুণ করার জন্য পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রয়োজন আরও ট্যাংক, যুদ্ধবিমান ও ভারি অস্ত্র। হুমকির মুখে পিছু হটা নয় বরং এই মুহূর্ত হলো সাহসিকতার।
তিনি বলেন, পুতিন সফল হলে ইউরোপ জুড়ে আরো দুর্ভোগ নেমে আসবে এবং বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ পরিণতি দেখা দেবে। তাই আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে প্রস্ত্তত হতে হবে এবং ইউক্রেনে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। রাশিয়াকে গোটা ইউক্রেন থেকে বের করে দিতে হবে। এজন্য আমাদের আরো কাজ করতে হবে, আরো বেশি চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
যুদ্ধকে অযৌক্তিক বললেন জাতিসংঘ মহাসচিব
মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে পৌঁছে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্টোনিও গুতেরেস বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে বৈঠক কার্যকরী হয়েছে, তবে যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্ত রাশিয়াকেই নিতে হবে।
এদিকে ব্রহস্পতিবার কিইভের চারপাশে যুদ্ধবিধ্বস্ত জায়গাগুলো ঘুরে দেখেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস। এ সময় তিনি এমন যুদ্ধ ‘অযৌক্তিক এবং অশুভ’ বলে মন্তব্য করেন। গুতেরেস বলেন, আমি যখন বিধ্বস্ত ভবন দেখছি, সেই বিধ্বস্ত বাড়িতে আমি আমার পরিবারকে কল্পনা করলাম, সব অন্ধকার। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এমন যুদ্ধ অযৌক্তিক। এই যুদ্ধ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে রুশ যুদ্ধ দুই মাস পেরিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে রুশ হামলায় পাঁচ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে ৫০ লাখের বেশি মানুষ। রুশ বাহিনী রাজধানী কিয়েভ দখলে ব্যর্থ হয়ে পূর্ব ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছে।
এই যুদ্ধের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন বিশ্বকে দোষারোপ করতে শুরু করেছেন রুশ নেতারা। যার ফলে তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, এমনকি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে। এই অবস্হায় ইউক্রেন যুদ্ধ আরো দেশে ছড়ানোর আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৩৫
আপনার মতামত জানানঃ