ইউক্রেনের বুচা শহরের পর এবার রাশিয়ার দখলে যাওয়া ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মারিউপোলে ৮৫ মিটার দীর্ঘ গণকবরের সন্ধান মিলেছে। এই গণকবরে ২০০ জনের বেশি ইউক্রেনীয়কে সমাহিত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ‘ইন্টারসেপ্ট’ করা একটি অডিও ফাঁস করেছে, যেখানে ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করার জন্য রুশ সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মাক্সার টেকনোলজিস তাদের স্যাটেলাইট চিত্র পর্যালোচনা করে বলেছে, মার্চের শেষ দিক থেকে গণকবরটির পরিসর বাড়তে শুরু করেছিল।
ইউক্রেনের স্থানীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেন, রাশিয়ার সেনাদের হাতে নিহত মারিউপোলের বাসিন্দাদের এই গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে। তবে মস্কো এ বিষয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।
গণকবরটি মারিউপোল শহরের প্রায় ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে মানহুশ নামক একটি গ্রামের কাছে। মাক্সার বলছে, গণকবরটিতে চারটি ভাগে সারিবদ্ধ কবর আছে, যা প্রায় ৮৫ মিটার দীর্ঘ। তবে বিবিসি স্যাটেলাইটের এই ছবিগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এর আগে এক বিবৃতিতে মারিউপোলের সিটি কাউন্সিল অভিযোগ করেছিল, রুশ বাহিনী ওই একই জায়গায় বেসামরিক নাগরিকদের কবর দিচ্ছে।
তারা বলেছিল, রুশ বাহিনী পরিখা খনন করছে, মরদেহ নিয়ে যেতে লরি ব্যবহার করছে। আকাশ থেকে নেয়া নিজস্ব একটি ছবিও প্রকাশ করেছিল সিটি কাউন্সিল। তারা বলেছিল, পাশের সমাধিক্ষেত্রের চেয়ে গণকবরটি ইতোমধ্যেই দ্বিগুণ বড় হয়ে গেছে।
সিটি মেয়র ভাদিম বোইচেঙ্কো বলেছেন, মারিউপোলে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়ে থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন ও এর পশ্চিমা মিত্রদের ব্যাপকহারে বেসামরিক নাগরিক হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া।
কয়েক সপ্তাহের বোমাবর্ষণ ও লড়াইয়ের পর মারিউপোলের অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনারা। তবে সেখানকার আজভস্তাইল ইস্পাত কারখানায় কিছু ইউক্রেনীয় সেনা এখনও অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেখানে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরিবর্তে সেনাদেরকে কারখানাটি অবরুদ্ধ করে রাখতে বলেছেন।
গণকবরের স্যাটেলাইট চিত্র
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি মহাকাশপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাক্সার টেকনোলজিস আকাশ থেকে তোলা একটি ছবি প্রকাশ করে বলেছে, রাশিয়ার সেনারা ঐ শহরের বহু মানুষকে নিকটবর্তী একটি গ্রামে গণকবর দিয়েছে। এই গণকবর প্রায় ৮৫ মিটার দীর্ঘ। সেখানে কমপক্ষে ২০০ জনকে সমাহিত করা হয়েছে।
স্যাটেলাইট চিত্র পর্যালোচনা করে মাক্সার বলছে, মার্চের শেষদিক থেকে কবরস্থানটি বিস্তৃত হচ্ছিল। সারিবদ্ধ কবরের চারটি ভাগ রয়েছে। রুশ বাহিনী ঐ একই জায়গায় বেসামরিক নাগরিকদের সমাহিত করছে বলে এর আগে এক বিবৃতিতে সিটি কাউন্সিল অভিযোগ করেছিল।
মারিউপোলের মেয়র ভাদিম বয়চেঙ্কো রুশ সেনাদের অভিযুক্ত করে বলেন, গণকবর দিয়ে তারা যুদ্ধাপরাধ লুকিয়ে রেখেছে। তিনি রুশ যুদ্ধাপরাধকে নাৎসি গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি মস্কো।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে মারিউপোল শহর দখলের চেষ্টা শুরু করে রুশ বাহিনী। কয়েক সপ্তাহের বোমাবর্ষণ ও লড়াইয়ের পর শহরটির অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় রুশ সেনারা। এখনো অ্যাভস্টাল ইস্পাত কারখানা এলাকায় কিছু ইউক্রেনীয় সেনা ও বেসামরিক মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।
এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার এই মারিউপোল শহর দখলের দাবি করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ঐ শিল্প এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখতে বলেছেন যাতে একটি মাছিও বের হতে না পারে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউক্রেনে রুশ যুদ্ধাপরাধের বিভিন্ন প্রমাণ প্রকাশ হতে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, রুশ সেনারা ধর্ষণকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। মস্কো ও কিয়েভকে আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের হত্যার নির্দেশ রাশিয়ার: অডিও ফাঁস
যুদ্ধবন্দিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন মেনে আচরণ করছে না রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ইন্টারসেপ্ট করা রুশ সেনাদের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড অনুযায়ী, ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দিদের হত্যার জন্য রুশ সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, লুহানস্ক অঞ্চলের পপাসনা শহরের ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের হত্যা করতে বলা হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। এর আগে ইউক্রেনের সিকিউরিটি সার্ভিস একটি রুশ সেনাদের কথোপকথন প্রকাশ করে।
তাতে অ্যাভস্টাল স্টিল কারখানা মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে রুশ পরিকল্পনার কথা জানা যায়। ঐ কারখানায় ২ হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা ঘাঁটি গেড়ে আছে।
ডানবাস ও দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পরিকল্পনা রাশিয়ার
এর আগে রুশ সেনাবাহিনী জানিয়েছিল যে, ইউক্রেনে তাদের হামলার মূল লক্ষ্য ডনবাস অঞ্চল দখল করা। এবার তারা বলেছে, ডনবাস অঞ্চলের পাশাপাশি ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
গতকাল রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর এক ডেপুটি কমান্ডার বলেন, সামরিক অভিযানের দ্বিতীয় পর্যায়ে ডনবাস এবং ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চল পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া। তবে পরিকল্পনার বিস্তারিত জানাননি তিনি।
ইতিমধ্যে ডনবাসের লুহানস্ক এবং দোনেত্স্কে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া। রুস্তম মিনেকায়েভ নামের ঐ সেনা কমান্ডার বলেন, ডনবাস অঞ্চল দখল হলে মস্কোর সঙ্গে ক্রিমিয়ার একটি স্থল সেতুবন্ধ হবে।
২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয় রাশিয়া।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৪৫
আপনার মতামত জানানঃ