আবু হেনা মুহিব : বাংলাদেশের রফতানি খাত বলতে সাধারণত তৈরি পোশাক, চামড়া, পাট, হিমায়িত খাদ্যসহ হাতে গোনা কয়েকটি পণ্যের নামই আসে। এর বাইরে অনেক পণ্য আছে, যেগুলো আলোচনায় আসে না বললেই চলে। এসব পণ্যের একটি অংশ বেশ বিচিত্র। অনেকেই হয়তো জানেন না, মানুষের চুলও রফতানি হয়। রফতানি হয় নারকেলের ছোবড়া। এমনকি পাখির পালক, পশুর নাড়িভুঁড়িও যাচ্ছে বিদেশে। এগুলো থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ কম নয়।
সাধারণভাবে এসব পণ্যকে অপ্রচলিত বলা হলেও সরকারি সংজ্ঞায় প্রচলিত বা অপ্রচলিত পণ্য নির্ধারিত হয়েছে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের ভিত্তিতে। যেমন- সরকারি সংজ্ঞা এবং মানদণ্ডে পোশাকের ওভেন শ্রেণি অপ্রচলিত ধারার মধ্যেই পড়ে। অথচ তামাক কিংবা মসলার মতো রফতানি তালিকার অনুল্লেখ্য অনেক পণ্যের তকমা প্রচলিত পণ্যের। রফতানি প্রক্রিয়ায় একটি আন্তর্জাতিক হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোড অনুসরণ করতে হয়। এইচএস কোড অনুযায়ী দেশে ছোট-বড় অন্তত সাড়ে সাত হাজার পণ্য আছে। এর বড় অংশই বৈচিত্র্যপূর্ণ, অন্তত সংখ্যায়।
বর্তমান রফতানি নীতিতে প্রচলিত পণ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যেসব পণ্য দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আহরিত বা উৎপন্ন এবং কাঁচামালের জোগান স্থানীয় উৎস থেকে সেসব পণ্য প্রচলিত রফতানি পণ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের পণ্যের মানদণ্ডে বলা হয়েছে, উৎপন্ন অথবা মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৭০ শতাংশ বা বেশি হতে হবে। এছাড়া দেশের আবহাওয়া, সংস্কৃতি ঐতিহ্য ও গোষ্ঠীগত ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে।
নিরবচ্ছিন্ন রফতানি আয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রফতানি অবদান থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। সংজ্ঞার এই মানদণ্ডে দেশের প্রধান প্রচলিত পণ্য কাঁচাপাট, পাটপণ্য, চামড়া, পোশাকের নিট পণ্যসহ প্রায় ২০টি। অন্যদিকে অপ্রচলিত পণ্যের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, রফতানির পরিমাণ অধিক হলেও যে সব পণ্যের মূল্য সংযোজন ৭০ শতাংশের নিচে বা মূল কাঁচামাল দেশীয় উৎস থেকে আহরিত হয় না, সেসব পণ্যকে অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
যে সব পণ্যের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন ও রফতানি যথেষ্ট মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়নি এসব পণ্যকে ‘বিশেষ উন্নয়নমূলক খাত’-এর পণ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে রফতানি নীতিতে। পাপড়, লুঙ্গি, নারকেলের ছোবড়া, আগর, কাজুবাদাম, কাঁকড়াসহ ১৯টি পণ্য রয়েছে বিশেষ উন্নয়নমূলক খাতের তালিকায়। এসব পণ্যকে নানাভাবে সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে চলতি রফতানি নীতিতে।
এর বাইরে বৈচিত্র্যপূর্ণ আরো অনেক পণ্য আছে বাংলাদেশের রফতানি ঝুড়িতে। যেমন- জ্যান্ত ঘোড়া-গাধা, বানর, জ্যান্ত কুঁচিয়া, কাঁকড়া, পাখির পালক, পশুর নাড়িভুঁড়ি, হাড় এবং শিং, ম্যানহোলের ঢাকনা, গাছের মূল, চালের খুদ, টুপি, আগর, ছাই, বাঁশ, ভোদকা, হুইস্কি, বিয়ার, মানব রক্তসহ বিভিন্ন পশুর রক্ত ইত্যাদি বাংলাদেশ থেকে রফতানি হচ্ছে। এয়ার ক্রাফটের পার্টস, মানব চুল, খৈল, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, হাতে তৈরি কাগজ, নিউজপ্রিন্ট, কৃত্রিম ও প্রাকৃতিক মুক্তা, হীরাসহ হরেক রকম পণ্য অল্প-স্বল্প করে হলেও রফতানি হচ্ছে।
এসব পণ্যের বেশির ভাগেরই উদ্যোক্তারা সংগঠিত নন। কিছু পণ্য আছে যার রফতানি নামকাওয়াস্তে। কয়েকটি পণ্য সরকারের নগদ সহায়তা পায়। তবে বেশিরভাগ পণ্যের রফতানি উৎসাহিত করতে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। পরিমাণে বেশি বিবেচনায় তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্য মৌলিক পণ্যই রফতানি এবং এ-সংক্রান্ত আলোচনায় স্থান পায়। কিন্তু স্বল্প আয়ের রফতানি পণ্যগুলোকে সহযোগিতায় সরকারের মনোযোগ কম।
রফতানি নীতিতে পণ্যের শ্রেণিবিন্যাসে বলা আছে, উৎপাদন ও সরবরাহ স্তর, সম্ভাবনা, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও দেশে আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখা, এসব বিবেচনায় কিছু কিছু পণ্যকে ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত’ এবং কিছু পণ্যকে ‘বিশেষ উন্নয়নমূলক খাত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রফতানিতে বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু সেই সম্ভাবনা এখনও কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি, সহযোগিতা দেওয়া হলে রফতানি বাড়তে পারে, এমন পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তৈরি পোশাক, ডেনিমসহ ১৩টি পণ্য রয়েছে এ তালিকায়।
এসডাব্লিউ/এএইচএম/আরা/১৫১০
আপনার মতামত জানানঃ