আমদানিকৃত পণ্য ছাড়ের ক্ষেত্রে ভারত সরকার সম্প্রতি নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার জেরে ভারতে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সে দেশের পণ্য খালাসের নতুন এই নীতি নিয়ে সাফটার বৈঠকে আলোচনার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে চিঠিও পাঠিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ভারতের দিক থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ভারত বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র হয়েও কীভাবে এমন পদক্ষেপ নিল!
এতদিন বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি হওয়া পণ্যে শুল্ক মুক্ত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব অরিজিন বা উৎস সনদ ইস্যু করত রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। পণ্য ছাড় করার ক্ষেত্রে এ বিষয়ে যাচাই বাছাইয়ের দরকার হলে ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষ ইপিবির সহায়তা নিত। গত সেপ্টেম্বরে ভারত নতুন নিয়ম জারি করেছে, যেখানে ইপিবির সনদ প্রযোজ্য হবে না। এতে করে বাংলাদেশের রফতানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, ইপিবির কর্মকর্তা ও রফতানিকারকরা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশর সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলছে। রফতানির তুলনায় ভারত থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ প্রায় ৮ গুণ। রফতানিকারকরা বলছেন, ওয়ার্ক পারমিট না দেয়াসহ ভারতে নানা রকম অসহযোগিতায় রফতানি প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। এ অবস্থায় বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে বাধা সৃষ্টি হলে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে।
অনেক বিশেষজ্ঞ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিকে দুশ্চিন্তার বিষয় মনে করেন। সড়ক, নৌ, সমুদ্র পথে সহজলভ্য যোগাযোগে ভর করে ভারত-বাংলাদেশের দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ছে। গেল অর্থবছরে ৯৭৫ কোটি ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি মাত্র ১১০ কোটির মত। ভারতে রফতানির প্রসঙ্গ উঠলে প্রায়ই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অশুল্ক বাধা নিয়ে অভিযোগ করেন। বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং ডিউটি ও কাউন্টারভেইলিং ডিউটি আরোপ করে রেখেছে দেশটি। এসবের প্রভাব ক্ষতিকর। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভারতীয় পণ্যের আমদানির বিকল্প স্থানীয় খাতগুলোকে আরো শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক লেনদেনে নানা ধরনের সংকট সামনে এসেছে। পরপর দুই বছর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। কোনো পূর্বঘোষণা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় বাংলাদেশের মানুষ ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে। এতে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। বাংলাদেশে তাই ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য লেনদেনে নেতিবাচক জনমত সৃষ্টি হয়েছে। এখন বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে বাধা সৃষ্টির ঘটনা সামনে আসায় মানুষের ক্ষোভ আরো বাড়ছে।
বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ভারতে রাজ্য ট্যাক্স নামে এবং বিভিন্ন নামে কিছু ট্যাক্স আমাদের দিতে হয়। এছাড়াও ভারতের আমদানিকারকদের টাকা না দেওয়ার যে অভ্যাস, এটা আমাদের শঙ্কিত করে তুলেছে। আবার প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা বলেন, যদি বিজনেস প্রসারিত হতে হয়, সেখানে কিন্তু ফ্রি মুভমেন্ট লাগবে। কিন্তু ভারতে আমাদের মানুষ কাজের সুবিধা পায় না। আমরা বিজনেস ভিসায় যাচ্ছি, শর্টটাইম ট্যুর করে চলে আসছি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ সাফটার আওতায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে থাকে। এ জন্য চিঠি দিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের নতুন কাস্টমস রুলস নিয়ে সাফটার বৈঠকে আলোচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাফটার মতো বহুপাক্ষিক চুক্তির আওতায় দেওয়া সুবিধা জাতীয়ভাবে প্রণীত কোনো বিধির মাধ্যমে ব্যাহত করা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ।
মিই/আরা/১৫৫০
আপনার মতামত জানানঃ