মারিউপলে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ। যার জেরে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছে। সূত্র মতে, এ বিষয়ে আমেরিকা এবং যুক্তরাজ্য তদন্ত শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে ইউক্রেনের সাংসদ ইভান্না ক্লিমপুশ দাবি করেছেন, মারিউপলে এক অজানা রাসায়নিকের সন্ধান মিলেছে। বাতাসের সঙ্গে ওই রাসায়নিক মেশার ফলে মানুষের শ্বাস নিতে অসুবিধা হচ্ছে। রীতিমতো শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। চলাফেরা করতেও সমস্যা হচ্ছে। রাশিয়া ওই রাসায়নিক ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠছে।
ইউক্রেনের এই দাবির পরে পেন্টাগন জানিয়েছে, তাদের কাছে এবিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে আগেই তারা রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে বলে সতর্ক করেছিল।
মারিউপলে রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে কি না, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে আমেরিকা।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিবও জানিয়েছেন, অন্যদের সঙ্গে তারাও এবিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে। তার বক্তব্য, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকলে তার সমস্ত দায় ভ্লাদিমির পুটিন এবং তার প্রশাসনকে নিতে হবে।
এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও সোমবার সন্ধ্যায় দাবি করেছেন, রাশিয়া সম্ভবত রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে নিশ্চিত করে তিনি কিছু বলেননি।
মারিউপোলের মেয়রও ইন্সটাগ্রাম চ্যানেলে দাবি করেন যে রাসায়নিক অস্ত্র দিয়ে হামলার যে অভিযোগ উঠেছে, তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। বিস্তারিত তথ্য জানতে পারলেই সেই সম্পর্কে জানানো হবে।
এর আগে মানবিক করিডরের মাধ্যমে মারিউপোলে আটকে থাকা বাসিন্দাদের উদ্ধার করে আনার সময়ও রাশিয়ান বাহিনী অতি শক্তিশালী বোমাবর্ষণ করে। ওই ঘটনায় বহু মানুষের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল।
এর মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছে বোরোদিয়াঙ্কায় সাতটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। উদ্ধারকারীরা গোটা অঞ্চলে তল্লাশি চালাচ্ছে। কারণ এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ। বোমার আঘাতে একটি বাড়ি ভেঙে পড়েছিল।
তারই ধ্বংসাবশেষ থেকে সাতটি দেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কিয়েভের শহরতলির বহু জায়গা থেকেই দেহ উদ্ধার হচ্ছে বলে প্রশাসন দাবি করেছে।
জাতিসংঘে শিশু সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে ইউনিসেফ। তারা জানিয়েছে, দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশু ঘরছাড়া। ইউক্রেনে সব মিলিয়ে সাত দশমিক পাঁচ মিলিয়ন শিশু আছে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশ শিশু দেশের বাইরে বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে বাস করছে।
যুদ্ধের ফলে তারা ঘরছাড়া। স্কুল, পড়াশোনা সব বন্ধ তাদের। ইউনিসেফের বক্তব্য, এর মধ্যে বহু শিশু তাদের পরিবার হারিয়েছে। কারও পরিবার আদৌ বেঁচে আছে কি না, তারা জানে না। এক অদ্ভুত আঁধারে বাস করছে ওই শিশুরা।
সাম্প্রতিক পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো কড়া অবস্থান নিয়েছে জাপান। ভ্লাদিমির পুটিন-সহ তার গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জাপান জানিয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে রাশিয়ার থেকে কয়লা নেয়া অনেক কমিয়ে দেবে জাপান। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জাপান।
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই আশঙ্কা করা হয়েছিল পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের। এবার অন্য অস্ত্র ব্যবহারের আশঙ্কাও প্রকাশ করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি।
গতকাল সোমবারই তিনি দাবি করেন, যুদ্ধে জেতার জন্য রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্রও ব্যবহার করতে পারে। যাতে তারা এই অস্ত্র ব্যবহারের কথা চিন্তাভাবনাও না করে, তার জন্য পশ্চিমী দেশগুলিকে রাশিয়ার উপরে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়ার অনুরোধও করেন তিনি।
কিয়েভ, বুচা, ইরপিনের মতো শহর থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার করলেও, ইউক্রেনের বন্দর শহর মারিউপোল ছাড়তে নারাজ তারা। এখনও অবধি ওই শহরকে দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী।
এরইমধ্যে গত সোমবার অসমর্থিত সূত্রে শোনা যায়, মারিউপোল দখল করতে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই খবর পাওয়ার পরই রাতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি আমরা”। যদিও সত্যিই রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানাননি।
এসডব্লিউ/এসএস/১২২০
আপনার মতামত জানানঃ