ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রায় ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রসংগঠনটির একটি অংশ। সে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখার দাবিতে গতকাল সোমবার(২৮ মার্চ) ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে ওই অংশটি। বিক্ষোভ থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুরের ভিডিও করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংবাদিককে মারধর করেন ছাত্রলীগের ওই নেতা–কর্মীরা। এসময় ওই সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেয়া হয়।
সোমবার(২৮ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামসংলগ্ন নিরাপত্তা শাখার সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত সাংবাদিকের নাম আবদুল্লাহ ওমর আসিফ। তিনি ময়মনসিংহ লাইভ অনলাইন পোর্টালের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানা যায়, স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রায় ছাত্রী লাঞ্ছিত হওয়ার সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে বিক্ষোভ করে বাকৃবির হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, ফজলুল হক হল, শামসুল হক হল ও ঈশা খাঁ হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিরাপত্তা শাখার দুই পাশের রাস্তা বন্ধ করে দেন। ওই সময় একটি প্রাইভেটকার এলে চালক ও আরোহীদের মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যায়ের প্রতিবেদক ওমর ভিডিও করতে গেলে শামসুল হক হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহীন সুমনসহ কয়েকজন মিলে তাকে বেধরক মারধর করেন। মারধরের একপর্যায়ে তার মোবাইল ছিনিয়ে নেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
এ সময় ঘটনাস্থলে বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আবু হাদী নূর আলী খান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন, সহকারী প্রক্টর ড. মো. শফিকুল ইসলাম ও ড. মো. রিজওয়ানুল হক উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাঙচুরের সময় সাংবাদিক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম। এমন সময় একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমার ওপর হামলা করে। আমি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই ও সুষ্ঠু বিচার চাই।
এ বিষয়ে আহত সাংবাদিক ওমর আসিফ বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাঙচুরের সময় সাংবাদিক হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করছিলাম। এমন সময় একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আমার ওপর হামলা করে। আমি এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাই ও সুষ্ঠু বিচার চাই।
বিষয়টি অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা শাহীন সুমন বলেন, আমি আন্দোলনে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু কাউকে মারধর করিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, এ ঘটনায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পাশাপাশি ভিন্নমতের ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তারা। ছাত্রলীগ নেতাদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার কারণেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দলীয় প্রভাব খাটিয়েই ছাত্রলীগ নেতারা এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সরকার দলীয় বিধায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে কেউ সাহস করে না। এমনকি প্রশাসনও কোনো ভূমিকা নিতে পারে না। এসবের শাস্তি নিরূপণ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন, হয়রানি ও আক্রমণের বেড়ে যাওয়ায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এ পেশার অনেকেই। আইনের দীর্ঘসূত্রিতা, জটিল বিচারিক প্রক্রিয়া সেইসঙ্গে রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান পক্ষ থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা না থাকার কারণে সাংবাদিক নির্যাতন ও সহিংসতা থামানো যাচ্ছেনা। সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় কোন প্ল্যাটফর্ম না থাকায় এই পেশা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
তারা বলেন, সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হলেও সেগুলো আদালতে নিতে চান না। কেননা মামলা করতে গেলে প্রতিষ্ঠান থেকে যে সাপোর্ট লাগে বা অর্থনৈতিকভাবে যে সাপোর্ট লাগে, সেটা তাদের সবার থাকেনা। এ অবস্থায় বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে যায়। বাংলাদেশের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও রাষ্ট্রীয় সামাজিকভাবে সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়নি বলে জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১৮
আপনার মতামত জানানঃ