একমাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে চলছে রাশিয়ার সামরিক অভিযান। এই সময়ে সামরিক, বেসামরিক অবকাঠামোর পাশাপাশি হাসপাতালও পরিণত হয়েছে রুশ সেনাদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে। এমনকি সাধারণ মানুষের পাশাপাশি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন পেশাগত দায়িত্বপালনে নিয়োজিত সাংবাদিকরাও।
ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ১২ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১০ জন। ইউক্রেনের চিফ প্রসিকিউটর ইরিনা ভেনেদিকতোভার বরাত দিয়ে আজ রবিবার আল-জাজিরা ও প্রাভদা এ কথা জানিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইরিনা বলেন, নিহত বিদেশি সাংবাদিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড ও রাশিয়ার নাগরিক রয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাংবাদিক রয়েছেন।
ইউক্রেনের চিফ প্রসিকিউটর বলেন, যুদ্ধের সত্য উদঘাটন ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রাণঘাতী। এ যুদ্ধে ইতিমধ্যে ১২ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। অবশ্য নিহত এসব সাংবাদিক কোথায় এবং কিভাবে প্রাণ হারিয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি ইরিনা ভেনেডিক্টোভা।
জানা যায়, তারা রুশ ফেডারেশন যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করেছে কিনা সেই তথ্য সংগ্রহ করছিলেন এবং হামলার শিকার হন। যুদ্ধে আরও ১০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
পাশাপাশি টিভি টাওয়ার এবং টিভি ও রেডিও স্টেশনে গোলাবর্ষণ, ধ্বংস অথবা ক্ষতিগ্রস্ত করার কমপক্ষে সাতটি ঘটনা নথিবদ্ধ করার কথা জানিয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ ইনস্টিটিউট অব মাস মিডিয়ার সহযোগিতায় প্রসিকিউটর কার্যালয় পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান চিফ প্রসিকিউটর ইরিনা।
পুরোদমে যুদ্ধ শুরুর পর সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ১৪৮টি অবৈধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে জানানো হয়।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংগঠন প্রেস এমব্লাম ক্যাম্পেইন (পিইসি) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, বর্তমানে তিন হাজার বিদেশি সাংবাদিক ইউক্রেনে কাজ করছেন। সাধারণত তাদের অনেকেই এ ধরনের সহিংস পরিস্থিতিতে কাজ করতে প্রস্তুত নন।
কয়েক দিন আগে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচারমাধ্যম ফক্স নিউজের ক্যামেরাম্যান পিয়েরে জাকর্জেভস্কি নিহত হন বলে জানায় বিবিসি। একই ঘটনায় তার সহকর্মী বেঞ্জামিন হল আহত হন।
এর আগে ইরপিনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ব্রেন্ট রেনড (৫২) নিহত হন। ইরপিন শহরের কাছে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ব্রেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের পিবডি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক ছিলেন।
দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস বলছে, হামলায় ব্রেন্টের সঙ্গে হুয়ান আরেডন্ডো নামে একজন মার্কিন ফটো সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
বিদেশি সাংবাদিকদের মধ্যে সর্বশেষ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে গোলাবর্ষণে রুশ নারী সাংবাদিক ওকসানা বাউলিনা নিহত হন। হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞের ভিডিও ধারণ করার সময় গোলার আঘাতে নিহত হন তিনি। রাশিয়ার একটি স্বতন্ত্র সংবাদমাধ্যমে কর্মরত ছিলেন ওকসানা।
উল্লেখ্য, পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ২০০৮ সাল থেকে আবেদন করে ইউক্রেন। মূলত, এ নিয়েই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তবে সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে।
ন্যাটোর সদস্যপদের আবেদন প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করতে যুদ্ধ শুরুর দুই মাস আগ থেকেই ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রাখে মস্কো। কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে না আসায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া।
ঠিক তার দুদিন পর ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে।
এ দিকে চলমান এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে ইউক্রেন ছেড়েছেন প্রায় ৩৯ লাখ মানুষ। যুদ্ধে ইউক্রেনের ১৩শ’ সেনা এবং রাশিয়ার ১৬ হাজার ৪০০ সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। তবে রাশিয়া বলছে, যুদ্ধে তাদের ১ হাজার ৩৫১ সেনা নিহত এবং ইউক্রেনের আড়াই হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘ জানিয়েছে, রুশ অভিযানে ইউক্রেনের এক হাজার ৮০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬০৫
আপনার মতামত জানানঃ