এতদিন বলা হত, করোনার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে মানুষের শ্বাসযন্ত্রে। কারণ এই ভাইরাস মূলত ফুসফুসেই আঘাত হানে। সেকারণেই সম্ভবত, সর্দি-জ্বর-শ্বাসকষ্ট বা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে নিউমোনিয়ার উপসর্গকেই কোভিডের প্রাথমিক লক্ষণ বলে ধরে নেওয়া হত। কিন্তু এবার সামনে এল আরও হাড় হিম করা তথ্য।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিদ্যা বিভাগের বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাদের প্রতিবেদন ছাড়াও অন্য বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনের ফল একসঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ পত্রিকায়। সেখানে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, করোনার প্রভাবে অকালে মস্তিষ্কের আয়তন কমে যেতে পারে।
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের স্নায়ু এবং মস্তিষ্কে নানান পরিবর্তন আসে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আয়তনে কমতে থাকে মস্তিষ্ক। এই প্রক্রিয়াটির মধ্যে অস্বাভাবিকত্ব নেই। কিন্তু তা যদি সময়ের আগে হয়, তাহলে তা মোটেই ভালো খবর না। এর ফলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এটাই হচ্ছে করোনা সংক্রমণের প্রভাবে। এমনই বলছে গবেষণা।
অস্বাভাবিক সময়ে মস্তিষ্কের আয়তন কমে গেলে মূলত ডিমেনশিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এই বিষয়টির দিকেই খেয়াল রাখতে বলছেন চিকিৎসকরা। যাদের পরিবারে ইতোমধ্যেই এই সমস্যা বা স্নায়ুর সমস্যার ইতিহাস রয়েছে, তাদের মস্তিষ্কের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে করোনা সংক্রমণ থেকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার প্রভাবে কাদের মস্তিষ্ক ছোট হয়ে যাচ্ছে, তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। এমনকি উপসর্গহীন এবং হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি এমন রোগীদের ক্ষেত্রেও মস্তিষ্কের আয়তনও করোনার কারণে কমে যেতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার প্রভাবে কাদের মস্তিষ্ক ছোট হয়ে যাচ্ছে, তা আগে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। এমনকি উপসর্গহীন এবং হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি এমন রোগীদের ক্ষেত্রেও মস্তিষ্কের আয়তনও করোনার কারণে কমে যেতে পারে।
ওয়েবমেড নামক এক স্বাস্থ্য বিষয়ক জার্নালের সমীক্ষা বলছে, করোনা আক্রান্তদের প্রতি সাত জনের এক জনের মস্তিষ্কে অল্প থেকে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে ভাইরাসটি। তাদের নানা ধরনের স্নায়বিক সমস্যা হয়েছে। কেউ গন্ধের বোধ হারিয়েছে ফেলেছেন, কারও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হয়েছে, কেউ কেউ হারিয়ে ফেলেছেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা।
কোভিড সংক্রমণ হলে শরীর রোগপ্রতিরোধ শক্তি দিয়ে তাকে আটকানোর করার চেষ্টা করে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই সেই রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের আক্রান্ত কোষ এবং সুস্থ কোষে পার্থক্য করতে পারে না। ফলে মারতে থাকে অনেক কাজের কোষকেও। তার মধ্যে রয়েছে সুস্থ স্নায়ুকোষও। এর প্রভাব সরাসরি পড়ে মস্তিষ্কে।
দেখা গেছে, কোভিডের কারণে অনেকেরই মস্তিষ্ক ঠিক করে কাজ করতে পারছে না। এমনকি কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও সেই সব সমস্যা ষোলো আনাই রয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাবে ভাবনাচিন্তা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হয় ‘ব্রেন ফগ’।
স্মৃতিশক্তির উপরেও প্রভাব ফেলছে কোভিড। অনেকেরই স্মৃতি কমে যাচ্ছে কোভিড সংক্রমণের ফলে। অনেকেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও কমেছে কোভিডের কারণে। এ ছাড়া স্বাদ-গন্ধের অনুভূতিও দীর্ঘ দিনের জন্য চলে যাচ্ছে অনেকের ক্ষেত্রেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ মস্তিষ্কে কোভিডের প্রভাব। মস্তিষ্কে করোনার প্রভাব এমন ভাবে পড়েছে, কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যক্তিত্বেও বদল এসেছে।
সাধারণত ধীরে ধীরে কোভিডের প্রভাব কাটিয়ে ওঠে মস্তিষ্ক। কিন্তু পাঁচ-ছ’মাস কেটে গেলেও অনেকের ক্ষেত্রেই সমস্যা কাটছে না। সে ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। না হলে পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১২১
আপনার মতামত জানানঃ