ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রেলস্টেশনে উপচেপড়া ভিড়। সবার চোখে-মুখে আতঙ্ক। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পোল্যান্ড সীমান্তে যেতে ঘর ছেড়েছেন হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু।
রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর কিয়েভের বিভিন্ন শহর থেকে প্রাণভয়ে বাড়িঘর ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ। একসঙ্গে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসায় গাড়ি ও বাসের সংকট দেখা দিয়েছে। ন্যুনতম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে অসংখ্য মানুষ পায়ে হেঁটে রেলস্টেশনে ছুটছেন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো বলেছে, ইউক্রেনে রুশ অভিযান শুরু হওয়ার পর ইতিমধ্যে অন্তত ১ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে। চলমান পরিস্থিতির কারণে ইউক্রেনের ৫০ লাখ মানুষ আশপাশের দেশগুলোয় পালিয়ে যেতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে সংস্থাগুলো। খবর বিবিসির।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা বলেছে, রুশ অভিযান শুরুর পর শুধু ২৪ ঘণ্টাতেই ইউক্রেনে প্রায় ৫ লাখ মানুষ ঘরহারা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হয়। এক দিন পরই রাজধানী কিয়েভের উত্তরাঞ্চলে ঢোকে রুশ সেনারা। এ মুহূর্তে তারা এই রাজধানী শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রাশিয়ার সেনাদের ঠেকাতে সেখানে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। সাধারণ বাসিন্দাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার মেশিনগান। এমন অবস্থায় দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে ইউক্রেনের নাগরিকেরা।
পোল্যান্ড, মলদোভা, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইউক্রেনীয় নাগরিকেরা সীমান্ত অতিক্রম করে তাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ছে। পোলিশ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে ৩৫ হাজার মানুষ পোল্যান্ডে ঢুকেছে। সীমান্ত এলাকায় ইউক্রেনীয়রা লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে।
রাশিয়ান আগ্রাসন থেকে পালিয়ে অনেক ইউক্রেনীয় নাগরিক পোল্যান্ডে পাড়ি দেওয়া শুরু করেছে। দেশটির পূর্ব পাশে অবস্থিত পোল্যান্ড সীমান্তে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মানুষ জড়ো হতে শুরু করে।
রোমানিয়া এবং স্লোভাকিয়াসহ ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো অবশ্য জানিয়েছে, তাদের সীমান্তে এখনও শরণার্থীদের তেমন আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। তবে স্থানীয় মিডিয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, পায়ে হেঁটে অনেকেই সীমান্তের দিকে রওনা হয়েছে।
পূর্ব ইউক্রেনের বাসিন্দা আলেকজান্ডার বাজহানভ আজ তার স্ত্রী এবং সন্তানকে নিয়ে পোল্যান্ড সীমান্তে পাড়ি জমিয়েছেন। পেশায় টেকনিক্যাল ম্যানেজার বাজহানভ একজন সহকর্মীর কাছ থেকে প্রথম শোনেন যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এরপরই দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
‘আমার কোনো অনুভূতি নেই। শুধু ভয় পাচ্ছি অনেক, এতটুকুই। আমি স্পেনে গিয়ে বাবার সাথে দেখা করতে চাই। কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা নেই এবং আমি জানি না কীভাবে সেটা করব আমি,’ বলেন তিনি।
পোল্যান্ড কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, তারা ১০ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে। এদিকে জাতিসংঘ আভাস দিয়েছে, আসন্ন দিনগুলোয় শুধু পোল্যান্ডেই প্রায় তিন গুণ ইউক্রেনীয় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে পারে।
জানা গেছে, ইউক্রেনের সঙ্গে ৩৫০ কিলোমিটারের স্থল সীমানা রয়েছে ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডের। গত মাসে দেশটি জানায় তারা ১০ লাখ শরণার্থীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। রোমানিয়ায়ও হাজার হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিতে পারে। এদিকে স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রও একই ধরনের আশঙ্কা করছে।
ইউক্রেনে প্রায় চার কোটি ৪০ লাখ মানুষ বসবাস করে। তবে ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করার পর ১৫ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়।
ইউক্রেনে বিমান হামলায় ২৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত
ইউক্রেনে বিমান হামলায় ২৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাছাড়া এতে ১০২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
এদিকে ইউক্রেনে চলমান হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। ধারণা করা হচ্ছে কিয়েভ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত হামলা চালিয়ে যাবে দেশটি।
জানা গেছে, এরই মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সৈন্যরা। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইটে বলেছে, ‘শত্রুরা’ ওবোলোনে পৌঁছে গেছে। এটি কিয়েভ শহরের কেন্দ্রস্থল, পার্লামেন্ট থেকে মাত্র নয় কিলোমিটার দূরে।
মলোটভ ককটেল বা পেট্রল বোমা তৈরি করে লড়াইয়ে অংশ নিতে স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনের সামরিক অবকাঠামো ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ওপর হামলা শুরু করে রাশিয়া। এরপর কিয়েভের সামরিক স্থাপনাসহ বিভিন্ন জায়গায় তিন দিক থেকে হামলা চালায় মস্কো।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১১০৩
আপনার মতামত জানানঃ