প্রজনন মৌসুমেও সুন্দরবনে মা কাঁকড়া নিধন বন্ধ হচ্ছে না। প্রতি বছরের মতো এবারও বনের বিভিন্ন নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া ধরা হচ্ছে। বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় অসাধু জেলেরা এই নিধন চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার ‘পাস ও পারমিট’ বন্ধ রাখার নির্দেশনা শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিলা কাঁকড়ার প্রধান উৎস সুন্দরবনে রয়েছে প্রায় ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া। প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। কিন্তু এর তোয়াক্কা না করে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনের নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার করছেন অসাধু জেলেরা। আর বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা তাদের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানান, বন বিভাগের কয়েকজন স্টেশন কর্মকর্তা সপ্তাহে দুজন জেলের নৌকাপ্রতি রাজস্বের টাকাসহ ২০০০-২৫০০ টাকা এবং তিনজন জেলের নৌকাপ্রতি ৩০০০-৩৫০০ টাকা নিয়ে মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে কাঁকড়া ধরায় সহযোগিতা করছেন। এছাড়া মাঝেমধ্যে ওই কর্মকর্তারা জেলেদের নৌকা থেকে ইচ্ছামতো কাঁকড়া তুলে নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলেও জেলেদের অভিযোগ।
স্থানীয় একাধিক কাঁকড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন কারণে গত কয়েক মাস কাঁকড়ার দাম মুখ থুবড়ে পড়লেও বর্তমানে তা ব্যাপক বেড়েছে। কাঁকড়ার জাত ও আকারভেদে সর্বনিম্ন ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অধিক লাভের আশায় শত শত স্বার্থান্বেষী জেলে মাছ ধরার অনুমতি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মন মা কাঁকড়া আহরণ করছেন। এতে কাঁকড়ার প্রজননে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শিলা কাঁকড়ার প্রধান উৎস সুন্দরবনে রয়েছে প্রায় ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া। প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। কিন্তু এর তোয়াক্কা না করে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনের নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া শিকার করছেন অসাধু জেলেরা। আর বন বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তা তাদের আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক কাঁকড়া ব্যবসায়ী বলেন, অনেক জেলে প্রকাশ্যে এসব মা কাঁকড়া হ্যাচারির কাঁকড়া বলে বিভিন্ন বাজারের ডিপোতে বিক্রি করছেন জেলেরা। মাঝেমধ্যে অবৈধভাবে ধরা এসব কাঁকড়ার দুই-একটি চালান ধরা পড়লেও কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মা কাঁকড়া নিধন। প্রজননকালে এভাবে মা কাঁকড়া ধরতে থাকলে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক এই মৎস্য সম্পদ অচিরেই বিলুপ্তের আশঙ্কা করছেন এলাকার সচেতন মহল।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. এনামূল হক জানান, ‘আমরা যখন অভিযানে যাই তখন আমাদের সামনে যদি কোনো কাঁকড়া ধরার সরঞ্জাম পড়ে তাহলে সেগুলো জব্দ করে পুড়িয়ে নষ্ট করি। আর জেলেদের ধরতে পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে পাঠাই। প্রজনন মৌসুমের শেষ অবদি পর্যন্ত আমাদের টহল জোরদার থাকবে। এ সময় কাউকে কাঁকড়া ধরতে দেখলেই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুন্দরবনের নদী ও খালে শিকার নিষিদ্ধ প্রজনন মৌসুমের শেষ ভাগে এসে এবার নির্বিচারে রফতানি পণ্য শিলা কাঁকড়া আহরণ চলছে। প্রজনন মৌসুমে শিলা কাঁকড়া আহরণে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বন বিভাগের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহায়তায় বিশ্ববাজারে সুন্দরবনের ডিমওয়ালা শিলা কাঁকড়ার উচ্চমূল্য ও ব্যাপক চাহিদার সুযোগে জেলেরা শিলা কাঁকড়া আহরণ করে চলেছেন। কাঁকড়া আহরণ বন্ধে তেমন প্রচার না থাকা এবং জেলে ও শিকারিদের অতিলোভের কারণে প্রজননের ভরা মৌসুমে কাঁকড়া শিকারের ফলে এবার সুন্দরবন থেকে শিলাসহ অন্য সব প্রজাতির কাঁকড়ার বংশ বিস্তার হুমকির মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশবিদরা।
তারা বলেন, বন বিভাগ কেউই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড এই ম্যানগ্রোভ বনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় মোটেই আন্তরিক নয়। শিকার নিষিদ্ধ সময়ে ডিমওয়ালা অন্য সব প্রজাতির পাশাপাশি রফতানি পণ্য শিলা কাঁকড়া প্রজনন মৌসুমে নির্বিচারে আহরণ করার ফলে কাঁকড়াভাণ্ডার খ্যাত সুন্দরবনে অচিরেই এ কাঁকড়ার বিলুপ্তি ঘটবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বাঁচাতে দ্রুত শিকার নিষিদ্ধ প্রজনন মৌসুমে সব ধরনের কাঁকড়া আহরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে সরকার ও বন বিভাগকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৫১
আপনার মতামত জানানঃ