এক টানা ৮১ দিন হাসপাতালে থাকার পর বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া; তবে তিনি এখনও সুস্থ নন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত থাকার মধ্যে অসুস্থ হয়ে এই দফায় গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন।
এরপর তার লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। তাকে বিদেশ নেওয়ার আবেদনে সরকারের সাড়া না মেলায় বসুন্ধরার বেসরকারি হাসপাতালটিতেই চলে তার চিকিৎসা।
সেখান থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর বাড়ির পথে রওনা হন ৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
হাসপাতাল থেকে কেন বাসায় ফিরলেন?
বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দুই মাস ২১ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তার গুলশানের বাসায় ফিরেছেন।
তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যে হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন, সেখানে কর্মীদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে তারা বাসায় রেখে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মঙ্গলবার তার চিকিৎসক চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, কয়েকটি অস্ত্রোপচারের পর তার শরীরের বড় ধরনের রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা সাময়িকভাবে থামানো গেছে। কিন্তু ভবিষ্যতে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা আছে।
গত বছরের তেরই নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তার শরীরে কয়েক দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়।
গত বছরের ২৮শে নভেম্বর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন। লিভার সিরোসিস এমন একটি রোগ, যার ফলে লিভার বা যকৃৎ তার স্বাভাবিক কাজগুলো, যেমন বিপাক ক্রিয়া, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি, ওষুধ ও রাসায়নিকের শোষণ, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানের ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি করতে পারে না।
লিভার সিরোসিস হলে লিভার বা যকৃতে সূক্ষ্ম সুতার জালের মতো ফাইব্রোসিসের বিস্তার ঘটে। যকৃতে তখন ছোট ছোট দানা বাঁধে। আস্তে আস্তে সেটির বিস্তার ঘটতে থাকে।
ফাইব্রোসিস ছড়িয়ে পড়লে সেখানে আর লিভার নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে পারে না, ফলে লিভার সংকুচিত হয়ে পড়ে।
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস,আর্থ্রাইটিস, ফুসফুস, কিডনি, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন অনেকদিন ধরে।
বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার দাবীতে নানা কর্মসূচী পালন করছে বিএনপি। সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার পরিবার থেকেও আবেদন করা হয়েছে। তবে আইনে সেই সুযোগ নেই বলে সরকার জানিয়েছে।
‘স্থিতিশীল হলেও সুস্থ নয়’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও সুস্থ নয় বলে জানিয়েছেন তার মেডিক্যাল বোর্ড। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার এই কথা জানান।
তিনি বলেন, উনার দুইটা কন্ডিশন। এক নাম্বার, উনি ক্লিনিক্যালি স্টেবল বাট নট কিউর। বাট সি ইজ নট ফ্রি অব ডিজিস। দুই নম্বর হচ্ছে, আমাদের কোভিড পরিস্থিতি, সেকেন্ডারি ইনফেকশন এবং সি ইজ বেরি মার্চ বারগানেবল।
সেজন্য আপাতত উনাকে বাসায় পাঠাচ্ছি। এরপরে যদি কোনো রকম ক্রাসিস হয় উই আর রেডি টু রেসিভিং হার এগেইন ইন হসপিটাল।
খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রসঙ্গ টেনে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যতগুলো পজিবল ট্রিটমেন্ট ছিলো তা আমরা দিয়েছি। আমরা হসপিটালের ডাক্তারদের সাথে, বাইরের কনসালটেন্টের সাথে, অন্যান্য হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করেছি।
আমরা বিদেশে কনসালটেন্টদের সাথে, ইউকে, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার কনসালটেন্টদের সাথে কথা বলেছি। সবারই একই মত যে, আপাতত আমরা কনট্রোল করেছি। বাট সী নিডস টু গো এবরোড ফর হার পারমেন্টে ট্রিটমেন্ট।
কী বলছে আওয়ামী লীগ?
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন শারীরিকভাবে অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সেজন্য মঙ্গলবার বিকেলে তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে যাবেন।
ফলে বিএনপি যে মিথ্যাচার করে সেটি প্রমাণিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
গত মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে টিভি ক্যাবল অপারেটরদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন মন্তব্য করেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়ার সুস্থতায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তিনি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরছেন। এই সংবাদ শুনে আমি স্বস্তি প্রকাশ করছি এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন বাসায় ফিরে যান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যে তার স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি করেছে এবং মিথ্যাচার করেছে, খালেদা জিয়ার সুস্থতার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে তারা। ডাক্তারদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে বলেছে, খালেদা জিয়াকে যদি বিদেশে নেওয়া না হয় তাহলে তার যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
আগেও যখন খালেদা খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তখনো বিএনপি নেতারা একই কথা বলেছিলেন। বিদেশ না নিলে তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়, এবারও একই কথা বলেছিল। বিএনপি যে মিথ্যাচার করে, এটিই প্রমাণিত হয়েছে খালেদা জিয়ার সুস্থ হওয়ার মাধ্যমে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪০০
আপনার মতামত জানানঃ