ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে চার সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার সেনুয়া ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত ওই চার সাংবাদিক হলেন নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডট কমের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি সোহেল রানা, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভীর হাসান তানু, রাইজিং বিডির ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি হিমেল এবং দৈনিক উষার বাণীর জাহিদ হাসান মিলু।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মণ্ডলপাড়ায় উঠান বৈঠককে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোবেল কুমার সিংহ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের আতাউর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সাংবাদিকরা সেই ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে নৌকার প্রার্থীর লোকজন তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন।
এরপর ১০ থেকে ১২ জন তানু ও সোহেলকে বাঁশের লাঠি ও দেশী অস্ত্র দিয়ে মারধর করেন। হিমেল তাদের বাঁচাতে গেলে তাকেও মারা হয়। এ সময় আহত হন জাহিদ। ভাঙচুর করা হয় ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরা ও গাড়ি। পরে স্থানীয়রা তাদের ছাড়িয়ে আনেন।
১০ থেকে ১২ জন তানু ও সোহেলকে বাঁশের লাঠি ও দেশী অস্ত্র দিয়ে মারধর করেন। হিমেল তাদের বাঁচাতে গেলে তাকেও মারা হয়। এ সময় আহত হন জাহিদ। ভাঙচুর করা হয় ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ক্যামেরা ও গাড়ি। পরে স্থানীয়রা তাদের ছাড়িয়ে আনেন।
আহত সাংবাদিক তানভীর হাসান তানু বলেন, সেনুয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মুখোমুখি অবস্থানের খবর পেয়ে আমি ও আমার সহকর্মীরা সেখানে যাই। গিয়ে দেখি আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নোবেল কুমার সিংহের সমর্থকরা গাছের ডাল-পালা ভাঙছেন। আমি ছবি তুলতে গেলে তারা প্রথমে আমার ক্যামেরা কেড়ে নেন। তারপর আমার ওপর ও আমার সহকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। আমি প্রশাসনকে বিষয়টি জানালে তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। পরে এলাকাবাসী আমাদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা চাই।
তবে হামলার কথা অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নোবেল কুমার সিংহ বলেন, আমার লোকজন সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেনি। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের মারধর করেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল অ্যাক্টসহ যেসব আইন হয়েছে, সেগুলো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জন করেছি, তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বিপরীতমুখী ও সাংঘর্ষিক। এগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে সংকুচিত করেছে।’
তারা বলেন, সারা বিশ্ব দেখছে, এই দেশটি সাংবাদিক নিপীড়নকারী দেশ এবং গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে এমন একটি দেশ। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রাষ্ট্রের জন্য, সরকারের জন্য এবং সুশাসনের জন্য দরকার।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মফস্বলের প্রত্যেকটা সাংবাদিক পরিচিত। সবাই সবাইকে চেনে। ওখানে কোন সংবাদ হলে তাকে টার্গেট করা সহজ। ঢাকায় সেটা সম্ভব না। মফস্বলের সাংবাদিক প্রতি মুহুর্তে, প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।মফস্বল সাংবাদিকদের কোনো ধরনেরই নিরাপত্তা নেই৷ আর্থিক বা শারীরিক কেনোটাই না৷ অধিকাংশ সাংবাদিক বেতন পান না আবার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও দুর্বৃত্তদের চাপের মুখে থাকতে হয়। শীঘ্রই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে—এমন আশাও করেছন না বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৩২
আপনার মতামত জানানঃ