মালদ্বীপ নীল জলরাশির মধ্যে জেগে থাকা এক স্বর্গরাজ্য যেন। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশ্বের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে ভারত মহাসাগরীয় এই দ্বীপরাষ্ট্রটি। তবে জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে ক্রমশই ফুরিয়ে আসছে তার আয়ু।
এমনকি বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, খুব বেশি দিন আর হাতে নেই এই দ্বীপরাষ্ট্রটির। চলতি শতকের শেষের দিকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে যেতে পারে মালদ্বীপ।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভূমিপৃষ্ঠের গড় উচ্চতার নিরিখে বিশ্বের সবথেকে নিচু দেশ মালদ্বীপ। ফলত, সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্রমশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
নাসা, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি-সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশ্লেষণ অনুযায়ী ২০৫০ সালের মধ্যেই মালদ্বীপের ৮০ শতাংশ অঞ্চল বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ভূমিক্ষয় এবং পানীয় জলের অভাব তো রয়েছেই।
মালদ্বীপের জাতীয় রেকর্ড বলছে, দেশের ৯৭ শতাংশ অঞ্চলে ফুরিয়ে গেছে ভূগর্ভস্থ জল। পানীয় জলের চাহিদার জন্য প্রায় সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করে থাকতে হয় বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ওপর।
অন্যদিকে দেশের ৯০ শতাংশ দ্বীপই ভয়াবহ ভূমিক্ষয়ের শিকার। সমুদ্রতল থেকে ভূমির ব্যবধান ক্রমশ কমতে থাকার কারণে বেড়েছে বন্যার সম্ভাবনাও।
এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশকেই সমুদ্রের বুকে বিলীন হয়ে যেতে পারে মালদ্বীপের একটা বড়ো অংশ। কিন্তু দ্রুত হারে এই ভূমিক্ষয়ের কারণ কী?
মালদ্বীপের ভূপ্রাকৃতিক গঠন বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, গোটা রাষ্ট্রটিকেই ঘিরে রেখেছে প্রবাল প্রাচীর। সমুদ্রস্রোতের ধাক্কা কিংবা ভূমিক্ষয় থেকে এতদিন প্রবাল প্রাচীরই সুরক্ষা দিয়ে এসেছে মালদ্বীপকে।
বিশ্ব উষ্ণায়নে এই প্রাচীরের ক্ষয়ই বর্তমানে ডেকে আনছে বিপদ। ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাতে ৭০ শতাংশ প্রবাল প্রাচীরই অবলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে মালদ্বীপের বিজ্ঞানীরা বিশেষভাবে জোর দিচ্ছেন এই বিষয়টিতেই। একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে প্রবাল প্রাচীর সংরক্ষণ এবং পুনর্গঠনে।
কারণ, সমুদ্র তীরবর্তী কংক্রিটের দেওয়াল জলতল বৃদ্ধি থেকে সুরক্ষা প্রদান করলেও তা যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। অন্যদিকে তুলনামূলক কম খরচেই অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে প্রবাল প্রাচীর।
এমনকি প্রবালের উপস্থিতি মূল ভূখণ্ডে লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশকেও প্রতিহত করতে পারবে বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কতদিন টিকে থাকতে পারবে প্রবাল?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। কাজেই শুরু হয়েছে বিকল্প সমাধানের অনুসন্ধানও। কোরাল প্রাচীরের থ্রি-ডি প্রিন্ট এবং ভাসমান শহরের প্রস্তাবও উঠে এসেছে একাধিক সম্মেলনে।
দেশের মোট বাজেটের ৫০ শতাংশ উষ্ণায়ন প্রতিরোধ ও জলতল বৃদ্ধির মোকাবিলায় নিয়োগ করেছে মালদ্বীপ প্রশাসন। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট নয়।
২০০৯ সাল থেকেই পশ্চিমাশক্তিগুলির কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়ে আসছে মালদ্বীপ। এখন দেখার, মালদ্বীপের এই সমস্যা সমাধানে আদৌ কতটা এগিয়ে আসে বৈদেশিক শক্তিগুলো।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৪৫
আপনার মতামত জানানঃ