মুষ্টিমেয় কয়েকজন সাংবাদিক পুলিশের সহায়তায় কাশ্মীর প্রেস ক্লাবের কার্যত দখল নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার জেরে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গত শনিবার কাশ্মীর উপত্যকার এ ঘটনাকে অভ্যুত্থান বলা হচ্ছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ভারতের সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়া। খবর এনডিটিভি অনলাইনের।
এডিটরস গিল্ড অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ অন্তর্বর্তী কমিটি ক্লাবটিকে বন্ধ করে দিয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ একে ‘রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছেন।
কোনও আইনি নথি ছাড়াই কীভাবে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ প্রেস ক্লাব চত্বরে প্রবেশ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তারা। অন্যদিকে ওমরের অভিযোগ, সরকারেরর মদতেই ঘটানো হয়েছে গোটা বিষয়টি।
সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদনের কারণে গত শুক্রবার জম্মু ও কাশ্মীর সরকার প্রেসক্লাবের নিবন্ধন স্থগিত করে। এর এক দিন পর শনিবার আগের কমিটিকে সরিয়ে দিয়ে একদল সদস্য প্রেসক্লাবের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে এনডিটিভি বলছে, নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরই অন্তর্বর্তীকালীন অবৈধ কমিটি প্রেসক্লাবটি বন্ধ করে দিয়েছে। সাংবাদিকেরা সেখানে প্রবেশ করতে পারছেন না। অথচ কোভিড মহামারির চূড়ায় যখন অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছিলেন, তখনো ক্লাবটি খোলা ও কার্যক্রম চলেছিল।
দ্য এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া কাশ্মীর প্রেস ক্লাবের ঘটনায় কঠোর সমালোচনা করে রোববার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘১৫ জানুয়ারি সশস্ত্র পুলিশ সদস্যদের সহায়তায় উপত্যকার বৃহত্তম সাংবাদিক সমিতি, কাশ্মীর প্রেস ক্লাবের অফিস এবং ব্যবস্থাপনা যেভাবে একদল সাংবাদিক জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। তাতে এডিটর গিল্ড অফ ইন্ডিয়া হতবাক ও শঙ্কিত।’
কাশ্মীরের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ও বন্ধ হয়ি প্রেস ক্লাবের দরজা। কাশ্মীরে দীর্ঘ সময় যখন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল, তখন এখান থেকেই নিয়মিত কাজ করেছেন সাংবাদিকরা। এডিটরস গিল্ড জানিয়েছে, যে ভাবে সশস্ত্র বাহিনী সরকারি অনুমতিপত্র ছাড়াই প্রেস ক্লাবের দখল নিয়েছে, তা নিন্দার। একই সঙ্গে কাশ্মীরে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার উপর কীভাবে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে তা-ও এতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।
২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ক্লাবটি তাদের নিবন্ধন নবায়ন করে। কিন্তু সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটি প্রেসক্লাবের নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর ১৪ জানুয়ারি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্লাবের নিবন্ধন স্থগিত করার সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এক দিন পর কিছু সদস্য পুলিশের সাহায্য নিয়ে ক্লাবটি দখল করলেন।
এদিকে প্রেস ক্লাবের ১১জন মেম্বার এক্সিকিউটিভ ও ৩০০জন সদস্য রয়েছেন। কিন্ত গত বছর জুলাই মাসে তাদের মেয়াদ শেষ হলেও ফের রেজিস্ট্রেশনের সমস্যার কারণে নতুন কমিটি করা যায়নি। প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী মেহেবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লার দাবি, বিজেপির পলিসির জন্যই সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধের চেষ্টা হচ্ছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংক্রান্ত তাদের সাম্প্রতিক র্যাংকিংয়ে ভারতকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৪২ নম্বরে স্থান দিয়েছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার-এর তরফে মোদিরর বিষয়ে বলা হয়, ‘২০০১ সালে মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই রাজ্যকে খবর এবং তথ্য নিয়ন্ত্রণ করার ল্যাব হিসেবে ব্যবহার করে। এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তা দেশে প্রয়োগ করেন তিনি।’
আরও বলা হয়, ‘তার সবথেকে বড় অস্ত্র হল গণমাধ্যমে নিজের এমন ভাষণ দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া যাতে জাতীয়তাবাদী মনোভাব ছড়িয়ে যায়। খবর ছড়িয়ে দিয়ে বড় বড় শিল্পপতিদের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্ব করেন, যাদের হাতে সংবামাধ্যম রয়েছে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫০
আপনার মতামত জানানঃ