আদিমকালে মানুষ বনবাদাড়ে একাকী ঘুরে বেড়াত, একাকী খাবারের সন্ধান করত এবং টিকে থাকার জন্য একাকী যুদ্ধ করত। এরপর একটা সময় মানুষ টিকে থাকার প্রয়োজনে একাকী জীবনযাত্রার সিস্টেমকে ত্যাগ করে অনেক মানুষের সঙ্গে থাকা শুরু করল এবং সমাজ তৈরি করল। সেই প্রাচীন সমাজ ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে বর্তমান আধুনিক সমাজে রূপ নিল। সেই আধুনিক ও উত্তর-আধুনিক সমাজে পারস্পরিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়াল সোশ্যাল মিডিয়া।
এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে সোশ্যাল মিডিয়া সারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে প্রথমবারের মতো একে অপরের অনেক বেশি কাছে নিয়ে এসেছে। সারা বিশ্বকে লহমায় মানুষের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ এই যোগাযোগকে করেছে সহজ ও সাবলীল। কিন্তু এ তো হালের সময়ের কথা। আশ্চর্যের হল, আজ থেকে প্রায় ৫০ হাজার বছর আগেও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের অস্তিত্ব ছিল। তবে সেটা প্রযুক্তিনির্ভর নয়, ছিল প্রকৃতিকেন্দ্রিক। এর মাধ্যমে হাজার মাইল দূরে থাকা ব্যক্তির সঙ্গেও যোগাযোগ করা যেত! খবর দ্যা গার্ডিয়ান
সম্প্রতি জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য সায়েন্স অব হিউম্যান হিস্ট্রির একদল গবেষক জানান, প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের ৩০টির বেশি জায়গা থেকে দেড় হাজারের বেশি এক ধরনের মালার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
গবেষণায় জানা গিয়েছে, এই সব মালা অস্ট্রিচের ডিমের খোসা থেকে তৈরি হয়েছিল। এগুলিকে মানুষের ব্যবহৃত অন্যতম প্রাচীন অলংকার হিসেবে ধরা হত। তবে ক্রমে জানা যায়, আফ্রিকা জুড়ে সন্ধান পাওয়া এসব মালা শুধু অলংকার নয়, ওই অঞ্চলের মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমও।
উটপাখির ডিমের খোসার তৈরি এসব মালা আফ্রিকার শিকারিরা ব্যবহার করত। এর মাধ্যমে তারা পরস্পরকে সাংকেতিক বার্তা পাঠাতেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখে গবেষকেরা বলছেন, ৫০ হাজার বছর আগেও এসব মালা ব্যবহার করে হাজার মাইল দূরে সাংকেতিক বার্তা পাঠানো হত। যা খুবই বিস্ময়ের!
এখন যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা একে অপরকে বার্তা পাঠাই, ঠিক তেমনি প্রাচীন আমলে এগুলো ব্যবহার করে দূরে থাকা মানুষের কাছে প্রয়োজনীয় সাংকেতিক বার্তা পাঠানো হতো। ওই সময় আফ্রিকার পূর্ব ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম উপায় ছিল এসব মালার আদানপ্রদান।
বিশ্বখ্যাত নেচার জার্নাল এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর দ্য সায়েন্স অব হিউম্যান হিস্ট্রির গবেষক জেনিফার মিলার বলেন, ‘সন্ধান পাওয়া মালাগুলো আমাদের বিশাল এলাকাজুড়ে যোগাযোগ স্থাপনের ইঙ্গিত দেয়। সাংকেতিক এ যোগাযোগব্যবস্থা বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করেছিল।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৮
আপনার মতামত জানানঃ