ব্যবহারকারীদের ওপর নজর রাখায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও গুগলকে ২১ কোটি ইউরো জরিমানা করেছে ফ্রান্স সরকার। ‘কুকিস’ ব্যবহারে এ জরিমানা করা হয়েছে। কারণ, কুকিস ব্যবহারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নানা তথ্যের নজর রাখছিল। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) এ তথ্য জানিয়েছে ফ্রান্স সরকার।
শুধু গুগল কিংবা ফেসবুকই নয়, ইউরোপজুড়ে চাপের মুখে পড়েছে অ্যাপল ও আমাজনের মতো মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও। এর মধ্যেই তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়েছে। এ ছাড়া কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা হবে, তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নানা নীতিমালার জারির পরিকল্পনা চলছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কম্পিউটার বা মুঠোফোন থেকে কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকলে এ-সংক্রান্ত কুকিস ওয়েব ব্রাউজারে সংরক্ষিত হয়ে থাকে। এগুলো গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে বেশ মূল্যবান। কারণ, ব্যবহারকারীদের এসব তথ্যের ভিত্তিতেই বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশাল অঙ্কের মুনাফা কামিয়ে নেয় তারা। তবে এর মধ্য দিয়ে ব্যবহারকারীদের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
নতুন জরিমানার মোট অর্থের মধ্যে শুধু গুগলকে গুনতে হবে ১৫ কোটি ইউরো। ফ্রান্সের ইতিহাসে এর আগে কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে এত জরিমানা করা হয়নি। এর আগে ২০২০ সালে ডিসেম্বরে দেশটির ন্যাশনাল কমিশন ফর ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ফ্রিডম (সিএনআইএল) গুগলকেই সর্বোচ্চ ১০ কোটি ইউরো জরিমানা করেছিল। সেবারও কারণ ছিল কুকিস–সংক্রান্ত।
এদিকে জরিমানার কারণে ফেসবুকের পকেট থেকে খসবে ছয় কোটি ইউরো।
জরিমানা নিয়ে সিএনআইএল বলছে, ফ্রান্সে ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউব ব্যবহারকারীদের কুকিসের ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ রাখেনি। ফলে একপ্রকার বাধ্যতামূলকভাবেই তা চলে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে। ফেসবুক ও গুগলের এই চর্চা থামাতে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এরপরও আগের পথে হাঁটলে তাদের প্রতিদিনের জন্য ১ লাখ ইউরো জরিমানা দিতে হবে।
ফ্রান্সের এমন কড়া পদক্ষেপের পর অবশ্য কুকিস ব্যবহারের চর্চা বদলের ইঙ্গিত দিয়েছে গুগল। এএফপিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের চাওয়া-পাওয়া অনুযায়ী তারা নতুন পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে সিএনআইএলের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করা হবে।
‘কুকিস’ ব্যবহারে এ জরিমানা করা হয়েছে। কারণ, কুকিস ব্যবহারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নানা তথ্যের নজর রাখছিল।
বিশ্বে চলছে সোশ্যাল মিডিয়ার রাজত্ব। যুগের চাহিদায় দিন দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। ফেসবুক ছাড়া এখন ভাবাই অসম্ভব। কী নেই এখানে? চাইলেই সবকিছু মেলে নেট দুনিয়ায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ফেসবুক। ভুয়া তথ্য প্রচার, অশালীন মন্তব্য ও ঘৃণা ছড়ানোর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এ মাধ্যম। এ ছাড়া ফেসবুকের বিরুদ্ধে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদে সমর্থন ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। ইয়াহু ফাইন্যান্সের এ বছরের জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে বাজে কোম্পানি হিসেবে উঠে এসেছে ফেসবুকের নাম।
সম্প্রতি ফেসবুককে গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে অভিযোগ করেছেন সদ্য নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা। এছাড়া ফেসবুকের বিরুদ্ধে ভুয়া খবর ও গুজবকে প্রাধান্য দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
রেসা বলেন, ফেসবুক গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যটি ঘৃণা, ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানো রুখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ফেসবুক তথ্য নিয়ে একেবারেই নিরপেক্ষ নয় বলে অনেকবার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিরপেক্ষতার চেয়ে ঘৃণা, ক্ষোভ এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর উপরই বেশি গুরুত্ব দেয় জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।
এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে দেওয়ায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছর ধরেই ইউরোপে একাধিক অ্যাক্টিভিস্ট সংস্থা ইন্টারনেটে তথ্যসুরক্ষা ও ক্রেতাদের উন্নত অধিকার বিষয়ে লড়াই করছে। ফেসবুক, গুগলের মতো সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে তারা। এমনই এক অভিযোগের তদন্তের ফল ফ্রান্সে সাম্প্রতিক এই ২১ কোটি ইউরোর জরিমানা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪১
আপনার মতামত জানানঃ