১/১১ এর পর দিন যত গেছে বিএনপির সংকট তো কাটেইনি বরং সময়ের সাথে সাথে তা আরো ঘনীভূত হয়েছে। বিএনপি তার ইতিহাসের সবচেয়ে ক্রান্তিলগ্ন পার করছে বর্তমান সময়ে। এই সময় খালেদা জিয়ার ওপর মানসিকভাবে নির্ভর করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকেছেন। তবে এখন খালেদা জিয়ার আজকের পরিণতির জন্য এই দলটিও দায়ী।
সামরিক অভ্যুত্থানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বেগম জিয়া বিএনপিতে যোগ দেন। জিয়া নিহত হওয়ার পর দলে নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়। একই সাথে শুরু হয় নানাবিধ উপদলীয় কোন্দল। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়াকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে স্কুল অব সিকিউরিটি অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিস, আমেরিকান পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেম, পশ্চিম ভার্জিনিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের অধ্যাপক সাঈদ ইফতেখার আহমেদ লিখেছেন, খালেদা জিয়া এমন একটা সময়ে দলের প্রধান হন যখন দেশে সামরিক শাসন চলছে। বিএনপির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেছেন। বিভিন্ন দলছুট রাজনীতিবিদ এবং কিছু সুবিধাবাদী ব্যক্তি নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে গড়ে তোলা এ দলটি জিয়ার অনুপস্থিতিতে টিকে থাকবে কিনা, এ প্রশ্ন তখন বিদগ্ধজনদের মনে।
দলের প্রধান হওয়ার সাথে সাথেই খালেদা জিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ হাজির হয় বিএনপিকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নিয়ে যাওয়া। এরশাদ প্রথমে ভেবেছিলেন, গৃহবধু পটভূমি থেকে উঠে আসা খালেদার পক্ষে বিএনপির মত একটি দলকে নিয়ে, যে দলে সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের একটা উল্লেখযোগ্য অবস্থান রয়েছে; তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করা সম্ভব হবে না।
এ ধরনের একটি দলকে নিয়েই খালেদা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫ দলের সাথে যুগপৎ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সামিল হন। ১৯৮৬ সালে আন্দোলন যখন তুঙ্গে সেই মুহূর্তে হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগ, সিপিবি, ন্যাপ (মো) সহ ১৫ দলীয় জোট থেকে আটটি দল এরশাদ ঘোষিত সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। জামায়াতও সেসময় তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নির্বাচনে অংশ নেয়।
সময়টা তখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ‘শীতল যুদ্ধের’ সময়। জামায়াত তখন জাতীয় রাজনীতিতে সিপিবিকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। ফলে সিপিবি যেহেতু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এ বিবেচনায় এবং সেক্যুলার বামপন্থি দলগুলোর সাথে পাশাপাশি বসার কথা চিন্তা করে জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেয়।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ, সিপিবিকে বাদ দিয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোটের বাকি ছয়টি দল ছিল সাইনবোর্ড সর্বস্ব। এছাড়া খালেদা সাথে পেয়েছিলেন রাশেদ খান মেনন, নির্মল সেনের নেতৃত্বে ১৫ দল থেকে নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে বের হয়ে আসা পাঁচটি ছোট বাম দলকে। কিন্তু এদেরকে নিয়ে খালেদার পক্ষে এককভাবে এরশাদবিরোধী আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
আওয়ামী লীগ, সিপিবিসহ যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা ১৯৮৭ সালে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে মাঠের আন্দোলনে যোগ দিলে আন্দোলনে আবার গতি পায়। এরই ধারবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে সামরিক শাসক এরশাদের পতন ঘটে।
এরশাদ সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ তার চলমান ইতিহাস: জীবনের কিছু সময় কিছু কথা, ১৯৮৩-১৯৯০ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (পৃষ্ঠা ৪৮০-৪৮১), রাষ্ট্রীয় অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে এরশাদ দেশ চালিয়েছেন। আন্দোলন তুঙ্গে উঠলে জেনারেলরা এরশাদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন। ফলে পদত্যাগ করা ছাড়া এরশাদের সামনে আর কোন বিকল্প খোলা ছিল না।
আন্দোলনের শেষ দিনগুলিতেও বিএনপি নেতা ওবায়দুর রহমানসহ ছাত্রদলের কিছু শীর্ষ নেতা এরশাদের দলে ভিড়েন। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী জাতীয় পার্টিতে চলে যাওয়ায় সাংঠনিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপির সামনে এরশাদ পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জ হাজির হয়।
সেসময় অনেকের মাঝে এ ধারণা জন্মেছিল যে বিএনপির পক্ষে বোধহয় নির্বাচনে জয় লাভ করা সম্ভব হবে না। বিএনপির নেতাদের অনেকে নার্ভাস ছিলেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি ১৪০টি আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। এ বিজয় খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ করে দেয়।
খালেদার নেতৃত্বে বিএনপি প্রথম ক্ষমতা কেন্দ্রের বাইরে থেকে রাজনীতির চর্চা করে সামরিক শাসন বিরোধী সফল আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তার নেতৃত্বেই প্রথমবারের মত ক্ষমতার বাইরে থেকে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়। বস্তুত এ দুটি বিষয় জিয়ার পরিচয় ছাপিয়ে নিজস্ব ইমেজে খালেদা জিয়ার নেত্রী ইমেজ নির্মাণ করে।
খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখন বিশ্বে নারী রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান হয়েছেন হাতে গোণা মাত্র কয়েকজন। নারী-পুরুষ সমাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিদার পাশ্চাত্যের অনেক দেশই তাদের রাষ্ট্র পরিচলানা করার জন্য যোগ্য নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারেনি।
বাংলাদেশের মত অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ এবং সামাজিকভাবে অতীব রক্ষণশীল মুসলিম প্রধান দেশে একজন নারীকে সরকার প্রধান হিসেবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তখনো জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশের মাঝে গড়ে উঠেনি। এমনকি খালেদা জিয়া রাজনীতিতে আসার আগে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীকে শেখ হাসিনার দলীয় প্রধান হওয়ার বিষয়টা নিয়ে কটাক্ষ করতে দেখা যেত। ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলো নারী নেতৃত্ব ‘হারাম’ বলে বিএনপির সাথে তখনো জোট বাঁধেনি।
এমতাবস্থায় খালেদা জিয়া সরকার প্রধান হয়ে প্রমাণ করে দেন যে, দরিদ্র মুসলিম প্রধান দেশ হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী নারীকে সরকার প্রধান হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতা অর্জন করেছে—যা তখন পশ্চিমের উদার গণতান্ত্রিক সেক্যুলার রাষ্ট্রের অনেককেই বিস্মিত করে।
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার সামনে রাজনৈতিক নেত্রী থেকে ‘Stateswoman’ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা হাজির হয়। কিন্তু বিষয়টা তিনি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন। শুরুতেই তিনি বিতর্কিত ব্যক্তি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে বিতর্কের জন্ম দেন।
এসময় খালেদা জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা প্রবল আন্দোলনের সম্মুখীন হন এবং এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন। কিন্তু সবচেয়ে বড় ভুলটা তিনি করে বসেন- মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অসম্মতি জানানোর মধ্যে দিয়ে।
১৯৯১ সালে অনেকেই যখন মনে করছিলেন সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না, তখন জনগণের একটা বড় অংশ বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে এসে খালেদাকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্মান এনে দেয়। কিন্তু ক্ষমতায় এসে তিনি সে জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারেননি।
প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকাকে খালেদা ‘Stateswoman’ হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেন। ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ, বামপন্থি এবং জামায়াত যুগপৎভাবে ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে আন্দোলন গড়ে তোলে। আন্দোলনের এক পর্যায়ে যে প্রশাসনের উপর নির্ভর করে তিনি ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন, সে প্রশাসন তার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে, এরশাদের মত তার সরকারের পতন ঘটে। এর মধ্যে দিয়ে তিনি অনেকটা পতিত এরশাদের কাতারে নেমে আসেন।
ক্ষমতা হারানোর পর খালেদা যে সামরিক শাসক এরশাদের অধীনে নির্বাচন না করার জন্য ‘আপসহীন’ খেতাব পান, সেই এরশাদের সাথেই ৪ দলীয় জোট গড়ে তোলেন। এতে যে তার ‘আপসহীন’ ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে সেটা তিনি বিবেচনায় নেননি। যে জামায়াত তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আন্দোলন করেছিল তাদের সাথেও তিনি জোটবদ্ধ হন। পরবর্তীতে অন্যান্য ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলোর সাথেও বিএনপির নৈকট্য বাড়ান।
এর মধ্য দিয়ে ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলোর নৈতিক দেউলিয়াত্ব জনগণের সামনে স্পষ্ট হয়। কেননা যারা এতদিন নারী নেতৃত্ব ‘হারাম’ বলে আসছিলেন, সে-ই তারাই নারী নেত্রীর অধীনে রাজনীতি করতে সম্মত হন। কিন্তু খালেদার ৯/১১ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তবতা বুঝতে পারার ব্যর্থতা থেকে ‘ইসলামপন্থি’ দলগুলো সাথে জোটবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির সাথে পশ্চিমা দুনিয়ার দূরত্ব তৈরি করে। তাইওয়ানের সাথে ব্যবসায়িক সূত্র ধরে দূরত্ব তৈরি হয় বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র চীনের সাথেও।
খালেদা জিয়ার ক্ষমতার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম মেয়াদের তুলনায় দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটে। পুত্র তারেক রহমানকে রাজনীতিতে আনার ফলে দলের মধ্যে সমান্তরাল নেতৃত্ব তৈরি হয়, যা খালেদার নেতৃত্বকে দুর্বল করে। এ সময়কালে ‘ইসলামপন্থি’ সন্ত্রাসবাদের ব্যাপক উত্থান, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা খালেদা এবং বিএনপির রাজনীতিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তদুপরি দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি প্রথম মেয়াদের মত অনেকটা একই ধরনের ভুল করে বসেন।
একটু ভিন্নভাবে দলীয় ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা রেখে নির্বাচন করার উদ্যোগ নেন খালেদা। ফলে তার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত জেনারেল মঈনের নেতৃত্বে ১/১১ এর ঘটনা ঘটে, যার খেসারত বিএনপিকে এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। যে দলকে খালেদা এরশাদ শাসনামলের দুঃসময় থেকে টেনে তুলে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন, জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপ্রকৃতি উপলব্ধি করতে পারার ব্যর্থতার ফলে সে দল বিএনপিকেই তিনি তার ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় অবস্থায় নিপতিত করেন।
সাঈদ ইফতেখার আহমেদ লিখেছেন, এরশাদের হাতে ক্ষমতাচ্যুতি ঘটার পর দলকে টেনে তুলতে পারলেও ১/১১ পরবর্তী সংকট থেকে খালেদা দলকে আর বের করে আনতে পারেননি। ২০১৪ সালের বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের পরে তিনি শেখ হাসিনার মত আন্দোলন করে সরকারের পতন ঘটাতে পারেননি।
অধিকাংশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়ে যাওয়ার পর জামায়াত জোটে নিস্ক্রিয় হয়ে যায়। খালেদা বুঝতে পারেন গণতন্ত্রের জন্য নয়, সুবিধাবাদী জামায়াত বিএনপির জনসমর্থনের শক্তিকে ব্যবহার করেছে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শনাক্ত তাদের দলীয় ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য। জামায়াতের কৌশল বোঝার ব্যর্থতার চরম মাশুল দিতে হয় বিএনপিকে।
সরকারের প্রবল চাপের মুখে পড়ে দল অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় খালেদা চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। অনেকে ভেবেছিলেন তিনি হয়ত আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু খালেদা দেশে ফিরে এসে তার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির মামলার রায় মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি হয়ত ভেবেছিলেন, যে দলের পেছনে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ব্যয় করেছেন, যাকে অবলম্বন করে জিয়া নিহত হওয়ার পর দলটি এত দীর্ঘ পথ চলেছে—সে দলের নেতাকর্মীরা তিনি গ্রেপ্তার হলে আর যাই হোক সর্বস্ব দিয়ে মাঠে নামবেন, তাকে মুক্ত করার জন্য।
এ আত্মবিশ্বাস থেকেই খালেদা দেশে ফিরে আসেন। তিনি হয়ত ধরে নিয়েছিলেন একমাত্র তার গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়েই সরকার বিরোধী আন্দোলন দাঁড়াবে—বিএনপির নেতৃত্বে জনগণ হয়ত তার মুক্তির দাবিতে রাস্তায় নামবে। কিন্তু তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবিতে যে দল এত রক্ত ঝরালো, তার নিজের অতি প্রিয় সেই দল তার মুক্তির জন্য কিছু লোক দেখানো ছাড়া- এক অর্থে কোন আন্দোলনই করল না।
শুধু তাই নয়, তিনি যে সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না বলেছিলেন, তিনি জেলে যেতে না যেতেই বিএনপির নেতারা দলকে সেই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে নিয়ে যায়। এ সমস্ত কিছুই জীবন সায়াহ্নে এসে খালেদার ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
গত ৩৭ বছর ধরে বিএনপির সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে। তাকে আঁকড়ে ধরেই বিএনপি রাজনীতির নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। সেই তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ।
বেশ অনেকদিন ধরে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড কিছুদিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে তিনি লিভার সিরোসিসসহ নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত। খালেদা জিয়াকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার মত প্রযুক্তি বাংলাদেশে না থাকার ফলে তারা তাকে দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অথবা জার্মানিতে পাঠানোর সুপারিশ করেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবল চাপের মুখে থাকা বিএনপি তাদের দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর ইস্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এটিও আরো অনেক উদ্যোগের মতই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। জনগণের বড় অংশকে সম্পৃক্ত করতে পারা তো দূরের কথা, দলটি তার মাঠ পর্যায়ের সব নেতাকর্মীদেরই এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে রাস্তায় নামাতে পারেনি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৪৫
আপনার মতামত জানানঃ