নারী অধিকারের পক্ষে আরো একবার যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন ভারতের গুজরাট হাইকোর্ট। স্বামী তার স্ত্রীকে বৈবাহিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যৌন মিলনে বাধ্য করতে পারবে না। শুক্রবার গুজরাট হাইকোর্ট বিবাহ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ে এমন রায় দিলেন বিচারপতি। বনস্কান্দা জেলার একটি গ্রামের এক মুসলিম দম্পতির মামলায় এ রায় ঘোষণা করেছে গুজরাট হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়, জোর খাটাতে পারেন না তাদের দাম্পত্য সম্পর্কের অধিকার ‘সহবাস’ কায়েম করতেও। এমনকি আদালতের পরোয়ানা দেখিয়েও তা করা যায় না।
সেই সঙ্গে আদালত মনে করিয়ে দিলেন ভারতীয় আইনেই আছে, স্বামী কখনোই স্ত্রীকে যৌন মিলনে বাধ্য করতে পারেন না। এমনকি এর মাধ্যমে বৈবাহিক অধিকারও প্রমাণ করতে পারেন না।
এই মামলার দম্পতিদ্বয়ের ২০১৫ সালে বিয়ে হয়েছিল। এই দম্পতির একটি ছেলেও রয়েছে। ওই নারী পালনপুর সিভিল হাসপাতালে নার্স হিসেবে কাজ করেন। যদিও ২০১৭ সালে ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে মামার বাড়িতে চলে যান বলে অভিযোগ।
মামলাকারী মহিলার অভিযোগ, তার ভাইবোনেরা অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন এবং তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন ও স্বামী তাকে অস্ট্রেলিয়া চলে যেতে বাধ্য করছে। তিনি আরো অভিযোগ করেন যে, তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে অস্ট্রেলিয়া যেতে চায় যাতে তার স্বামীও সে দেশে যেতে পারেন।
বৈবাহিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে পালানপুর পারিবারিক আদালতে মামলা করেছিলেন ওই নারীর স্বামী। আদালত স্ত্রীকে স্বামীর সঙ্গে থাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু পারিবারিক আদালতের রায়কে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন ওই নারী।
বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং নিরাল মেহতার একটি বেঞ্চ মহিলাকে তার স্বামীর সাথে থাকতে এবং বৈবাহিক অধিকার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে পারিবারিক আদালতের আদেশ বাতিল করেছে।
পারিবারিক আদালতের আদেশের বিপরীতে, বেঞ্চ বিভিন্ন রায়ের উল্লেখ করে বলে যে, “একজন মুসলিম পুরুষ এবং একজন মুসলিম মহিলার মধ্যে বিবাহ একটি নাগরিক চুক্তি এবং বৈবাহিক অধিকার পুনরুদ্ধারের দাবি এই চুক্তির অধীনে কনসোর্টিয়ামের (কনসোর্টিয়াম অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রীর সাথে মেলামেশা ও সাহচর্যের অধিকার) অধিকারের একটি অনুশীলন ছাড়া কিছুই নয়।
উল্লেখ্য, হাইকোর্ট সিভিল প্রসিডিউর কোডের আদেশ XXI বিধি ৩২ (১) উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, আইনের বিধানের পিছনে উদ্দেশ্য হল যে কোনও ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যৌন মিলন করতে এবং বৈবাহিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে বাধ্য করতে পারবে না। স্ত্রী সহবাস করতে অস্বীকার করলে, তাকে বৈবাহিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ডিক্রি দ্বারা বাধ্য করা যাবে না।
সিভিল প্রসিডিউর কোড উদ্ধৃত করে আদালত জানান, কোনো ব্যক্তিই কোনো নারী বা নিজের স্ত্রীর ওপর জোর খাটাতে পারেন না। স্ত্রী যদি একসঙ্গে বসবাস করতে না চান তাহলে তাকে কোনো আদালতের নির্দেশও তা করতে বাধ্য করতে পারে না।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৫০
আপনার মতামত জানানঃ