সামান্য একটি ধাক্কা। তাও অসাবধানতাবশত। কিন্তু এ ধাক্কার মাশুল দিতে হলো গৃহবধূর সম্ভ্রম দিয়ে। ফিল্মি স্টাইলে গৃহবধূর স্বামী-সন্তানকে তুলে নিয়ে গেল অন্যত্র। আর গৃহবধূকে আরেক জায়গায় নিয়ে তিনজন মিলে করল ধর্ষণ। এখানেই ক্ষান্ত হয়নি, হোটেলে নিয়ে ইয়াবা সেবনের পর আরো হিংস্র হয়ে ওঠে সেই তিনজন। ধর্ষণ করা হয় ফের।
খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব। বুধবার রাত দেড়টার দিকে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের হোটেল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান।
র্যাব-১৫-এর কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেল থেকে ওই পর্যটককে উদ্ধার করা হয়।
ওই নারীর বরাত দিয়ে কক্সবাজার র্যাব-১৫-এর সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত মঙ্গলবার ঢাকা থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন ওই নারী পর্যটক। ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে। সেখান থেকে বিকালে যান সৈকতের লাবণি পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে ওই যুবকরা। এর পর তাকে নেওয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে আরেক দফা তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা।’
মেজর মেহেদী হাসান আরও বলেন, ‘খবর পেয়ে স্বামী-সন্তান ও ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করি। তদন্ত শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত তিন জনের মধ্যে দুজনকে শনাক্ত করেছি। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। ধর্ষণের শিকার নারী পর্যটককে হাসপাতালের ওয়ান স্টম ক্রাইসিস কক্ষে পাঠানো হয়েছে।’
অভিযোগ তোলা ওই নারী জানান, বুধবার সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে তারা ওঠেন।
সেখান থেকে বিকেলে যান সৈকতের লাবণী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।
এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় তাকে তুলে নেন তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিনজন।
ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘হাতে-পায়ে ধরে আমার স্বামী মাফ চাইছে। কারণ আমার স্বামী অতটা চালাক চতুর না, সরল-সোজা মানুষ। আমার স্বামী কইছে ভাই আমরা অন্য জাইগা থিকা আইছি আমারে মাফ কইরা দেন। এর পাঁচ মিনিট পর একটি সিএনজি নিয়া আইসা তারা আমারে টাইনা উঠায়ে ফেলাইছে। তখন বাস থিকা অনেকগুলা লোক নামছে। দুবার চিৎকার করছি। করার সময় একজন মুখ ধরছে আরেকজন হাত ধরছে, এরপর মুখ বাইন্ধা ফেলছে। পরে ভাঙ্গাচোরা রাস্তা দিয়া চিপাচাপার মধ্য নিয়া গিয়ে তিনজন আমারে রেপ করছে’।
‘হাতে-পায়ে ধরে আমার স্বামী মাফ চাইছে। কারণ আমার স্বামী অতটা চালাক চতুর না, সরল-সোজা মানুষ। আমার স্বামী কইছে ভাই আমরা অন্য জাইগা থিকা আইছি আমারে মাফ কইরা দেন। এর পাঁচ মিনিট পর একটি সিএনজি নিয়া আইসা তারা আমারে টাইনা উঠায়ে ফেলাইছে।
ধর্ষণ শেষে তাকে নেয়া হয় জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে রুম বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা।
ওই নারী আরো জানান, জিয়া গেস্ট ইনের তৃতীয় তলার জানালা দিয়ে এক যুবকের সহায়তায় কক্ষের দরজা খোলেন তিনি। তারপর ফোন দেন জরুরি সহায়তার জন্য নির্ধারিত ৯৯৯ নম্বরে। পুলিশ তাকে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দেয়।
তারপর পাশের একজনের সহযোগিতায় কল দেন র্যাবে। তারা এসে তাকে উদ্ধার করে। তার স্বামী ও সন্তানকে উদ্ধার করা হয় পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে।
ভুক্তভোগীর স্বামী বলেন, ‘সামান্য ধাক্কাধাক্কির কারণে তারা আমার এত বড় ক্ষতি করল। অপরিচিত বলে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গেলেও সে জায়গা ও দুর্বৃত্তদের চিনতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘বারবার হাতে-পায়ে ধরলেও তারা আমার স্ত্রীকে ফেরত দেয়নি। বেড়াতে এসেছিলাম বেতন পাওয়ার খুশিতে। এখন স্ত্রীর অবস্থা ভালো নয়। তাকে নিয়ে চিন্তায় আছি।’
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের এ ঘটনাটি এরই মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। এরই মধ্যে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে হোটেলের সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দুজনকে শনাক্ত করেছে র্যাব।
র্যাবের ভাষ্য, ওই দুই যুবক হলেন কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম ও ইসরাফিল হুদা জয়া। আরেকজনের পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
র্যাব জানিয়েছে, আশিক চার মাস আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা জানান, গত বছর আশিকের নেতৃত্বে কয়েকজন এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু ছিনিয়ে নেন। এই মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। চার মাস আগে জেল থেকে বের হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা যায়।
আশিক এলাকায় মাদক কারবার ও যৌনকর্মী সরবরাহের কাজ করেন। জয়া তার অন্যতম সহযোগী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামাজিক কাঠোমোর মধ্যে যেসব পরিবর্তন এলে ধর্ষণ কমত, সে পরিবর্তন আনা হয়নি বলেই ধর্ষণ বেড়ে চলছে। মানসিক স্বাস্থ্যের বিকাশের জন্য গঠনমূলক পাঠ্যক্রম, পরিবার, সমাজের জেন্ডার সংবেদনশীল ও মানবিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা, সাংস্কৃতিক ও সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ডকে গুরুত্ব দেওয়া। এসব জায়গায় এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি। অপরাধ সংঘটনের পরবর্তী অবস্থা নিয়ে কাজ করে আইন। তাই শুধু সাজা বাড়িয়ে অপরাধ কমানো যায় না। ধর্ষণ এমন একটি অপরাধ, যা নির্মূল করতে রাষ্ট্রের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যেমন অত্যন্ত জরুরি, তেমনি সমাজে বিরাজমান ধর্ষকামী মনস্তত্ত্ব দমনে শিক্ষা ও সংস্কৃতির যথাযথ বিকাশও জরুরি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৩৬
আপনার মতামত জানানঃ