বাঁদরের প্রতিশোধ কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বিড় জেলার মজলগাঁও এলাকার একটি গ্রামের বাসিন্দারা। মজলগাঁও থেকেও প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে লাভুল গ্রাম। হাজার পাঁচেক মানুষের বাস এই গ্রামে।
গ্রামবাসীদের দাবি, মাসখানেক আগে একটি বাঁদরের বাচ্চাকে মেরে ফেলেছিল এক দল কুকুর। তার পর থেকে এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বাঁদরের একটি বিশাল দল। কুকুরছানা দেখলেই তুলে নিয়ে গিয়ে উঁচু জায়গা থেকে ফেলে মেরে দিচ্ছে তারা।
সূত্র মতে, গত মাসে বাঁদরের হানায় অন্তত ২৫০ কুকুর ছানার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। বাঁদরের দলের দাপটে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যেও।
গ্রামবাসীদের দাবি, বর্তমানে ওই গ্রামে আর কোনো কুকুরছানাই বেঁচে নেই। অভিযোগ, গত মাসে অন্তত ২৫০ কুকুকছানাকে মেরে ফেলেছে ‘ক্ষিপ্ত’ বাঁদরের দল।
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, বাঁদরদের প্রতিশোধের জেরেই এই অবস্থা। তারা জানিয়েছেন, একটি বাঁদরছানাকে এক দল কুকুর মেরে ফেলার পর থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত।
তাদের দাবি, বাঁদররা কুকুরছানা দেখলেই তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। তার পর উঁচু জায়গা থেকে তাদের ছুড়ে ফেলে মারছে। এর জেরে প্রায় ২৫০ কুকুরছানার মৃত্যু হয়েছে। এখন ওই গ্রামে একটিও কুকুরছানা বেঁচে নেই বলে দাবি গ্রামবাসীদের।
বাঁদরের প্রতিশোধের হাত থেকে বাঁচতে গ্রামবাসীরা বন দফতরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তবে অভিযোগ, বন দফতর একটিও বাঁদরকে ধরতে সমর্থ হয়নি। কিছু গ্রামবাসীরা বাঁদরদের হাত থেকে কুকুছানাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন। তা করতে গিয়ে উঁচু থেকে পড়ে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসীও আহত হয়েছেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কুকুরছানাদের মেরেও ক্ষান্ত হয়নি বাঁদরের দল। গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ওপরও সুযোগ পেলেই হামলা চালাচ্ছে তারা। গোটা বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওই এলাকায়।
মৃত্যু নিয়ে প্রাইমেট বর্গের প্রাণীদের প্রতিক্রিয়া
বানরসহ অন্যান্য প্রাইমেট বর্গের মায়েরা তাদের সন্তানের মৃত্যুর পর মরদেহ নিয়ে ঘুরে ঘুরে শোক পালন করে, যা মাঝে মাঝে কয়েক মাসও স্থায়ী হতে পারে। চলতি বছর সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটিই উঠে আসে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) অধীনস্থ বিশেষজ্ঞরা ৫০টি ভিন্ন প্রাইমেট প্রজাতির মায়েদের সন্তান মারা যাওয়ার পর দেখানো প্রতিক্রিয়া নিয়ে হওয়া মোট ৪০৯টি প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। ৮০ শতাংশ প্রজাতির মধ্যেই ‘মৃত বাচ্চার মরদেহ বহন’ করার আচরণ পরিলক্ষিত হয়েছে।
প্রাইমেটরা মৃত্যুর ব্যাপারে কতটা সচেতন তা নিয়ে যদিও বিতর্ক রয়েছে, তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রাইমেট মায়েরা এ ব্যাপারে জানে, অথবা সময়ের সাথে সাথে অন্তত বুঝতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোন প্রাইমেট তাদের বাচ্চাদের মরদেহ বহন করার আচরণ প্রদর্শন করবে তা পুরোপুরি নির্ভর করে তাদের প্রজাতির উপর।
কতদিন পর্যন্ত মায়েরা মরদেহ বয়ে বেড়াবে সেটা মূলত নির্ভর করে মা-সন্তানের সম্পর্ক কতটা দৃঢ় ছিল তার উপর। অল্পবয়সে মারা গেলে সেই মরদেহ দীর্ঘদিন বহন করে বেড়াতে দেখা যায় মায়েদের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বহন করে বেড়ানোর সময়ও হ্রাস পেতে শুরু করে।
গবেষণাটির লেখক এবং ইউসিএলের নৃবিজ্ঞানী আলেসিয়া কার্টার বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাইমেটরা মানুষের মতোই মৃত্যুর ব্যাপারে অবগত হতে পারে।
তবে যেটা আমরা জানি না, এবং হয়তো কখনোই জানতে পারবো না, সেটা হচ্ছে প্রাইমেটরা আদৌ বুঝতে পারে কি না যে মৃত্যু সর্বজনীন- যে সকল প্রাণীই, এমনকি তারাও একদিন মারা যাবে।
কার্টার আরও বলেন, বিবর্তনে মিল থাকার কারণে মানুষের সামাজিক বন্ধন অনেকটাই অন্যান্য প্রাইমেটদের মতো। যে কারণে মানুষের মৃতদেহ সৎকার ও শোক পালনের উৎপত্তি সামাজিক বন্ধনের মাঝে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
প্রাইমেটদের মধ্যে এখন যে মৃত্যু-পরবর্তী আচরণ দেখা যায় সেটা হয়তো একসময় মানুষের মধ্যেও ছিল। এবং হয়তো বিবর্তনের সময় মানুষ এসব আচারে পরিবর্তন এনেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭০০
আপনার মতামত জানানঃ