বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়েছে আদালত। তবে কোনো আদেশ দেয়নি।
ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে আজ সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে এ বিষয়ে শুনানি হয়। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে পরে আদেশ দেয়া হবে জানিয়েছে।
এর আগে হেলাল নাহিদের নামেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা ফেসবুক লাইভে ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে জিয়া পরিবার এবং ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, নারী বিদ্বেষী এবং যেকোনো নারীর জন্য মর্যাদাহানিকর ভাষা’ ব্যবহার করেছেন।
এতে বলা হয়েছে, ডা. মুরাদ হাসানের প্রদেয় এবং মুহাম্মদ মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদ কর্তৃক ধারণকৃত সাক্ষাৎকারটি পরবর্তীতে মুরাদ হাসান তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে প্রচার ও প্রকাশ করে জিয়া পরিবার তথা জিয়া পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য ব্যারিস্টার জাইমা রহমান এবং সর্বোপরি নারী সমাজের প্রতি অবমাননাকর, অপমানজনক এবং আইনত শাস্তিযোগ্য হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে অত্র মামলাটি দায়ের করা হলো।
এতে আরও বলা হয়, আসামিরা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ এবং প্রচারের মাধ্যমে দেশে রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও মানহানিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৫/২৯/৩১/৩৫ ধারার অপরাধ করেছেন বলে এই মামলা দায়ের করা হয়।
আসামিদের এমন কর্মকাণ্ড ফেসবুকের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সর্বমহলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মামলার আবেদন জেলায় জেলায়
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও যুক্তরাজ্যে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে ফেসবুক লাইভে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল বক্তব্যের অভিযোগে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে ঢাকা ও রাজশাহীর পর এবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করা হয়েছে চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনায়। আসামি করা হয়েছে ইউটিউবার মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকেও।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও যুক্তরাজ্যে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান সম্পর্কে ফেসবুক লাইভে কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল বক্তব্যের অভিযোগ তোলা হয়েছে এসব আবেদনে। আসামি করা হয়েছে ইউটিউবার মহিউদ্দিন হেলাল নাহিদকেও।
চট্টগ্রামে বিভাগীয় সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক এস কে এম তোফায়েল হাসানের আদালতে গত রোববার দুপুরে আবেদন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম চট্টগ্রাম ইউনিটের সভাপতি এ এস এম বদরুল আনোয়ার।
সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনালে মুরাদ ও নাহিদের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিলেটের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আক্তার খান। বিচারক আবুল কাশেম আবেদনটি গ্রহণ করে আগামি ১৫ ডিসেম্বর শুনানির তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
রাজশাহীতে সাইবার ট্রাইবুন্যালে মামলার আবেদন হয় রোববার বেলা সাড়ে ১১টায়। বগুড়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম এই আবেদন করেন।
রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা জানান, আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান মামলার বিষয়ে পরে আদেশ জানাবেন।
দেশে ফিরে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে
বিতর্কিত রাজনীতিক সদ্য পদত্যাগী তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান কানাডার পর দুবাইয়ের দরজাও তার জন্য বন্ধ থাকায় উপায় না পেয়ে তাকে দেশেই ফিরতে হয়েছে। গতকাল রোববার বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মুরাদ এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে ৫৮৬ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন।
বিমানবন্দরে নামার পর সাংবাদিকদের এড়াতে মুরাদ হাসান আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ব্যবহার না করে অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল দিয়ে বের হন। তিনি সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এদিকে বিমানবন্দরে নামার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে ডা. মুরাদকে।
কারণ তিনি করোনার ডাবল ডোজ টিকার সনদ ছাড়া কীভাবে বিমানবন্দর দিয়ে কানাডায় গেছেন; এ নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে মুরাদ ট্রানজিটের যাত্রী হওয়ায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখিও হতে হয়েছে তাকে।
জানা যায়, মুরাদ হাসান একটি ফ্লাইটে স্থানীয় সময় শুক্রবার দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে তাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
পরে তাকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয়। বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন বলেও তাকে জানানো হয়।
এ ছাড়া করোনাকালীন চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র না দেখাতে পারায় তাকে কানাডার টরেন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কানাডার বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স ফেরত পাঠিয়েছে বলেও দেশটির স্থানীয় বাংলা অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদে দাবি করা হয়।
ফলে কানাডায় মুরাদ হাসানকে ঢুকতে না দেওয়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণও হচ্ছে তার কাছে করোনার ডাবল ডোজের টিকার সনদ না থাকা। এখন প্রশ্ন উঠেছে, কানাডা ইমিগ্রেশনে আটকেপড়া মুরাদ কীভাবে করোনা সনদ ও কোভিড প্রটোকল না মেনে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেশত্যাগ করলেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ