মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া এলাকায় মাসুদ রানা (৩৮) নামে এক সাংবাদিককে তার চার বছরের ছেলে সন্তানের সামনে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে দুর্বৃত্তরা। আহত ওই সাংবাদিককে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মাসুদ রানার অভিযোগ, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সেই রেশ ধরে সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের লোকজন পরিকল্পিত হামলা করেছে।
আজ শুক্রবার সকালে পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের যশোবন্তপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত সাংবাদিক মাসুদ রানা দৈনিক আজকালের খবর পত্রিকার মহম্মদপুর উপজেলা প্রতিনিধি। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার দুপুরে যশোবন্তপুর গ্রাম থেকে মোটরসাইকেলে করে ছেলে ও ভাই নাসিরকে সঙ্গে নিয়ে পলাশবাড়ীয়া বাজারের দিকে আসছিলেন মাসুদ। পলাশবাড়িয়া এলাকায় পৌছালে ১০ থেকে ১২ জন যুবক মাসুদের ওপর হামলা চালায়। তারা হাতুড়ি, রড ও লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে মাসুদকে আহত করে। এ সময় তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি ভাঙচুর করে হামলাকারীরা। পরে স্থানীয় লোকজন মাসুদকে উদ্ধার করে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় আহত সাংবাদিকের ভাই নাসির বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ ও নাম না জানা ১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করছেন।
মাসুদ রানা জানান, উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের যশোবন্তপুর গ্রামের বাড়ি থেকে গাজীর মোড় বাজারে যাওয়ার সময় পলাশবাড়িয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের ইঙ্গিতে তার ওপর হামলা হয়। তার দলের মো. বিল্লাল, মো. আলী করিম, নুরু মিয়া, হিরু মিয়াসহ আরও কয়েকজন দুর্বৃত্ত তার মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। পরে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় মাসুদ রানার কাছে থাকা মোবাইল,ঘড়ি ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
মাসুদ রানা বলেন, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সেই রেশ ধরে সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের লোকজন পরিকল্পিত হামলা করেছে। গত কয়েক দিন যাবৎ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছিল তার লোকজন।
দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে পরাজিত হয়ে সেই রেশ ধরে সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামের লোকজন পরিকল্পিত হামলা করেছে। গত কয়েক দিন যাবৎ বিভিন্ন হুমকি দিয়ে আসছিল তার লোকজন।
সাবেক পলাশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি বাড়িতে ছিলাম না, শুক্রবার দুপুরে বাড়ি এসেছি। এ ঘটনায় অহেতুক আমাকে জড়ানো হয়েছে। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, সেহেতু ওই লোকগুলো আমার দলের। তবে মারধরের বিষয়ে কিছু জানা নেই। পরে শুনেছি।’
ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল অ্যাক্টসহ যেসব আইন হয়েছে, সেগুলো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জন করেছি, তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বিপরীতমুখী ও সাংঘর্ষিক। এগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে সংকুচিত করেছে।’
তারা বলেন, সারা বিশ্ব দেখছে, এই দেশটি সাংবাদিক নিপীড়নকারী দেশ এবং গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে এমন একটি দেশ। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রাষ্ট্রের জন্য, সরকারের জন্য এবং সুশাসনের জন্য দরকার।’
তারা বলেন, বাংলাদেশে হত্যার আসামির দণ্ড মওকুফ হয় অথবা দ্রুত জামিন হয়, ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাত থেকে লুটপাটকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, হাজার-কোটি টাকা বিদেশে পাচারকারী সহজেই দেশ ছাড়তে পারে, কিন্তু ফেসবুকে সরকারবিরোধী কিংবা ক্ষমতাসীন সরকারের লোকজনের বিরুদ্ধে কিছু লেখা যেন তার চাইতে বড় অপরাধ!
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মফস্বলের প্রত্যেকটা সাংবাদিক পরিচিত। সবাই সবাইকে চেনে। ওখানে কোন সংবাদ হলে তাকে টার্গেট করা সহজ। ঢাকায় সেটা সম্ভব না। মফস্বলের সাংবাদিক প্রতি মুহুর্তে, প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।মফস্বল সাংবাদিকদের কোনো ধরনেরই নিরাপত্তা নেই৷ আর্থিক বা শারীরিক কেনোটাই না৷ অধিকাংশ সাংবাদিক বেতন পান না আবার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও দুর্বৃত্তদের চাপের মুখে থাকতে হয়। শীঘ্রই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে—এমন আশাও করেছন না বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩৪
আপনার মতামত জানানঃ