অশালীন মন্তব্যের জেরে প্রবল সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে আজকের মধ্যে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতরাতে সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য প্রকাশ করেন। তবে এদিকে প্রশ্ন উঠছে, শুধুই কি পদত্যাগ! এ তো গুরু পাপে লঘু দণ্ড। কেন আইনি শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না মুরাদ হাসানকে। কেন তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে না?
শুধু পদত্যাগই কি যথেষ্ট?
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনায় যখন চারদিকে সমালোচনা শুরু হয় তখনই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা একটি গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরেই চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন মুরাদ। চট্টগ্রামে এক বন্ধুর বাসায় ওঠার কথা রয়েছে তার। বর্তমানে তার ফোন বন্ধ রয়েছে। তাই তার সঠিক অবস্থান জানা যায়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরেও আসেননি মুরাদ। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদের এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল ডা. মুরাদের। সেখানেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি।
মঙ্গলবারের মধ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার রাত ৮ টায় ডা. মুরাদ হাসানকে প্রধানমন্ত্রীর এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রোববার রাতে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের একটি ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে তোপের মুখে পড়েন তিনি। নারীর প্রতি ‘অবমাননাকর’ ও ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্য করে আগে থেকেই তীব্র সমালোচনার মধ্যে ছিলেন এই প্রতিমন্ত্রী।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবারের এক সদস্যকে নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের ‘নারীবিদ্বেষী’ বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে ফাঁস হয় একটি ফোনালাপ।
জানা যায়, এই কথোপকথনটি ডা. মুরাদ হাসান ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির। ফোনালাপে থাকা চিত্রনায়ক ইমন ইতোমধ্যে সেটি স্বীকারও করেছেন। ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। পুরো বক্তব্যে ‘অশ্রাব্য’ কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’।
এছাড়া সোশাল মিডিয়াতে আসা আরেকটি ভিডিওতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া ও শামসুন্নাহার হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়েও মুরাদকে নারীর প্রতি অবমাননাকর কথা বলতে দেখা যায়।
দলীয় শাস্তির মুখোমুখি কি হতে হবে?
এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, রাজনীতির মধ্যে শিষ্টাচার থাকা বাঞ্ছনীয়।
তিনি বলেন, যারা জনগণকে নিয়ে সব সময় ভাববে, জনগণের জন্য কথা বলবে তাদের মধ্যে যদি শিষ্টাচার না থাকে তাহলে তাদের দিয়ে জনগণের কোন কল্যাণ আসতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক মত-পার্থক্য থাকতে পারে, চেতনার পার্থক্য থাকতে পারে, তাই বলে কারো বিষয়ে অশালীন কথাবার্তা বলা, কুৎসিত কোন আচরণ করা; এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়।
মাহবুবউল আলম হানিফ জানান, সোমবার সকালেই দলের পক্ষ থেকে মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার জন্য দলের শীর্ষ পর্যায়ে সুপারিশ করা হয়েছিল।
মুরাদ হাসান এখনও এমপি পদে আছেন, কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ে দলীয় পদে আছেন, তাহলে তার কী হবে, এই প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম সম্পাদক জানান, সেসব ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমাদের পক্ষ থেকে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার দাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া ও শামসুন্নাহার হলের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করায় মুরাদ হাসানের কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ।
বিক্ষোভে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার আসামি করার দাবিও জানানো হয়। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের নিচে মুরাদ হাসানের কুশপুতুলে জুতাপেটা করে এ কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা-কর্মীরা।
পরে তারা প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, “একজন তথ্য প্রতিমন্ত্রী চিত্রনায়িকাকে ডিবি, ডিজিএফআইয়ের দোহাই দিয়ে তুলে এনে তাকে ধর্ষণ করার হুমকি দিচ্ছে। একজন প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে এরকম ভাষা, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য আমরা কখনোই আশা করি না।”
তিনি বলেন, “আমরা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়েও তার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য দেখেছি। যা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, বাংলাদেশের সকল মেয়েদের জন্য অপমানজনক। এই বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষকে আমরা দেখতে চাই না কোনো পদস্থ চেয়ারে।”
নুসরাত বলেন, “ডিজিটাল আইন নিয়ে এত কিছু শুনি, এখন কেন তার প্রয়োগ দেখি না। কেন তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বিচার হবে না? তাকে বিচারের আওতায় আনা না হলে, আমরা নারী শিক্ষার্থীরা সারাদেশে আন্দোলন শুরু করব।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, “তাকে শুধু অপসারণ করলে হবে না। তিনি যে মন্তব্য করেছেন তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
এসডব্লিউ/এসএস/১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ