গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন জারি করার দাবিতে ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা হয়েছে। ছাত্রলীগ এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এসময় আন্দোলনকারী এক ছাত্রকে পুলিশের সামনেই তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাকে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের ভেতরে নিয়ে যায় বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আন্দোলনকারী ওই ছাত্র ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বেলা সাড়ে ১২টা থেকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা হাফ পাস ভাড়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে।
পরে দুপুর দেড়টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের অবরোধ কর্মসূচি শেষ করে ফিরে যাওয়ার সময় ঢাকা কলেজের সামনে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের সামনে থেকে একদল শিক্ষার্থী ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, যারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তারাই ওই শিক্ষার্থীকে ঢাকা কলেজের ভেতরে তুলে নিয়ে গেছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলার আগে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের বিরুদ্ধে রাস্তার পাশে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে তর্ক বাধান৷ কথা-কাটাকাটির মধ্যেই লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা করা হয়৷ কিছু শিক্ষার্থী এই হামলার শিকার হন৷
প্রত্যক্ষদর্শী ও হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউমার্কেটের মোড় ঘুরে ফের সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত একটি মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা৷ ওই মিছিলে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মোটরসাইকেল ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে হামলা চালান৷
শিক্ষার্থীরা বলছে, প্রথম দফা হামলার পর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে তাদের ওপর আরেক দফা হামলা করে ছাত্রলীগ৷ এই হামলার সময় রাস্তায় স্কুল-কলেজের পোশাক পরা সব শিক্ষার্থীকেই মারধর করা হয়৷ হামলার পর ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিতে দিতে তারা ঢাকা কলেজের ভেতরে চলে যান৷
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের এডিসি ও নিউমার্কেট থানার ওসিসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের এডিসি ও নিউমার্কেট থানার ওসিসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের সামনে ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এবং ওই শিক্ষার্থীদের বাধা পর্যন্ত দেয়নি।
যদিও পুলিশের সামনে ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন ডিএমপি রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের এডিসি শাহেন শাহ মাহমুদ।
তিনি বলেন, আমরা তখন পিছনে ছিলাম। আমাদের চোখের সামনে ঘটনাটি ঘটেনি। তবে ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের জন্য আমরা চেষ্টা করছি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি।
এ বিষয়ে সাত কলেজে আন্দোলনের সমন্বয়ক ইসমাইল সম্রাট সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগের হামলায় আমাদের ৭-৮ জন আহত হয়েছেন। একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা লালবাগ জোনের এডিসিকে জানিয়েছি, তাকে যেন উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা কলেজের এক ছাত্রের মোটরসাইকেল ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমরা দু-পক্ষকেই শান্ত করে নিজ নিজ কলেজে পাঠিয়ে দিয়েছি।
ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। এছাড়া হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের অন্য কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের পাশাপাশি ভিন্নমতের ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে তারা। ছাত্রলীগ নেতাদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার কারণেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দলীয় প্রভাব খাটিয়েই ছাত্রলীগ নেতারা এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সরকার দলীয় বিধায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে কেউ সাহস করে না। এমনকি প্রশাসনও কোনো ভূমিকা নিতে পারে না। এসবের শাস্তি নিরূপণ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
হাফ ভাড়ার দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছেন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা হাফ ভাড়া নেয়ার বিষয়ে পরিবহন সংগঠনের সিদ্ধান্তের কথা বলছেন। আর সংগঠনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে তাদের। সরকার যদি তাদের ভর্তুকি দেয়, তাহলে তারা হাফ ভাড়া নিতে প্রস্তুত। এমনকি সরকার আইন করে হাফ ভাড়ার বিষয়টি প্রতিষ্ঠা না করায় তারা হাফ ভাড়া নিতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে পরিবহন শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি, ভাংচুর ও হট্টগোল লেগেই আছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট সেক্টরের কর্তাব্যক্তিরা বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন। কার্যত এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮২৩
আপনার মতামত জানানঃ