বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে তার পরিবার আবারও সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছে। ঢাকায় তার পরিবারের একজন সদস্য জানান, চিকিৎসকরা মিসেস জিয়াকে দ্রুত বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন, সেজন্য তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুন করে আবেদন করেছেন।
ছয়দিনের ব্যবধানে খালেদা জিয়াকে আবার ঢাকায় বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তির পর গত রোববার রাত থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে সিসিইউতে রাখা হয়েছে। এরপর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ঢাকায় একটি বেসরকারি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছিলেন গত ৭ই নভেম্বর।
আওয়ামী লীগের অবস্থান
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সুযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখানে তার কিছু করার নেই। এটা এখন আইনের ব্যাপার। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি এটাই কি বেশি নয়?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান, আমাকে বলেন। এখন সে অসুস্থ, ওই যে বললাম না রাখে আল্লাহ মারে কে, মারে আল্লাহ রাখে কে। সেটাই মনে করে বসে থাকেন। এখানে আমার কিছু করার নাই। আমার যেটা করার, আমি করেছি। এটা এখন আইনের ব্যাপার।’
গতকাল বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সাম্প্রতিক স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ এ অংশগ্রহণ এবং লন্ডন ও ফ্রান্সে দু-সপ্তাহের সফর বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। সেখানে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা করাতে বিদেশে যাওয়ার আবেদনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন; এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি গণভবনে থাকা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি এই প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশগ্রহণ করেন। এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে? বলুন তো। খালেদা জিয়াকে যে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি নয়? আপনাকে যদি কেউ হত্যার চেষ্টা করত, আপনি কি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন? আপনার পরিবারকে যদি কেউ হত্যা করত, আর সেই হত্যাকারীকে যদি কেউ বিচার না করে পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিত, তাদের আপনি কী করতেন? আমি থাকতে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ভোট দিয়ে সংসদে বসাল। যেখানে আমি বিরোধীদলীয় নেতা ছিলাম, সেখানে বসানো হলো কর্নেল রশিদকে। কে করেছিল? খালেদা জিয়া।’
কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে তাকে হত্যা প্রচেষ্টার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন বোমা পোঁতে, তার আগে তার (খালেদা জিয়া) বক্তৃতা কী ছিল? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরে থাকুক, কোনো দিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না। সেই কথাও বলেছিল। ভেবেছিল মরেই তো যাব। রাখে আল্লাহ মারে কে, আর মারে আল্লাহ রাখে কে। এখন আমার বেলায় সেটা হচ্ছে রাখে আল্লাহ মারে কে। সেখানে তারপরও খালেদা জিয়ার জন্য এত দয়া দেখাতে আমাকে বলেন। কেউ এই প্রশ্ন করলে আমার মনে হয় আপনাদের একটু লজ্জা হওয়া উচিত। বাপ, মা, আমার ছোট ভাই রাসেলকে পর্যন্ত হত্যা করেছে।
তারপরও আমরা অমানুষ না। অমানুষ না দেখেই তাকে আমরা অন্তত তার বাসায় থাকার, চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমার এক্সিকিউটিভ ক্ষমতা আমার হাতে এতটুকুই আছে। বাকিটা আইনগত ব্যাপার।’
‘বিদেশ পাঠিয়ে খালেদার জীবন বাঁচান’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা ভালো না জানিয়ে অবিলম্বে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির আলোচনা সভার বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আহ্বান জানাতে চাই, অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। তার জীবন রক্ষা করুন। এর সঙ্গে রাজনীতিকে নিয়ে আসবেন না।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, অনেক বেশি অসুস্থ। আমি ঠিক আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না।
এ সময় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থার বর্ণনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেদিন রাতে তিনি প্রথম সিসিইউ বেড থেকে হুইলচেয়ারে বসেছেন। তিনি অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় আছেন।
গণতান্ত্রিক সংগ্রামে খালেদা জিয়ার ভূমিকার কথা স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি হচ্ছেন সেই নেত্রী, যিনি গণতন্ত্রের জন্য হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছেন।
তিনি বলেন, এ সরকার আমাদের সব অধিকার হরণ করে নিয়েছে। আজ আমরা একটা বড় জায়গায়, খোলা জায়গায় তার জন্য দোয়া করার অনুমতি পাই না।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি এবং ফুসফুসের সমস্যাসহ নানা জটিলতা ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। এখন উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এবং জ্বরের কারণে তাকে হাসপাতালে সিসিইিউতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
তার একজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক ড: জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, সিসিইউতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, এখন বিদেশে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার বিকল্প তারা দেখছেন না।
যদিও ঢাকার চিকিৎসকদল লন্ডন এবং যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করেই মিসেস জিয়াকে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তবে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেছেন, এখানে আধুনিক চিকিৎসার সাপোর্ট বা সুবিধার ঘাটতি আছে বলে চিকিৎসকরা তাদের বলছেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। বুঝতেই পারছেন যে ২৬দিন পর হাসপাতালে থেকে আসলো। আবার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই হাসপাতালে যেতে হলো।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সেলিমা ইসলাম আরও বলেন, তার হিমোগ্লোবিন অনেক কমে গেছে। তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, হাতে চলতে পারছে না। সেজন্যই আমরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করতে চাই। কারণ এখানে তো ডাক্তাররা সেভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না। কারণ তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সুবিধা নাই।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা জানিয়েছেন, মানবিক কারণে জামিন বা সরকারের নির্বাহী আদেশে- যে কোন উপায়ে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হোক, সেটা পরিবার চাইছে। সেজন্য এর আগে আবেদন নাকচ হওয়ার পরও আবার আবেদন করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৪৫
আপনার মতামত জানানঃ