ভারতে বোরকা পরে ঢোকা যাবে না ব্যাংকে- একটি ব্যাংকের এমন ঘোষণা নিয়েই নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে দেশটিতে। প্রসঙ্গত এই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) একটি শাখা। ঘোষণা দেওয়ার পরপরই শুরু হয় সমালোচনার ঝড়।
শেষ অব্দি নিজেদের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে স্টেট ব্যাংকের মুম্বইয়ের নেহরু নগর শাখা। মূলত মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব কুর্লা এলাকায় স্টেট ব্যাংকের এই শাখাটি অবস্থিত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন আগে থেকেই নেহরু নগরের এসবিআই শাখায় তিনটি ভাষায় এই বিজ্ঞপ্তি টাঙানো ছিল। বিজ্ঞপ্তিতে হিন্দি, মরাঠি এবং ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘বোরকা, স্কার্ফ পরে ব্যাংক চত্বরে ঢোকা নিষিদ্ধ।’
এরপর সেই বিজ্ঞপ্তির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লেই শুরু হয় বিতর্ক। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেদের ভুল স্বীকার করে গত ৩ নভেম্বর স্টেট ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য দুঃখপ্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিটিও তুলে নেওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
গত ৩ নভেম্বর টুইট করে স্টেট ব্যাংক জানায়, টাকা তোলা ও অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ব্যাংকটির ওই শাখা। এই বিজ্ঞপ্তির পিছনে ব্যাংকের বা ওই শাখার অন্য কোনও প্রকার উদ্দেশ্য নেই বলেও জানিয়েছে এসবিআই।
তবে ব্যাংকটির এই যুক্তি দেখানোর পরেও সোশ্যাল মিডিয়ায় স্টেট ব্যাংকের সমালোচনা চলছে। প্রশ্ন তোলা হয়, নিরাপত্তার জন্য শুধু বোরকা নিয়েই কেন আপত্তি জানাল ব্যাংকের শাখাটি? করোনাকালীন এই সময়ে সব গ্রাহকের মুখই তো মাস্কে ঢাকা থাকছে।
এর পাশাপাশি স্টেট ব্যাংক ভাইরাল হওয়া বিজ্ঞপ্তির ছবি নিয়েও আপত্তি তুলেছে। টুইট করে এসবিআই-এর তরফে বলা হয়, ব্যাংকের ভিতরে ছবি বা ভিডিও তোলা নিষিদ্ধ। কোনও রকম ছবি বা ভিডিও থেকে কোনও অপরাধ ঘটলে তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়বেন যিনি ছবি তুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ওই ছবিটা সরিয়ে নেওয়ার আবেদনও জানিয়েছে এসবিআই।
এর আগে ২০১৯ সালে নিরাপত্তার অজুহাতে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক সংগঠন শিবসেনা।
ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেনে মুখ ঢাকা পোশাক পরা নিষিদ্ধ করা হলে ভারতে নয় কেন বলে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটি। তাদের মতে, ইসলামের সঙ্গে নারীদের বোরকা পরার বাধ্যবাধকতার কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু আরবদের ঐতিহ্য অনুসরণ করতেই মুসলিম নারীরা বোরকা পরে থাকেন, ধর্মীয় কারণে নয়। অন্যদিকে আরব নারীরা সূর্যের তাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে বাইরে বের হওয়ার সময় বোরকা পরে শরীর ঢাকতেন, তাদের পরার উদ্দেশ্যও ধর্মীয় কোন রীতিনীতি নয়।
শিবসেনা দাবি তুললেও বিজেপির অন্য শরিক দল আরপিআই-এর নেতা রামদাস আটওয়ালে বলেন, ভারতের মতো দেশে বোরকা নিষিদ্ধ করা কখনোই উচিত হবে না। কেউ বোরকা পরলে, সে জঙ্গি নয়। তবে যারা বোরকা পরে সন্ত্রাসে যুক্ত, তাদের শাস্তি দেয়া উচিত। এছাড়া ভারতে বোরকা নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন নেই বলে জানান বিজেপি সাংসদ এবং মুখপাত্র জিভিএল নরসিংহ রাও।
ওই সময় শিবসেনা মুখপত্র বোরকা নিষিদ্ধের প্রস্তাব করলেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও সাধ্বী প্রজ্ঞা ঠাকুর ছাড়া আর কাউকেই তারা পাশে পায়নি সে সময়। এরপর নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘এখনি বোরকা নিষেধাজ্ঞার কথা আমরা বলিনি। বোরকা ব্যবহার করে যারা মুসলিমদের বদনাম করে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে। আবার কোনো হিন্দু প্রথাও যদি সন্ত্রাস ছড়াতে সাহায্য করে, আমরা তারও বিরুদ্ধে দাঁড়াবো।’
প্রসঙ্গত, ইসলাম ভারতের দ্বিতীয় বহুল প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস। জনসংখ্যার বিচারে ভারতে মুসলমানদের স্থান দ্বিতীয়; অর্থাৎ হিন্দুদের ঠিক পরেই। বিশাল জনসংখ্যার দেশ ভারতে ১৪.২% মুসলিম। পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠীগুলোর একটির বাস এই দেশটিতেই। ভারতের চেয়ে অধিক সংখ্যায় মুসলিম বাস করে শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ায়।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৫৫
আপনার মতামত জানানঃ