৪০ বছর আগে আয়াতোল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে তার নির্বাসিত জীবন শেষে ইরানে ফিরে ইসলামি বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন৷ খোমেনি ছিলেন ইরানের ধর্মীয় নেতা৷ ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ইরানে ইসলামি শরিয়া আইন মানা হয়। এই আইন অনুযায়ী, ব্যভিচারের শাস্তি পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদণ্ড। তবে ২০১৩ সালে তেহরানের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই মৃত্যুদণ্ড অন্য মাধ্যমেও দেওয়া যাবে।
সম্প্রতি নাস্তিক হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ইরানে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। গতকাল শনিবার ব্যভিচারের অভিযোগে ৩৩ বছর ও ২৭ বছর বয়সী ওই যুবক-যুবতীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ইরানের সংবাদমাধ্যম শার্ঘের বরাত দিয়ে এমনটি জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
শার্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বছরের শুরুতে অভিযুক্তের স্ত্রী তার স্বামীর নাস্তিকতার প্রমাণ ভিডিও সহ পুলিশকে উপস্থাপন করেছিলেন। তখন ওই দম্পতিকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি থেকে রেহাই দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল।
কিন্তু ওই ব্যক্তির শ্বশুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবি জানান এবং আদালত তার পক্ষে রায় দেন। প্রসঙ্গত, ইরানের আইন অনুযায়ী, যদি ভুক্তভোগীর পরিবার অভিযুক্তকে ক্ষমা করে দেয় তাহলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
ইরানে মৃত্যুদণ্ড
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত বছর ২৪৬টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ছিল প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫ থেকে ২০১৫ সময়কালে ইরানে অন্তত ৭৩ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
আর এই প্রতিবেদন তৈরির সময়ে দণ্ড কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ১৬০ জন। কথিত অপরাধীদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই ধর্ষণ, খুন ও মাদক সম্পর্কিত অপরাধের অভিযোগ থাকলেও অ্যামনেস্টির ওই অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রেই জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের মধ্য দিয়ে কিশোর-কিশোরীদের অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়।
অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ইরান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৫ সালের শুরুতেই অন্তত ৭০০ নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে দেশটিতে।
চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ৯৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। এর মধ্যে ছয়জন নারী। গত জুন মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচলেট এই তথ্য জানান।
জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের এক বৈঠকে ইরানের মানবাধিকার বিষয়ে তিনি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়, ইরানের অন্তত ৮০ শিশু মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে চারজনের খুব দ্রুত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে।
মিশেল ব্যাচলেট বলেন, ইরানের মৃত্যুদণ্ডর অধিকাংশই সরকারের আরোপিত। নির্যাতন করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি নিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করা হয়। এই ঘটনাকে ন্যায়বিচারের মারাত্মক লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন মিশেল।
প্রসঙ্গত, ইরানে ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের মাত্র দুই মাস পর ৩০ মার্চ দেশটিতে এক ঐতিহাসিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়৷ ওই গণভোটের মাধ্যমে ইরানের জনগণ ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রায় দেন৷ সেই সময় ইসলামী প্রজাতন্ত্রের পক্ষে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ ভোট পড়েছিল৷ এরপর ১৯৭৯ সালের ১ এপ্রিল ইরানকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷
নাস্তিকদের উপর নির্যাতন
আন্তর্জাতিক এক গবেষণা বলছে, বিশ্বের ৮৫টি দেশে নাস্তিকরা প্রচণ্ড বৈষম্য-নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি অন্তত সাতটি দেশে নাস্তিকদের বিরুদ্ধে চরম নির্যাতন হয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে আছে ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং মালয়েশিয়া।
ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসীদের জন্য ৩০টি সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশের নামও।
বর্তমানে যে সব দেশে নাস্তিকরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশই মুসলিম প্রধান দেশ। কিন্তু কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রেও ধর্মে অবিশ্বাসী লোকজনের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৩৫
আপনার মতামত জানানঃ