সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্ম-পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালাতে মাঠে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নামাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি।
কয়েক বছর ধরে অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা সরকারকেও বেকায়দায় ফেলে দেয়। গুজব রটনাকারীরা মূলত ধর্মীয় উস্কানিসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সবশেষ দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লার ঘটনায়ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা হয়েছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সরকারবিরোধী ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক, প্রতিক্রিয়াশীল ও জঙ্গি গোষ্ঠী এই সব সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত। সরকার হটানো বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যই তারা এই পথ বেছে নিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ব্যর্থ হওয়া ওই গোষ্ঠী গুজবের আশ্রয় নিচ্ছে।
তারা জানান, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়। রাজনৈতিকভাবে সরকারর বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলনের চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হয়েছে। এর পরই সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্ট শুরু হয় এবং তা অব্যাহত রয়েছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সাইবার অপরাধ আরও বাড়তে পারে।
এরই মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব-অপপ্রচার রোধে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট’র সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
দলটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-কমিটি সারাদেশে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করছে।
এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্তর্গত থানার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকদের নিয়ে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) কাউন্সিল হলে ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সার্বিক সহযোগিতা দেয় আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।
ভিন্ন কৌশলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষমতাসীন দলটি কর্তৃত্ব বজায় রাখার কৌশল হিসাবে মাঠে এক লাখ অ্যাক্টিভিস্ট নামাচ্ছে। যা দিন শেষে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মত সংগঠনগুলোর আগ্রাসী ভূমিকাই দেখাতে পারে বলে আশঙ্কা
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপ-কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ যত উন্নত হতে থাকবে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তত বেশি গুজব-অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করবে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। বিশেষত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব-অপপ্রচার ছড়িয়ে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করার জন্য চেষ্টা করবে। যেহেতু তারা রাজপথে পেরে উঠতে পারবে না, তাই তাদের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে গুজব ও অপপ্রচার। আগামী দিনে এসব গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের আরও সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সারাদেশে এরই মধ্যে ৬৯টি কর্মশালা সম্পন্ন করেছি, আজ ৭০তম কর্মশালা চলছে। আমাদের লক্ষ্য, জেলা পর্যায়ে ১০ হাজার মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা। তাদের দিয়ে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করা। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যেন আগামী দিনে কোনো ধরনের গুজব-অপপ্রচারের মাধ্যমে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করবে এ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন পৃথিবীর পট পরিবর্তন হয়েছে। সবকিছুই ভার্চ্যুয়ালমুখী হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে কার্যক্রম পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠন— ছাত্রলীগ যুবলীগের মতই অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনাকারী অ্যাক্টিভিস্টের ভূমিকা হবার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বাইরের মত ভার্চ্যুয়ালি ক্ষমতা দখলের একটি অংশ হিসাবেই একে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, দীর্ঘ তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে বাইরের পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারলেও ভার্চ্যুয়ালে দলটি ব্যর্থ হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করলেও তা ভেস্তে যায়। ক’দিন আগেও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার এখতিয়ারের বাইরে বলে জানান। তাই ভিন্ন কৌশলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষমতাসীন দলটি কর্তৃত্ব বজায় রাখার কৌশল হিসাবে মাঠে এক লাখ অ্যাক্টিভিস্ট নামাচ্ছে। যা দিন শেষে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মত সংগঠনগুলোর আগ্রাসী ভূমিকাই দেখাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮১৯
আপনার মতামত জানানঃ