সন্ত্রাসীদের অত্যাচার নির্যাতন থেকে উদ্ধার পেতে থানার শরণাপন্ন হোন একজন। ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এক এসআইকে। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়া এসআই নিজেই সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে বাদীর বাড়িতে গিয়ে বাদীর স্ত্রীকে মারধর ও গালিগালাজ করেন। একইসাথে ৫ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেন।
মারধর, চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সাভার থানার ভাকুর্তা বিটের ইনচার্জ এসআই শাহ আলমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাদী তাহমিদার আদালতে মামলাটি করেন রাফিয়া আক্তার তুলি নামের এক নারী। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন—আওলাদ হোসেন খান, মো. আলাউদ্দিন, মনোয়ারা বেগম এবং তার দুই ছেলে আমান উল্লাহ ও জামাল হোসেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাফিয়া আক্তার তুলি এবং তার স্বামী আফজাল হোসেন সরকার নালিশি সম্পত্তিসহ ১৭৭ শতাংশ সম্পত্তি কিনেন। ওই সম্পত্তি দেখভালের জন্য নূরনবী আলী ও ইউনুছ আলী হাওলাদারকে তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর আওলাদ হোসেন খানসহ অন্য আসামিরা তুলির বাড়ি ভাঙচুর করেন। এতে বাধা দিলে আসামিরা তত্ত্বাবধায়ক ইউনুছ আলী হাওলাদারকে মারধর করেন। এ ঘটনায় ইউনুছ আলী রাতেই সাভার থানায় অভিযোগ জানান। এ ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই শাহ আলমকে। ২৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহ আলম ও দুজন কনস্টেবলের উপস্থিতেতে আওলাদ হোসেন ও আলাউদ্দিন তত্ত্বাবধায়কের স্ত্রীকে মারধর ও গালিগালাজ করেন। এর পর এসআই শাহ আলম ভিকটিমকে বলেন, বাড়ির মালিক তুলিকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ভাকুর্তা বিট অফিসে দেখা করতে।
২৮ সেপ্টেম্বর সকালে তুলির শুভাকাঙ্ক্ষী জাকির হোসেন ভাকুর্তা পুলিশ ফাঁড়িতে এ ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে এসআই শাহ আলম তুলিকে হাতকড়া পরান। এর পর ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিকেল ৫টার দিকে তাকে ছাড়ে দেন। পরে চাঁদার ৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় গত ৬ অক্টোবর এসআই শাহ আলম তত্ত্বাবধায়ককে ফোন করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এতে রাফিয়া আক্তার তুলি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
রাফিয়া আক্তার তুলি এ বিষয়ে সাভার থানায় মামলা করতে যান। তবে থানা মামলা না নিয়ে কালক্ষেপণ করে। এজন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন তুলি।
রাফিয়া আক্তার তুলি এ বিষয়ে সাভার থানায় মামলা করতে যান। তবে থানা মামলা না নিয়ে কালক্ষেপণ করে। এজন্য আদালতে মামলা দায়ের করেন তুলি।
সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে মামলা হয়েছে এবং বিচার চলছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় পুলিশের অপরাধ কাজে অধিক হারে জড়িয়ে পড়ার জন্য দীর্ঘদিনের ঘুণে ধরা সিস্টেমকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, ঔপনিবেশিক আমলের কাঠামো থেকে পুলিশ বাহিনী এখনো বের হতে পারেনি। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৈরি করা যায়নি তাদের কাঠামো। ১৮৬১ সালের আইন দিয়ে পুলিশ পরিচালিত হচ্ছে। এত দিনেও কাঠামোগত সংস্কার করা যায়নি। বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে মূল সমস্যা খতিয়ে দেখতে হবে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে আমাদের। ব্যক্তিবিশেষকে দোষারোপ করে লাভ নেই। পুরো সিস্টেমটা নিয়ে ভাবতে হবে। বিশেষ করে বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন ঘাট, প্রসিকিউসন, তদন্ত ব্যবস্থা আছে।
তারা বলেন, বিসিএস দিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ভালো অফিসার ও কাজ দেখালে হবে না, জবাববদিহিতা স্বচ্ছতা জরুরি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কর্ম পরিবেশ নিয়েও ভাবতে হবে। স্থানীয় এমপি, অর্থশালীদের সঙ্গে ওসিদের একটা আঁতাতের সম্পর্ক থাকে। তারা একজন আরেকজনকে প্রটেকশন দেয়। আর সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হয়। ওসি, এসআই লেভেলে সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসা অব্যাহত রয়েছে। কোথাও কোথাও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ আসে পুলিশের বিরুদ্ধে, কোথাওবা অস্ত্র বিক্রয়কারী হিসাবে, কোথাওবা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ, পুলিশের নেতৃত্বে মাদক পাচার চক্র গড়ে ওঠার অভিযোগ, চুরি ডাকাতি ইত্যাদি হেন কোনো অপরাধ নেই যা পুলিশ শব্দটির সাথে জুড়ে বসে নাই। প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগ আসে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ার হার আশংকাজনক। প্রায় প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে বিভিন্ন অপকর্মের। এবিষয়ে পুলিশের কর্তৃপক্ষসহ দেশের সরকাকেও নজর বাড়াতে হবে। কেননা, আইন রক্ষাকারী কর্তৃক একেরপর এক আইন বিরোধী কর্মকাণ্ডে দেশের আইনের প্রতি মানুষের অনাস্থা জন্মাবে। ফলে দেশে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১৩
আপনার মতামত জানানঃ