এটি অনুমান করা হয় যে ব্রাজিলে প্রায় ২৪০ আদিবাসী উপজাতি বাস করে। তারা ব্রাজিলিয়ান জনসংখ্যার প্রায় ০.৪% বা নয় লক্ষ লোকের প্রতিনিধিত্ব করে এবং অন্যান্য সংস্কৃতিতে বারবার প্রকাশিত হওয়ার পরেও বেশিরভাগ তাদের ঐতিহ্য, রীতিনীতি এবং ভাষাগুলির সাথে দ্রুততার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এমন কয়েক ডজন উপজাতি রয়েছে যারা তাদের চেনাশোনা ছাড়িয়ে বিশ্বের সাথে কখনও যোগাযোগ করেনি।
ব্রাজিলের মহাবন আমাজনে শত শত আদিবাসী ও উপজাতি বাস করে। বিগত কয়েক বছর ধরেই ব্রাজিলের আমাজন অরণ্যে বে-আইনি খননকার্য এবং বৃক্ষছেদন নিয়ে বিতর্ক চলছেই। বহুবার দুস্কৃতিদের সঙ্গে আদিবাসীদের কিছু বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষও ঘটেছে।
ব্রাজিলে আদিবাসী উপজাতিদের ওপর সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ব্রাজিলে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা গত বছরের তুলনায় ৬১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে একটি মানবাধিকার গ্রুপ।
বৃহস্পতিবার ক্যাথোলিক চার্চের আদিবাসী মিশনারি কাউন্সিলের (সিআইএমআই) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আদিবাসী এলাকায় ভূমি আগ্রাসন বেড়েছে আর সরকার সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
ব্রাজিলের প্রকৃত আদিবাসীদের বংশধরদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ব্রাজিলে খুন হয়েছে ১৮২ আদিবাসী। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিলো ১১৩ জন। হত্যাকাণ্ড বেড়েছে ৬১ শতাংশ।
সিআইএমআই এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদিবাসী এলাকায় ভূমি আগ্রাসনের ২৬৩টি ঘটনা ঘটেছে। যা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৩৭ শতাংশ। একে আশঙ্কাজনক আখ্যা দিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে কট্টর ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সরকারকে আদিবাসী জনগণের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে সরকার সংরক্ষিত এলাকায় বাণিজ্যিক খনি, তেল গ্যাস অনুসন্ধান সম্প্রসারণের আইন প্রণয়ন করছে।
আদিবাসী ভূমি স্বীকৃতি দেওয়াও অচল হয়ে পড়েছে বলসোনারোর প্রশাসনের অধীনে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে ব্রাজিলের এক হাজার ২৮৯টি সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে ৮৩২টি এখনও সরকারি স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে।
ব্রাজিলের সরকারি হিসেবে করোনা মহামারিতে দেশটিতে আটশ’র বেশি আদিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। তবে এই হিসেবে শহর এলাকায় বসবাস করা আদিবাসীদের রাখা হয়নি।
ব্রাজিলে প্রায় নয় লাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠী রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশই সংরক্ষিত এলাকা ছেড়ে শহরে বসবাস করে।
ব্রাজিলের বলসোনারো সরকারের বিরুদ্ধে বারবার পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি প্রেসিডেন্টকে একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, উপজাতিদের জন্য এত বেশি সংরক্ষিত অঞ্চল রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তার পরিবর্তে খননকার্য শুরু হলে দেশের অর্থনীতি উন্নত হবে। আমাজনের অরণ্যে বে-আইনি খননকার্যের এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে প্রেসিডেন্টের প্ররোচনাকেই দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই আদিবাসীদের সঙ্গে বে-আইনি উত্তোলকদের সংঘর্ষের ঘটনাও বাড়ছে।
ব্রাজিলের বলসোনারো সরকারের বিরুদ্ধে বারবার পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি প্রেসিডেন্টকে একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, উপজাতিদের জন্য এত বেশি সংরক্ষিত অঞ্চল রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তার পরিবর্তে খননকার্য শুরু হলে দেশের অর্থনীতি উন্নত হবে। আমাজনের অরণ্যে বে-আইনি খননকার্যের এই বাড়বাড়ন্তের পিছনে প্রেসিডেন্টের প্ররোচনাকেই দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যেই আদিবাসীদের সঙ্গে বে-আইনি উত্তোলকদের সংঘর্ষের ঘটনাও বাড়ছে।
সারা পৃথিবীতে এমন ১০০-রও বেশি জনগোষ্ঠী আছে। তার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বাস করে আমাজন এলাকায়। এদের সাথে মূলধারার সমাজের সম্পর্ক ‘শান্তিপূর্ণ’ নয়। তাদের জনসংখ্যা কত, তারা কী ভাষায় কথা বলে তার সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়।
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল বলছে, আমাজন অঞ্চলে বনভূমি ধ্বংসের কারণে এরকম অনেক উপজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার ঝুঁকিতে রয়েছে। এদের সামনে একটা বড় ঝুঁকি তাদের আবাসস্থলে ঢুকে পড়া লোকজনের সাথে সংঘাত। আবাসভূমি ধ্বংস হবার ফলে তাদের খাদ্যের উৎস নষ্ট হওয়াটাও এসব উপজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হবার আরেকটি কারণ।
মাশকো-পিরো নামে একটি জনগোষ্ঠী ২০১৪ সালে তাদের এলাকা ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছিল। বাইরের লোকের কাছে তাদের প্রশ্ন ছিল— যে বন্য শূকর তাদের প্রধান খাদ্য, সেই শূকর তারা কেন আর খুঁজে পাচ্ছে না?
সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনালের সারা শেংকার বলছেন, আমাজনের এসব জনগোষ্ঠী এখন তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে।
১৯৮০র দশকের শেষ দিক থেকে ফুনাই একটা নীতি নেয় যে— বিচ্ছিন্ন এসব জনগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ করা হবে না।
ফুনাইয়ের একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট সিডনি পোসুয়েলো বলেন, তাদের কাছাকাছি যাওয়াটা খুবই বিপজ্জনক। তার চেয়েও বড় কথা হলো, এই লোকেরা যেভাবে জীবনযাপন করছে তাতে আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোন অধিকারই নেই।
ব্রাজিলের এই নীতি পরিবর্তনের পেছনে পোসুয়েলোই প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
তিনি বলেন, এই আদিবাসীদের মধ্যে একটা সাধারণ সর্দিজ্বর ছড়িয়ে পড়লেও তাদের অনেকে মারা যেতে পারে। কারণ এসব রোগ তাদের মধ্যে আগে ছড়ায়নি, তাই তাদের দেহে এটা প্রতিরোধের ক্ষমতাও নেই।
তিনি বলছিলেন, ১৯৭৯ সালে তাদের সাথে এরকমই একটি পূর্বে-যোগাযোগ-হয়নি-এমন জনগোষ্ঠীর সাথে সাক্ষাত হয়েছিল।
অনেক সাবধানতা নেয়া হলেও, তাদের সংস্পর্শে এসে ওই লোকদের মধ্যে রোগ সংক্রমণ ঘটে এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের কয়েকজনের মৃত্যু হয়।
তবে ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো আমাজন থেকে বাণিজ্যিক সম্পদ আহরণের সমর্থক। এর মধ্যে আছে যোগাযোগবিহীন উপজাতিগুলোর বসতিস্থলগুলোও ।
তিনি ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে গ্রাম অঞ্চলগুলোতে আদিবাসীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা বেড়ে গেছে বলে দাবি করছে অধিকারকর্মীরা। আদিবাসীদের খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা দেয়ারও বিরোধিতা করছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৮
আপনার মতামত জানানঃ