দুর্গাপূজা চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে চলমান হিংসা বন্ধ না হলে ফারাক্কার পানি ও পেট্রাপোল সীমানা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়ি ঘরে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান তিনি। পাশাপাশি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করে বিজেপি। আসানসোলের বিএনআর মোড় থেকে এ মিছিল শুরু হয়ে ভগৎ সিং মোড়ে শেষ হয়। সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জিতেন্দ্র তেওয়ারিসহ অন্যান্য বিজেপি নেতা।
মিছিল শেষে বাংলাদেশের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে তিনি বলেন, অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। বর্বরোচিত আক্রমণ বন্ধ না হলে ফরাক্কার জল বা পেট্রাপোল সীমানা… ( পূর্ণ কথা না বলে হুঁশিয়ারি) হুমকি নয়, প্রয়োজনে যতদূর যেতে হয় যাব।
এর আগে বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দেন শুভেন্দু। তাছাড়া কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের অফিসে ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গেও দেখা করেন। সেখানে শুভেন্দু বলেছিলেন, তারা সনাতনের ভোটে জিতেছেন, তাই তারা দায়বদ্ধ। যেমন দলের কাছে দায়বদ্ধ, ঠিক তেমনই হিন্দুদের কাছেও দায়বদ্ধ। যদি বাংলাদেশে হিংসা বন্ধ না হয়, তাহলে হিলি আর পেট্রোপোলে গিয়েও কর্মসূচি পালনের কথা বলেন তিনি।
এছাড়া শুভেন্দু বাংলাদেশে হিংসা নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন। দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মন্তব্য করতে শোনা যায়, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের হিংসা নিয়ে কেন মন্তব্য করেননি, তা নিয়ে কটাক্ষ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, কুমিল্লায় তাণ্ডবের ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে এরই মধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বাকি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। আসাদুজ্জামান জানান, অভিযুক্ত এক ব্যক্তি বার বার তার অবস্থান পরিবর্তন করছে। এক স্থান থেকে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে দ্রুত ওই অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হবে।
আসামে বিক্ষোভ
ভারতের আসাম অঙ্গরাজ্যের বারাজ গ্রামে বিক্ষোভ করেছেন ১০ হাজারের অধিক মানুষ। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগণের ওপর হামলার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভে বাংলাদেশের পতাকা পুড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এসময় তারা বাংলাদেশি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে। এমনকি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকার প্রস্তাবও দিয়েছেন অনেকে। বিক্ষোভটি আয়োজিত করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সেখানে অংশ নেয় সেবাশ্রম সংঘ, সংকর মঠ, গুরিয়া মঠ, বজরং ডাল, আরএসএস-এর নারী শাখা।
এতে অংশ নেওয়া করিমগঞ্জ জেলার বিজেপি নেতা রঞ্জন দাস বলেন, পাকিস্তানের মতো করে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত যদি সবরকম বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ করে দেয়, তাহলে বাংলাদেশিরা চরম সংকটে পড়ে যাবে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের খাদ্য পণ্যের সবচেয়ে বড় গ্রাহক ভারত। আমরা সেসব পণ্য বয়কট করলাম। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বরাবর এ বিষয়ক একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন বাংলাদেশকে কড়া বার্তা পাঠানো হয়। এতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা কোনো বিপদে পড়বে না বলে মনে করি আমি।
পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ
এদিকে বিবিসির সূত্র মতে, বাংলাদেশে গত বুধবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, স্থাপনা ও বাড়িঘরে হামলার যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে ৭১টি মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সোমবার রাত পর্যন্ত এসব মামলায় ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার রাতে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ”সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ কেন্দ্রিক অপ্রীতিকর ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭১টি মামলা রুজু হয়েছে। আরও কিছু মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
জানানো হয়, ”এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”
গত বুধবার ১৩ই অক্টোবর কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার পর ওই ঘটনার জের ধরে ঢাকা, কুমিল্লা, ফেনী, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে অভিযোগ উঠেছে পুলিশের কাজে গাফিলতির। সূত্র মতে, একটি মন্দিরের দেয়াল টপকাতে না পারায় হামলাকারীরা দুইবার ফিরে যেতে বাধ্য হয়৷ তৃতীয়বার মই নিয়ে এসে ঢুকে পড়ে তারা৷ চার ঘণ্টায় তারা সফল হলেও ওই সময়ে পুলিশ আসতে পারেনি৷
কুমিল্লার চাঁন্দমনি কালী মন্দির কমিটির নেতারা জানান, বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত তিন দফায় মন্দিরে হামলা হলেও ফোন করে দীর্ঘ সময় পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়নি। একই অভিযোগ শহরের আরো দুটি মন্দির কমিটির।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মন্দিরগুলো পরিদর্শনে যান জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক। কালীগাছ তলা মন্দির প্রাঙ্গণে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘সব মন্দিরেই একই অভিযোগ যে পুলিশ আসেনি। মন্দিরের ভক্তরা বলছেন, সকাল থেকে যখন একের পর এক হামলা হচ্ছে, তখন তারা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ আসেনি। চাঁন্দমনি কালী মন্দিরে মই দিয়ে টপকে ভেতরে ঢুকে আগুন দেওয়া হয়। সেখানে চার ঘণ্টায়ও পুলিশ আসেনি।’’
তবে মন্দিরে পুলিশের না যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ