“সবকিছু খুব অন্ধকারাচ্ছন্ন লাগছে”— আফগানিস্তানের এই স্কুলছাত্রী বার্তা সংস্থা বিবিসিকে জানিয়েছিল। ভেঙে পড়ছিল দেশটির মেয়ে শিক্ষার্থীরা। কারণ গত মাসে তালিবান দেশটির ক্ষমতার দখল নেয়ার পর আফগানিস্তানে মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুললেও সেখানে থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীদের বাদ দেয়া হয়। শুধু ছেলে এবং পুরুষ শিক্ষকরাই শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পায়।
তখন অনেকেই আশঙ্কা করেন ১৯৯০ এর দশকের তালিবান শাসন ফিরে আসবে যখন তারা মেয়ে এবং নারীদের সব ধরণের অধিকারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছিল। তবে এবার আফগানিস্তানের নারীরা দুই দশক আগের পরিস্থিতিতে কোনভাবেই ফিরে যাবেন না। এবার তালিবানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছেন তারা। তালিবানরা তাদেরকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য চাপ দিলেও তারা সেটি উপেক্ষা করে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন।
তারা বিক্ষোভ মিছিল করছেন, দাবি জানাচ্ছে নিজেদের অধিকারের জন্য। বন্দুকের নলের সামনে বুক পেতে দাঁড়াচ্ছেন। তালিবানদের চোখে চোখ রেখে রুখে দাঁড়াচ্ছেন সমস্ত অন্যায়ের।
আর এরই ধারাবাহিকতায় আফগানিস্তানের বালখে প্রদেশে সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে তালিবান। বালখ প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের বরাত দিয়ে টোলো নিউজ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে মাজার-ই-শরিফের শিক্ষা বিভাগের প্রধান মৌলভী মোহাম্মদ নাইম বলখী জানান, আমরা চাই সবাই যেন তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠায়। তাহলে তারা একটি ভাল ভবিষ্যৎ পাবে। কারণ একটি ভাল ভবিষ্যৎ, একটি উন্নত ও সুন্দর সমাজের জন্য প্রয়োজন একটি শিক্ষিত প্রজন্ম।
আফগানিস্তানে চলতি বছরের আগস্টে সাবেক সরকারের পতনের পর থেকে রাজধানী কাবুলসহ দেশটির অধিকাংশ জায়গাতেই প্রথম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন থেকে বালখের সব ছাত্রীই স্কুলে যেতে পারবে।
বালখের এক ছাত্রী তামান্না জানান, কিছুটা হলেও বিশ্বাস ফিরে এসেছে। শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বেড়েছে। এমনকি শিক্ষার মানও উন্নত হয়েছে। তবে সব আগের মতো হয়ে গেছে তা বলা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে স্থানীয় আরেক ছাত্রী ফাতেমা জানান, স্কুলে আসার সময় নিরাপত্তা পরিস্থিতি বেশ ভালোই থাকে।
বালখের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এই প্রদেশে ছয়শ’র বেশি স্কুল রয়েছে। সেসব স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। যাদের মধ্যে অর্ধেকই ছাত্রী।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক মানবিক সংকটের আগেও আফগানিস্তানের ৪২ লাখ শিশু স্কুলে ভর্তি হয়নি। এদের প্রায় ৬০ শতাংশ মেয়ে। শিক্ষা বঞ্চিত প্রতিটি দিন তাদের জন্য, তাদের পরিবার ও সমাজের জন্য একেকটি সুযোগের হাতছাড়া হওয়া।
এর আগে মেয়েদের স্কুল যাওয়ার কোনো নির্দেশনা না আসায় আফগানিস্তানে নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ বলেছে, ‘সব বয়সী মেয়েদের জন্য আর দেরি না করে পুনরায় শিক্ষা শুরু করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।’
তালিবান নারীদের বিষয়ে কট্টরপন্থা থেকে সরে আসেনি তার আরেকটি প্রমাণ দেখা যায় নারী মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করার মধ্য দিয়ে। বিবিসির খবরে বলা হয়, আফগানিস্তানে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দিতে চাইছে তালিবান। এর মধ্যেই নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নামফলক মুছে ফেলে বসানো হয় নীতিনৈতিকতা-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ফলক।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৫১
আপনার মতামত জানানঃ