টেলিভিশন অনুষ্ঠানে সেন্সরের কাঁচি বসালো ইরান সরকার। কোনো নারী পিৎজা খাচ্ছেন, হাতে গ্লাভস ছাড়া বা কোনো পুরুষ চা পরিবেশন করছেন কোনো নারীকে, এমন দৃশ্য দেখানো যাবে না কোনো টেলিভিশন শোতে। শুধু তাই নয় নাটক, সিনেমার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। নির্মাতাদেরকেও সতর্ক করার খবর পাওয়া গেছে।
১৯৭৯ সালে ইরানে যে বিশ্বকাঁপানো ইসলামিক রেভল্যুশন হয়, তার পুরোধা ছিলেন আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা খোমেনি, ইমাম খোমেনি নামে যিনি অধিক পরিচিত। শিয়া মুসলিমপ্রধান দেশ ইরান ওই সময়ের আধুনিক দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। সেখানে ধর্মীয় অভ্যুত্থান ছিল অবাক করার মতো বিষয়। সেই থেকে ৪২ বছর ইরান শিয়া ধর্মীয় গুরুদের দ্বারা শাসিত।
তাই এই সেন্সরশিপ জারি করার ইরান সরকারের সিদ্ধান্ত অবাক করলেও যে পূর্বানুমতিই। টেলিভিশনের অনুষ্ঠান নির্মাতা ও চিত্রপরিচালকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে। নতুন নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, অফিসে কোনো নারীকে চা পরিবেশন করছেন কোনো পুরুষ অথবা নারীদের হাতে চামড়ার গ্লাভস, এসব দৃশ্যও সম্প্রচার করা যাবে না।
ইরানওয়্যারের তথ্য বলছে, দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা সম্প্রতি পরিদর্শন শেষে একটি গাইডলাইন ইস্যু করেছেন ব্রডকাস্ট চ্যানেল ও সিনেমা নির্মাতাদের জন্য।
এখানেই শেষ নয়। মুসলিম দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার দপ্তরের প্রধান আমির হোসেন শামশাদি আরও জানিয়েছেন, টিভি বা সিনেমার পর্দায় কোনও নারীকে লাল রঙের পানীয় খেতেও দেখানো যাবে না। এমনকি স্যান্ডউইচ খাওয়াও নিষিদ্ধ। কোনও ঘরোয়া দৃশ্যে পুরুষ-নারীকে একসঙ্গে দেখানোতেও আপত্তি রয়েছে সরকারের।
প্রশাসনের নজর এড়িয়ে যাতে এ ধরনের দৃশ্য দেখানো না হয়, তার জন্য প্রতিটি দৃশ্য সম্প্রচারের আগে মিলতে হবে সরকারি ছাড়পত্র। এদিকে আইনের প্যাঁচ থেকে বাঁচতে ইরানের কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিজেরাই কড়াকড়ি শুরু করে দিয়েছে।
মূলত যে কোনো ঘরোয়া দৃশ্য দেখাতেও নারাজ দেশটির সরকার। সম্প্রচারের আগে তা কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হবে, এরপর তারা সিদ্ধান্ত দেবেন। এমন কড়া নিয়ম জারির ফলে এবং নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি এড়াতে অনেক প্রতিষ্ঠান সেলফ সেন্সরশিপে চলে গেছে।
সিনেমাপ্রেমিরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে বাস্তববাদি চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে অনেক উন্নত অবস্থান ধরে রেখেছে ইরান। এখন তা ম্লান হতে চলেছে। নতুন করে কড়া নিয়ম জারি, দেশটির শিল্পকলা বিকাশের জন্য মোটেও সুখকর নয়।
এর আগে ইরান সরকার ইংরেজি শেখার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি শেখা নিষিদ্ধ করে দেশটি। সেখানকার ধর্মীয় নেতা সতর্ক করে দেওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান ইরানের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষাকর্মকর্তা।
তিনি জানান, বয়সের শুরুতে ইংরেজি শিখলে তাদের জন্য পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসনের পথ খুলে যাবে।এ ব্যাপারে উচ্চশিক্ষা পরিষদের প্রধান মেহেদী নাভিদ আধম বলেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে ইংরেজি শেখা আইন ও নীতিমালার বিরোধী।
তিনি আরও বলেন, এটি ভাবার কারণ এই যে, প্রাথমিক শিক্ষা ইরানি সংস্কৃতি ধারণের প্রথম ভিত্তি। একই কারণে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত বই থেকেও ইংরেজি বাদ দেওয়া হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইরানের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটার ছিল প্রায় ছয় কোটি। এর মধ্যে ভোটের হার ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর সর্বনিম্ন। ইব্রাহিম রাইসি, ইরানের প্রথম প্রেসিডেন্ট হবেন, যার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা ছিল। তার অধীনে কট্টরপন্থিরা ইসলামী অনুশাসন মেনে দেশ পরিচালনায় আরও কঠোর হবেন বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল। নারীদের কর্মসংস্থান, স্বাধীনতা কমে যাওয়া এবং সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপরও কড়াকড়ি আরোপ করা হতে পারে বলে পূর্বানুমান করেছিলেন তারা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬১৮
আপনার মতামত জানানঃ