আবারও অপরাধীদের গুলিবিদ্ধ মরদেহ ক্রেনে ঝুলিয়ে রাখল তালিবান। গত মঙ্গলবার আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে এ ঘটনা ঘটে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তালিবানের পক্ষ থেকে বলা হয়, একটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছিলেন ওই তিনজন। তাই তালিবান প্রশাসন মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছে।
হেরাতের ডেপুটি গভর্নর মৌলভি আহমেদ মুহাজির বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা এবং তারপর ক্রেনে ঝোলানো পর্যন্ত সবই হয়েছে তালিবানের তত্ত্বাবধানে।
মুহাজির জানান, লুটপাটের উদ্দেশ্যে একটি হামলা চালিয়েছিলে ওই তিনজন। তাই এমন সাজা।
হেরাতের ওবে জেলার ওই ঘটনার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরে ফের তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নব্বইয়ের দশকেও তালিবান শাসিত আফগানিস্তানে ‘অপরাধীদের’ প্রকাশ্যে সাজা দেওয়ার ঘটনা ঘটত।
এর আগে আফগানিস্তানের এই পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর হেরাতে ৪ জন অপহরণকারীকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যার পর মরদেহ জনসমক্ষে ঝুলিয়ে রাখে তালিবান কর্তৃপক্ষ।
এ প্রসঙ্গে, হেরাতের ডেপুটি গভর্নর শের আহম্মদ আম্মার বলেন, ওই ৪ জন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী ও তার ছেলেকে অপহরণ করে শহরের বাইরে নিয়ে যাচ্ছিল। শহরের চেকপোস্টের তালিবান টহল দলের সঙ্গে তাদের “বন্দুকযুদ্ধ” হয়। এ সময় ওই ৪ জন নিহত হয় এবং একজন তালিবান সৈন্য আহত হয়।
তিনি বলেন, তাদের মরদেহ শহরের মূল চত্বরে আনা হয় এবং অন্যান্য অপহরণকারীদের শিক্ষা দিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
ক্রেনে ঝোলানো রক্তমাখা মরদেহের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। ভিডিওতে মৃত ব্যক্তির বুকে আটকানো একটি নোটে ‘এটি অপহরণের শাস্তি’ লেখা দেখা যায়।
ওই ফুটেজে অন্য কোন মরদেহ দেখা যায়নি। তবে, পোস্টে বলা হয়েছে যে বাকিদের শহরের অন্যান্য স্থানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
আফগানিস্তানে তালিবানি শাসনের প্রথম আমলে অপরাধীকে গুলি করে হত্যা করা হত। চুরি বা সামান্য কম মাত্রার অপরাধে শাস্তি দেওয়া হত একটি হাত বা একটি পা কেটে নিয়ে। এ সবই হত প্রকাশ্যে।
সম্প্রতি এক তালিবান নেতা মোল্লা নুরউদ্দিন তুরাবি জানিয়েছেন, স্বল্প অপরাধের সেই শাস্তি এই দ্বিতীয়বারের তথাকথিত ‘আধুনিক’ তালিবানি শাসনেও বজায় থাকবে। কারণ অপরাধীদের ‘‘হাত-পা কেটে নেয়া দেশের নিরাপত্তার জন্যই জরুরি’’ বলে মনে করেন তালিবানের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠাতা।
তালিবানি শাসনের প্রথম আমলে তিনি ছিলেন আফগানিস্তানের আইনমন্ত্রী। কারাগারের ভারপ্রাপ্তও। ইসলামিক আইন কীভাবে বলবৎ করা হবে বা তা ঠিকঠাক বলবৎ হচ্ছে কি না, সেটা নুরই দেখাশোনা করতেন। দ্বিতীয় তালিবানি শাসনেও তার হাতে একই দায়িত্ব বর্তাবে কি না, তা এখনও জানা যায়নি।
নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তানের তালিবান শাসনের প্রথম আমলে কঠিন আর নৃশংস আইন বলবৎ করার জন্য কুখ্যাত ছিলেন নুরউদ্দিন। সে সময় আফগানিস্তানে খুনের অপরাধীদের সবার সামনে গুলি করে হত্যা করা হত। হত্যা করতেন নিহত বা নিগৃহীতের পরিবারের মানুষ। সবার সামনেই দোষীদের হাত-পাও কেটে নেয়া হত। বড় খেলার মাঠ বা স্টেডিয়ামের মধ্যে দেয়া হত সেই শাস্তি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪২৭
আপনার মতামত জানানঃ