ড. মঞ্জুরে খোদা
একজন মুফতি ইব্রাহিমকে নিয়ে এখন কথা হচ্ছে। তাকে অনেকেই বলছেন তিনি একজন মানসিক ভারসাম্যহীন বিকারগ্রস্থ মানুষ। আসলে কি তাই? এটাই যদি মানতে হয়, তাহলে ভাবতে হবে- আমাদের সমাজে এমন বিকারগ্রস্থ মানুষের সংখ্যা কত? তা এখন হাজার, লাখে আটকে নেই, কোটির ঘরে গেছে!! এমন একটি বিকারগ্রস্থ বৃহতজনগোষ্ঠী কিভাবে গড়ে উঠলো? কোথায়, কোন পরিবেশে গড়ে উঠলো? কারা গড়ে তুললো? সে প্রশ্নকে বাদ দিয়ে আপনাদের আলাপ হবে অর্থহীন. দায়িত্বহীন, এবং মূলঘটনাকে আড়াল করা।
আমাদের দেশের রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেক। বিচারের ব্যবস্থা থাকলে তাদের প্রত্যেককেই কাঠগড়ায় দাড়াতে হতো। এই মুফতি ইব্রাহিমদের তৈরীতে তাঁরা তাঁদের দায় কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। তাদের অদূরদর্শি, নীতিহীন, ক্ষমতাকেন্দ্রীক অপরাজনীতির কারণে- আমাদের সমাজ বিকারগ্রস্থ অর্বচীন অধমে ভরে উঠছে। তাদের কদর, দাপট, প্রভাব, প্রতিপত্তি ক্রমেই বাড়ছে।
গ্রেফতারের পূর্বে মুফতি ইব্রাহিম ভিডিওতে দেশ-জাতির উদ্দেশ্যে এক বিশাল ওয়াজ-নসিহত করেন। তাকে গ্রেফতারের কারণে বলেন, ভারতের দালাল সরকার, র’এর নির্দেশে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তার পুরো বয়ানে ছিল ভারত-বাংলাদেশে ও ভারতের তাবেদার সরকারের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা। তালেবানের ভয় ও শাসনের ইংগিত। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আমাদের ভাল-মন্দ অনেক আলাপ আছে। সে আলাপ আলাদ ভাবে করবো।
মজার ব্যাপার হচ্ছে সেখানে তিনি বারবার বঙ্গবন্ধু-শেখ হাসিনা-আওয়ামী লীগের নাম নিয়েছেন কিন্তু তিনি তাঁদেরকে সরাসরি কোন কটূকথা বলেননি, আক্রমন করেননি! তারমানে জাতে মাতালা তালে ঠিক। আপনারা যাকে উন্মাদ বিকারগ্রস্থ বলছেন, তিনি এ সরকারকে ভারতের রাজাকার বলে গালি দিলেও- তাদের মূলকেন্দ্র ও জায়গাতে সরাসরি আঘাত করেননি। ঠিকই তিনি তার বিপদ আঁচ করে সতর্ক হয়ে কথা বলেছেন। কেউ বদ্ধ উন্মাদ হলে- সে হবে কান্ডজ্ঞানহীন, বাছবিচারহীন কিন্তু তিনি তা নন। পাগল হলে কেউ এ কাজ করতে পারে না।
আর তিনি যদি বিকারগ্রস্থ, উন্মাদ-পাগলই হন’ তাহলে সেই পাগলমি ধর্মের নামে, ওয়াজ ব্যবসার নামে তিনি দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রনহীনভাবে করে যাচ্ছেন। এ কাজ শুধু তিনি একা নন, অসংখ্য মানুষ ইসলামের নামে করে যাচ্ছেন। তারা হেলিকপ্টার করে দেশের একপ্রান্ত খেকে অন্য প্রান্তে ধর্মের নামে আধুনিকতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, পাশ্চত্যের বিরুদ্ধে ও ধর্মানুভূতির নামে মিথ্যাচার ও উষ্কানি দিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের অনন্য প্রতিভা, শিক্ষাবিদ, সমাজতাত্ত্বিক গুরু সলিমুল্লাহ খান ঢাকায় পায়ে হেটে চলেন। ফার্মগেটের এক চিপা-গলিতে থাকেন। শুধু তিনি নন দেশের প্রায় সব উচ্চশিক্ষিত, প্রগতিমনা, আধুনিক, উন্নত মুক্তিবুদ্ধির ব্যক্তিদের অবস্থা একই। আর এই মুফতি ইব্রাহিমের মত যারা তারা হ্যামার, হেলিকপ্টারে সারা দেশ ঘুরে বেড়ান। কারা শোনেন তাদের বয়ান-বক্তৃতা..? দেশে কিসের উৎপাদন হচ্ছে, কি উৎপাদন হচ্ছে বুঝতে পারছেন না? এই সমাজে কাদের– কদর-সমাদর-সম্মান বাড়ছে, তা কি বুঝতে পারছেন না? তারপরো কি আপনাদের আঙ্গুল তাক করে দেখিয়ে দিতে হবে?
তাই বলি, শহরের তথাকথিত চাকচিক্য, উঁচু দালান, লাইটবাতি দেখে নয়- দেশের সামাগ্রিক অবস্থার পতন, পিছনে চলা, অন্ধকারকে দেখুন। কোথায় প্রবেশ করছে দেশ? তাকে না ভেবে, প্রশ্ন করে- মুফতি ইব্রাহিমদের বিকাগ্রস্থ, ভারসাম্যহীন মানুষ বলে স্বস্তি পেতে পারেন, নিজেকে দ্বায়মুক্ত ভাবতে পারেন কিন্তু মুক্তি পাবেন না। আর যদি কিছু না জানার ভান করে নির্বিকার-নির্লিপ্ত থাকেন, তাহলে বিকারগ্রস্থ এক অন্ধকার আফগান সমাজের জন্য নিজেদের তৈরী করুণ, বড় আঘাতে জন্য প্রস্তত থাকুন।
আপনার মতামত জানানঃ