সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা যেন আওয়ামী লীগের শক্তিতে পরিণত হয়ে গেছে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এবার দলটি বিদেশেও সেই শক্তি প্রদর্শন করলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার বিকেলে নিউইয়র্কের উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এ ঘটনা ঘটে।
নিউইয়র্কের কুইন্স প্যালেসে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরে এবারের অর্জনটা কী— এমন একটি প্রশ্ন করায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রবাসী সাংবাদিক ফরিদ আলমের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। ফরিদ আলম নিউইয়র্কভিত্তিক নতুন টিভি চ্যানেল (নিউজ কম্যুনিকেশন নেটওয়ার্ক) এনসিএনের নির্বাহী সম্পাদক ও হেড অব অপারেশনের দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের উপর বুধবার নিউ ইয়র্কের কুইন্স প্যালেসে সাংবাদিক সম্মেলন আহবান করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি ও দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি বিপ্লব বড়ুয়া। এ সময় তাদের সাথে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের ২ ডজনেরও বেশি নেতাকর্মী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরের নানা সফলতা নিয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এরপর প্রবাসী সাংবাদিকরাও একের পর এক প্রশ্ন করেন। এক পর্যায়ে এনসিএন’র সাংবাদিক ফরিদ আলম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফরে এবারের অর্জনটা কী এমন একটি প্রশ্ন করে বসেন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি ও দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি বিপ্লব বড়ুয়া্র কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৪১ জনের বহর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসা এবং বসার বেঞ্চ উদ্বোধন, বঙ্গবন্ধুর নামে গাছ লাগানো এসব নাম সর্বস্ব কর্মসূচি ছাড়া করোনার মধ্যে এই বিশাল বহর নিয়ে সফরের প্রাপ্তি কী? তার এমন প্রশ্নে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। শারীরিকভাবে হামলার শিকার হন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এনসিএন’র মাইক্রোফোন দেখেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরসঙ্গী। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নেতা তেড়ে আসে সাংবাদিক ফরিদ আলমের প্রতি। চালায় নির্মম অতর্কীত হামলা। উপস্থিত অন্য সাংবাদিকরা এ সময় মানববর্ম রচনা করে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন।
সাংবাদিক ফরিদ আলম জানান, আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলনে তার উপর আক্রমণের এক পর্যায়ে কে বা কারা তার সেল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে সেলফোন পাওয়া গেলেও মানিব্যাগ পাওয়া যায়নি। তার মানিব্যাগে চার হাজার ডলার, ব্যাংকের কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল বলেও জানান তিনি। ঘটনার ব্যাপারে স্থনীয় পুলিশ প্রিসঙ্কেটে অভিযোগ করা হয়েছে বলে ফরিদ আলম জানান।
এর প্রতিবাদে নিউইয়র্কে কর্মরত সকল প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকরা এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিকরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও দোষীদের বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে দৃষ্টান্তমলক শাস্তির ব্যবস্হা নেয়ার দাবী জানান। সাংবাদিকদের এ দাবী না মানা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গ সংগঠনের সংবাদ ও অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সাংবাদিক ফরিদ আলমের উপর আক্রমণের ঘটনায় নিউইয়র্কের সাংবাদিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এর প্রতিবাদে নিউইয়র্কে কর্মরত সকল প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ায় সাংবাদিকরা এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিকরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও দোষীদের বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে দৃষ্টান্তমলক শাস্তির ব্যবস্হা নেয়ার দাবী জানান। সাংবাদিকদের এ দাবী না মানা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গ সংগঠনের সংবাদ ও অনুষ্ঠান বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, সম্মেলন মঞ্চে তখন বসা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। ঘটনায় নেতৃবৃন্দ এবিষয়ে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেননি ও কোন প্রকারের প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে নিরব থাকেন।
বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক নেতারা বলছেন, যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি, আন্দোলন, সংগ্রাম, সহিংসতার ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বারবার হামলার শিকার হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রচারের জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রাণনাশের হুমকি। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন এখন শুধু রাজধানী ঢাকায় সীমাবদ্ধ নেই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কারণে-অকারণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এখন সেটা দেখা যাচ্ছে দেশের বাইরেও।
তারা বলেন, রাজনৈতিক কোনো হাঙ্গামা, আন্দোলন, উত্তেজনা, সহিংসতার ছবি ধারণ বা সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকরা নির্বিচারে হামলার শিকার হচ্ছেন। কখনো কখনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি কর্মকর্তাসহ খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সাংবাদিক নির্যাতন করছেন। অনেক সময় কর্তব্যরত সাংবাদিকদের চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। সরকারও এ ব্যাপারে প্রতিকারমূলক তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হামলাকারীরা বরাবরের মতোই থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের কোনো ঘটনার সুরাহাও হয় না কখনই। সরকারও এতে আন্তরিক নয় বলে মনে করেন বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক নেতারা।
তারা বলেন, ‘সাংবাদিকরা রাষ্ট্র ও সমাজের যে কোনো অশান্ত পরিবেশ, সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় প্রকৃত সাংবাদিকরা কাজ করেন। সেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। এটা থেকে স্পষ্ট হয় যে, যারা সহিংসতা ছড়াতে চায়, সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে, তারা চায় না সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালন করুক। অতীতেও আমরা দেখেছি রাষ্ট্র ও সমাজের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত শক্তি সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে।
আরও বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে সবার আগে আন্তরিক হতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৫৩
আপনার মতামত জানানঃ