কদিন আগেই আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালাতে মাঠে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নামাচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গুজব অপপ্রচার রোধে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ কমিটি। এ লক্ষ্যে সারা দেশে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করছে দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ভোটকেন্দ্রভিত্তিক ‘ইউনিট কমিটি’ গঠন শুরু করেছে।
জানা যায়, প্রতিটি কমিটিতে সদস্য থাকবেন ন্যূনতম ১৫০ জন। এভাবে সারা দেশে মোট ৪০ হাজার ১৯৯টি কমিটি গঠন করা হবে। অর্থাৎ, বাংলাদেশে যতগুলো ভোটকেন্দ্র রয়েছে, প্রতি কেন্দ্রের জন্য একটি করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এই কমিটির কাজ হবে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের ভোটারদের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়া। সরকারের উন্নয়ন-সংবলিত লিফলেট বিতরণ করা। এছাড়া নাশকতা প্রতিরোধ এবং ভোটকেন্দ্র সুরক্ষা করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করাও এই কমিটির দায়িত্ব।
দলীয় সূত্র জানায়, ইউনিট কমিটি গঠনে মূল ভূমিকা পালন করবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য ও উপজেলা/থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের পরামর্শ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গঠিত ইউনিট কমিটি জেলা/মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে সংগঠনের দপ্তরে জমা দিতে হবে। এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িতরা যেন কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বলা হয়েছে, যদি এসব ইউনিট কমিটি করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বিতর্কিত ব্যক্তি অনুপ্রবেশ করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেতাকর্মী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং বিভিন্ন সামাজিক পেশায় প্রতিষ্ঠিত সমাজের গ্রহণযোগ্য প্রগতিশীল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে এসব কমিটি গঠনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে ইউনিট কমিটি গঠন সম্পন্ন করার টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। এলাকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক, মাতব্বর, পল্লি চিকিৎসক, মুক্তিযোদ্ধা, হাজি, কেন্দ্রের নিকটবর্তী দলীয় নেতাকর্মী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ কমিটিতে স্থান পাবেন। নির্বাচনের আগমুহূর্ত থেকে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও নাশকতা প্রতিরোধে এই কমিটির সদস্যরা পাড়া-মহল্লায় টহল দেবেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করবেন।
এদিকে কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি গঠন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের। প্রতি ইউনিটে থাকছে অন্তত ১৫০ জন সাধারণ সদস্য। ওই সদস্যদের মধ্য থেকে ৩৭ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ইউনিট কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে দুই মহানগর ব্যস্ত সময় পার করছে। যদিও দলটির হাইকমান্ডের তরফ থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশনা ছিল। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দ্বিতীয় দফায় কঠোর লকডাউন চলার কারণে সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকায় ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি মহানগর আওয়ামী লীগ। এখন আবার সাংগঠনিক কাজে কিছুটা গতি ফিরে এসেছে। ফলে তৃণমূল নেতাদের সাথে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তারপরও এ মাসে ইউনিট কমিটি গঠন করতে পারছেন না তারা। আগামী মাসেও কেন্দ্র ভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মহানগর আওয়ামী লীগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। গত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতা প্রদর্শনে এই আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভোট সংগ্রহ ও নাশকতা রুখে দেওয়ার জন্য এই কমিটি। কিন্তু এই কমিটির লোকজন থেকে ভোট কেন্দ্র কতটা নিরাপদ থাকবে তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংগঠনিক শক্তি জোরদারে ৬০ দিনের মধ্যে সকল স্তরে ইউনিট কমিটি গঠন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ নভেম্বরের মধ্যে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন মিলিয়ে প্রায় ২২০০ ইউনিট কমিটি গঠনের ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমগুলোকে।
জানা যায়, সভায় প্রতিটি ইউনিটে নূন্যতম ১৫০ জন প্রাথমিক সদস্য করার লক্ষ্য স্থির করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩৭ জন সদস্য নিয়ে ইউনিট কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নগর নেতাদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড/ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নতুন সদস্য পদ নবায়নের নেতৃত্ব দেবেন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নগর নেতাদের পরামর্শ ও সম্মতি সাপেক্ষে ইউনিট কমিটি ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নগর নেতাদের ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের পরামর্শ গ্রহণ করতে এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্যদের পরামর্শ গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঘোষিত কমিটি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে সংগঠনের দপ্তরে জমা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এসব কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সদস্য, চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িতরা যেন কমিটিতে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি এসব ইউনিট কমিটি করার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বিতর্কিত ব্যক্তি অনুপ্রবেশ করে তাহলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং সেই ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি দলের ত্যাগী, দুঃসময়ের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক পেশায় প্রতিষ্ঠিত সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে এসব কমিটি গঠনের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। মহানগর উত্তরের এসব ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষে মহানগর উত্তরের অন্তর্গত ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলন কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে বাইরের পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারলেও ভার্চ্যুয়ালে দলটি ব্যর্থ হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করলেও তা ভেস্তে যায়। ক’দিন আগেও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার এখতিয়ারের বাইরে বলে জানান। তাই ভিন্ন কৌশলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষমতাসীন দলটি কর্তৃত্ব বজায় রাখার কৌশল হিসাবে মাঠে এক লাখ অ্যাক্টিভিস্ট নামাচ্ছে। যা দিন শেষে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মত সংগঠনগুলোর আগ্রাসী ভূমিকাই দেখাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। এদিকে সারাদেশে কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি নিয়েও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
তারা বলছেন, কেন্দ্রভিত্তিক ইউনিট কমিটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। গত নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতা প্রদর্শনে এই আশঙ্কা তীব্র হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ভোট সংগ্রহ ও নাশকতা রুখে দেওয়ার জন্য এই কমিটি। কিন্তু এই কমিটির লোকজন থেকে ভোট কেন্দ্র কতটা নিরাপদ থাকবে তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। আওয়ামী লীগের অতীতের নির্বাচনগুলো এই সন্দেহকে আরও চাঙ্গা হতে সাহায্য করছে। আবারও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের অজুহাতে ক্ষমতাবলে ক্ষমতায় আসার কৌশল হিসাবে এই কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৩২
আপনার মতামত জানানঃ